বাংলায় হু হু করে বাড়ছে কন্ডোমের চাহিদা, কারণ জানলে শিউরে উঠতে হবে

হঠাৎ করে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে ছাত্রদের মধ্যে কন্ডোমের বিক্রি বেড়ে গেছে। কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল এক অদ্ভুত তথ্য।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে কন্ডোমের বিক্রি হঠাৎ করেই বেড়ে গিয়েছে। বিশেষত, ছাত্রদের মধ্যে। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আমরা জানি, ভারত একটি বিপুল জনসংখ্যার ভার বয়ে চলে প্রতিনিয়ত। যার প্রভাব পড়ে খাদ্যসমস্যায়, যার প্রভাব পড়ে ম্যালনিউট্রিশনে। শিক্ষিতদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা এই যে, এদেশের সাধারণ মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে তেমন সচেতন নন। শিক্ষার সুযোগ কম, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সুযোগ কম। তাই এই অবস্থা। কিন্তু বাস্তব তথ্য কিন্তু তা বলছে না। জানলে অবাক হবেন, চতুর্থ ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে বলছে, এই দেশের ৯৭.৯ শতাংশ পুরুষ কন্ডোম কী, কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, কী তার সুফল—সবটাই জানেন। কিন্তু তার মধ্যে ৯৪.৪ শতাংশ পুরুষই কন্ডোম ব্যবহার করতে উৎসাহী নন। সোজা কথায়, কন্ডোম পছন্দ করেন না তাঁরা।

সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয় পুরুষরা আত্মকেন্দ্রিক এবং স্বার্থপর। এবং এই দু'টিই পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবদান। কন্ডোম যৌনক্রিয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তাঁরা জানেন ঠিকই, কিন্তু ব্যবহারের সময় অতশত খেয়াল থাকে না। তাছাড়া কন্ডোম ব্যবহারে নিজের প্রতিপত্তি ক্ষুন্ন হয় বলেও মনে করেন অনেকে। সরকার যে সাধারণ নিরোধ কন্ডোম বিলি করে, তার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম, হরেকরকম সুগন্ধি কন্ডোম রয়েছে বাজারে। রয়েছে স্ট্রবেরি, লিচি, ব্যানানা, পিচ, চকোলেট, পান, আম পানা, কাঁচা আম, ডটেড, এক্সট্রা ডটেড, ফেদার লাইট, আলট্রা থিন, লুব্রিকেটেড, সুপার লুব্রিকেটেড— হাজার রকমের কন্ডোম তৈরি করে ব্র্যান্ডগুলি। যাতে মানুষ নতুনত্ব খুঁজে পান, নিজের পছন্দমতো কন্ডোম বেছে নেন। কিন্তু রণবীর সিং বা সানি লিওনের কাস্টিং, বলিউড থিমের ফুলশয্যার দৃশ্য, 'ইস রাত কা সুবহা নহি'-র মতো দ্বৈত অর্থের পাঞ্চলাইন ব্যবহার, কোনওভাবেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা যায়নি। এরই মধ্যে হঠাৎ করে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে ছাত্রদের মধ্যে কন্ডোমের বিক্রি বেড়ে গেল। কেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল এক অদ্ভুত তথ্য।

আরও পড়ুন: যৌনসুখে বাধা নয় কন্ডোম, চরম মুহূর্ত দীর্ঘ করতে কী টোটকা লুকোনো নিরোধে?

দুর্গাপুরের এক ঔষধালয়ের দোকানদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, যে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে কন্ডোম বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত সুগন্ধি কন্ডোম। সিটি সেন্টার, বিধাননগর, বেনাচিতি, মুচিপাড়া, সি জোন, এ জোন—দুর্গাপুরের এই সমস্ত অঞ্চলে বহুল পরিমাণে বেড়েছে বিক্রি। কৌতূহলী হয়ে সেই দোকানদার একটি ছাত্রকে প্রশ্ন করে ফেলেছিলেন। উত্তরে ছাত্রটি যা জানান, তা সত্যি চমকপ্রদ। তরুণ ছাত্রটি জানায়, তাঁদের রসায়ন শিক্ষক জানিয়েছেন, সুগন্ধি কন্ডোম গরম জলে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে তার মধ্যেকার বড় জৈব অনুগুলি ভেঙে যায়। তার থেকে অ্যালকোহলিক যৌগ তৈরি হয়। এই যৌগ দিয়ে দিব্য নেশা করা সম্ভব। এবং ছাত্রেরা সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করছে। কন্ডোমে যে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়, মূলত তাইই নেশার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এই যৌগ ডেনড্রাইটেও থাকে। ঠিক একইরকমভাবে ডেনড্রাইট দিয়েও নেশা করে মানুষ। যদিও নেশাড়ুদের মধ্যে ডেনড্রাইট নিয়ে কেউই খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করে না, নিকৃষ্ট মানের নেশা হিসেবেই গণ্য হয়। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই নেশা দেখা যায় বহুল পরিমাণে। 

কিন্তু কন্ডোমের ক্ষেত্রে রয়েছে এক অন্য অশনি সংকেত। কন্ডোমের লুব্রিক‍্যান্টে থাকে প্রোক্যাইন বা বেঞ্জাকেইনের মতো রাসায়নিক। কোকেনের বাফারিং এজেন্ট এই বেঞ্জেকেইন। ফলে এ নেশা অচিরেই যে যুবকদের কোকেনের নেশার দিকে টেনে নিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য।

