রোজগারের অঙ্কে কম যান না গৌতম আদানির স্ত্রী-ও, কাজেও টেক্কা দিতে পারেন আদানি-আম্বানিকে

এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। তথ্য বলছে, বর্তমানে গৌতম আদানির সম্পত্তির পরিমাণ ১২২ বিলিয়ন ডলার। শেষ তিন মাসে মোট সম্পত্তি বেড়েছে ৩২.৫ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও আদানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮৯.৫ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীবৃদ্ধির কারণেই বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার। এমনকী, ধনীদের তালিকায় পিছনে ফেলে দিয়েছেন দুই আমেরিকান বিলিয়নিয়র ওয়ারেন বাফেট এবং ল্যারি পেজকেও।


এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতের যে ক'জন বিলিয়নিয়র রয়েছেন, তাঁরা সকলেই পারিবারিক সূত্রে ব্যবসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কিন্তু গৌতম আদানি নিজেই আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং কর্ণধার। তবে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ব্যতীত আদানি পরিবারের সদস্যরা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। মুকেশ আম্বানির পত্নী নীতা আম্বানির কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু গৌতম আদানির স্ত্রী প্রীতি আদানির পরিচয় আমাদের অজানাই থেকে গেছে। তিনি নিজেও প্রচারের আলো থেকে দূরেই থাকেন। তবে তাঁর কাজের পরিসর মানুষকে অবাক করবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক লেডি আদানির পরিচয় এবং কাজের কথা।

১৯৬৫ সালে মুম্বইয়ের এক গুজরাতি পরিবারে জন্ম প্রীতির। পেশায় দন্ত চিকিৎসক প্রীতি আহমেদাবাদের সরকারি ডেন্টাল কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৯৯৬ সালে আদানি গোষ্ঠীর সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য তৈরি হয় আদানি ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠা-লগ্ন থেকেই সেই সংস্থার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন প্রীতি আদানি। এমনকী, ছেড়ে দিয়েছিলেন নিজের ডাক্তারির পেশাও। এই প্রসঙ্গে তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তাঁর জীবনে দু'টি রাস্তাই খোলা ছিল। প্রথম, ক্লিনিকে বসে একশো জনের সেবা করা এবং দ্বিতীয়, আদানি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবন বদলের চেষ্টা করা। এই উদ্দেশ্যেই প্রীতির হাত ধরেই শুরু হয় আদানি ফাউন্ডেশন। বিশাল সম্পত্তির মালকিন হওয়া সত্ত্বেও সাদামাটা জীবনযাপন করতেই পছন্দ করে তিনি। পাপারাৎজির ক্যামেরা বা টিভির পর্দায় ইন্টারভিউ- সবেতেই কালেভদ্রে দেখা মেলে তাঁর। সারা বছর সমাজসেবার কাজে নিযুক্ত থাকেন গৌতম-জায়া।

আরও পড়ুন: ভারতের প্রথম পাঁচ ধনকুবের কারা? আম্বানি-আদানি আর…?


প্রীতি এবং আর এক সহযোগীকে নিয়ে পথচলা শুরু করে আদানি ফাউন্ডেশন। পরের ২১ বছরের মধ্যে ভারতের ১৮টি রাজ্যে কাজ করেছে এই সংস্থা। গুজরাতে স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে তাঁর সংস্থার ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। প্রীতির তত্ত্বাবধানেই আদানি গোষ্ঠীর সেবামূলক কাজের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে বছর বছর। ২০১৭-'১৮ সালে আদানি গোষ্ঠী কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (CSR) খাতে ৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। পরের বছর সেই অর্থ বেড়ে হয় ১২৮ কোটি টাকা।
২০০১ সালের গুজরাত ভূমিকম্পের কথা অনেকেরই জানা। প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে গিয়েছিল ভূজ অঞ্চল। সেই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে শিশুদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাদানের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন আদানি ডিএভি স্কুল। প্রীতি আদানির এই পদক্ষেপ রাজ্য তথা দেশবাসীর ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এর কিছু বছর পরেই তাঁর সংস্থার তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, তাঁদের স্কুলে আর্থিকভাবে দুঃস্থ শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ বিনা খরচে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে।


এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ২৩০০টি গ্রামে কাজ করছে আদানি ফাউন্ডেশন। দারিদ্র, নিরক্ষরতা, ক্ষুধা এবং অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করতে এই সংস্থা পৃথক পৃথক উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। স্কিল উন্নতির স্বার্থে 'সক্ষম', অপুষ্টিজনিত সমস্যার জন্য 'সুপোষণ', শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে 'উত্থান' এবং পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে 'স্বচ্ছগৃহ' প্রকল্প চালু করে আদানি ফাউন্ডেশন।


করোনাকালেও তাঁর সংস্থার কাজ বহু মানুষকে খানিক স্বস্তি জুগিয়েছে। প্রীতি এবং গৌতম আদানি অতিমারীর সময়ে গরিব মানুষদের কাছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই কিটের ব্যবস্থাও করেছে তাঁর সংস্থা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর সেবামূলক কাজের জন্য সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে আহমেদাবাদের জিএলএস বিশ্ববিদ্যালয়।


বিলিয়নিয়র দম্পতির দুই ছেলে করণ এবং জিৎ-ও আজ নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত। বড় ছেলে করণ যোগ দিয়েছেন বাবার ব্যবসাতেই। ছোট ছেলে জিৎ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাইরের কাজের পাশাপাশি আদানি দম্পতি তাঁদের ছোট্ট নাতনির সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কখনওই হাতছাড়া করেন না। আদানি পরিবারের এই 'ওয়ান্ডার ওম‍্যান' সত্যিই অনুপ্রেরণা সমাজের কাছে।

More Articles