সত্যি বলতে কি, নেশার ক্ষেত্রটিতে মানুষের পছন্দ-অপছন্দ একটু উদ্ভটই। কেউ কাফসিরাপ খান, কেউ গঁদ শোঁকেন, ভারী শিল্পে ব্যবহৃত নানা ধরনের আঠা, পেন্ট মায় নেলপলিশ হোয়াইটনার শুঁকেও নেশা করে লোকে। এমনকী, নেশার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার থেকে আফটারশেভ খেতেও দেখা গিয়েছে অনেককে। মুশকিল হলো, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা নিয়মিত এইসব দ্রব্য ব্যবহার করে নেশা করে থাকে, তাদের নানা গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দেয়। প্রচণ্ড বুকে ব্যাথা থেকে ক্রনিক মাথা ব্যথা— নানা উপসর্গ দেখা যেতে পারে। আরও সমস্যা হয়, যখন প্রবল নেশার টানে সেই সমস্ত নেশাকেই নেশাগ্রস্তরা যন্ত্রণার উপশম হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। সমস্যা যত বাড়ে, তারা আরও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে একটা আবর্তন চক্রের মধ্যে ঘুরতে থাকে তারা।

সাধারণত গন্ধর সাহায্যে নেশার জন্য ব্যবহৃত হয় গ্যাসোলিন, গঁদ, স্প্রে পেইন্ট, সলভেন্ট, ক্লিনিং ফ্লুইড এবং অন্যান্য নানান এরোসোল। শুঁকে, বা সরাসরি নাক দ্বারা টেনে, চুষে অথবা ব্যাগের মধ্যে এই রাসায়নিক ব্যবহারে নেশা করা যায়। এই সমস্ত উদ্বায়ী বস্তু শোঁকার ফলে স্নায়ু উত্তেজিত হয়, এবং সেই উত্তেজনাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলে হাইপারক্যাপনিয়া ও হাইপক্সিয়া। বদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে বারবার শোঁকায় শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে (হাইপক্সিয়া) ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে (হাইপারক্যাপনিয়া)— এতে আরও ঘোর ঘোর ভাব তৈরি হয়। যেসব প্রাপ্তবয়স্করা এই ধরনের নেশা করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, নানা ধরনের ড্রাগ ব্যবহার করে, ড্রাগে নেশাগ্রস্ত, এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যাতেও ভুগে থাকে। ২০১১ সালের একটি গবেষণা থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে। চণ্ডীগড়ের সরকারি মেডিক‍্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক চিকিৎসা বিভাগ ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেছিল।

এই ধরনের ড্রাগ ব্যবহারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হলো—

  • বমি-বমি ভাব
  • হাঁচি
  • কাশি
  • নাক থেকে রক্ত পড়া
  • মুখে দুর্গন্ধ
  • ক্লান্তি
  • খাবারে অরুচি

অভিভাবকদের প্রতি

ঠিক কী কারণে তরুণ প্রজন্ম এই সর্বনাশা নেশায় মাতছে, তার অনেকগুলি সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু একথা বলা যায়, এর মধ্যে রয়েছে অবদমিত কৌতূহল নিবারণের প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের কয়েকটি বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত‌। এছাড়াও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতাই এই প্রবণতাকে তরান্বিত করে।

১. সবার আগে জরুরি তরুণ প্রজন্মকে নেশার ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে সচেতন করা। কন্ডোম বা এইজাতীয় নেশা জীবনে যে চূড়ান্ত অবক্ষয় ডেকে আনে, সেই বিষয়ে তারা অবগত না হলে বিপদ আটকানো সম্ভব হবে না।

২. অনেক পরিবারেই কন্ডোম নিয়ে কথাবার্তায় আজও রাখঢাক রয়েছে। সন্তানের স্বার্থেই এই বিষয়ে জড়তা কাটিয়ে ফেলা জরুরি। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলুন।

৩. ছেলেমেয়েদের অবসর কেমন হবে, সে-ব্যাপারে বাবা-মায়ের পরিকল্পনা থাকা জরুরি। সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন। তার সুবিধে-অসুবিধের খোঁজ নিন। হতাশা যেন তাকে ঘিরে ধরতে না পারে। কারণ এই ধরনের প্রবণতার শুরু অনেকক্ষেত্রেই হয় হতাশা থেকেই।

৪. সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে, কী ধরনের বিষয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছে সে বিষয়ে অবগত থাকুন। এর মানে কখনওই খবরদারি নয়। সন্তানের ভরসাস্থল হয়ে উঠলে সে নিজেই আপনাকে তার খুঁটিনাটি জানান দেবে। এই পরিবেশ ধাপে ধাপে গড়ে তুলুন। সন্তানের সঙ্গে নিয়ম করে বেড়াতে যান। এতে আপনাদের সংযোগ আরও জোরালো হবে।

৫. সমস্ত মাদকের নেশাতেই শেষ কথা রিহ্যাবিলেটেশান বা পুনর্বাসন। সহজে বললে নেশাগ্রস্তকে মূলস্রোতে ফেরাতে পেশাদারি সাহায্য প্রয়োজন হয়। এই বিষয়েও সচেতনতা জরুরি।

 

More Articles