যৌনসুখে বাধা নয় কন্ডোম, চরম মুহূর্ত দীর্ঘ করতে কী টোটকা লুকোনো নিরোধে?

একাধিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে, কন্ডোম পরে যৌনসুখ মেলে না। বিশেষ করে পুরুষদের। অথচ কিছু কন্ডোম তৈরিই হয়েছে যৌনসুখ দেওয়ার জন্য।

'এক্সটেন্ডেড প্লেজা়র', 'ডিলে', 'মিউচুয়াল প্লেজা়র', 'রিবড', 'ডটেড' কতরকম বিশেষণ তাদের জন্য। ১১ জুলাই ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ডে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুলভাবে ব্যবহৃত তারা। তবু সামাজিক শাসন ও চোখরাঙানি তাদের নিয়ে কথা বলতে গেলেই। কন্ডোম বা নিরোধক, এবং তার সঙ্গে জড়িত যৌনসুখ নিয়ে সমাজের মুখে কুলুপ আঁটা।

একাধিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলছে, কন্ডোম পরে যৌনসুখ মেলে না। বিশেষ করে পুরুষদের। অথচ কিছু কন্ডোম তৈরিই হয়েছে যৌনসুখ দেওয়ার জন্য। 'রিবড' বা 'ডটেড' কন্ডোমের কথা বলা হচ্ছে না, তা সাধারণ চোখে দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু 'ডিলে' কন্ডোম বা 'এক্সটেন্ডেড প্লেজা়র' কন্ডোমের ব্যবহারে কেন অর্গাজ়ম দেরিতে হয়, তা নিয়ে কথা বলতে খুব বেশি শোনা যায় না।

বিশেষ কিছু কন্ডোমে কেন অর্গাজ়ম দেরি করে হয়? কারণ এই ধরনের কন্ডোমে থাকে বেঞ্জোকেন বা লিডোকেন নামের রাসায়নিক। এই দু'টি রাসায়নিক আদতে সাময়িক অনুভূতিনাশক বা এনেস্থেটিক।যৌনমিলনের সময় অনেকেই সাময়িকভাবে যৌন অনুভূতি অনেকেই টের পান না এই ধরনের কন্ডোম ব্যবহারে।

আরও পড়ুন: হারানো যৌন উদ্দীপনা থেকে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে পারে সাপের বিষে তৈরি ওয়াইন!

বেঞ্জোকেন বা লিডোকেন দু'টি আলাদা রাসায়নিক হলেও এদের কাজের পদ্ধতি একেবারেই এক। শরীরের যে অংশের সংস্পর্শে এরা আসে, সেই অংশেই ত্বকের অনুভূতি লোপ পায়। যার মূল কারণ হলো, সেই অংশের নার্ভকোশগুলির কাজকে ব্যহত করে দেয় এরা।

বেঞ্জো়কেন আবিষ্কার করেন জার্মান রসায়নবিদ এডুয়ার্ড রিটসার্ট। তখন ১৮৯০ সাল। আর বেঞ্জোকেন আবিষ্কারের পর থেকেই তা সাময়িক চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু হয়। এমনকী, প্রাণীবিদ্যায় জীবিত প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া হাতে-নাতে পর্যবেক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হতো বেঞ্জোকেন।লিডোকেন আবিষ্কার হয় চারের দশকে। এটি জা়ইলিডিন থেকে প্রাপ্ত একটি অ্যামাইন।

গবেষকদের মতে, তিন জনের মধ্যে একজন পুরুষ জীবনের কোনও না কোনও সময় প্রিম্যাচিওর ইজ্যাকুলেশন বা শীঘ্রপতনের শিকার হন। বহু বছর আগে থেকেই প্রিম্যাচিওর ইজ্যাক্যুলেশন, অর্থাৎ শীঘ্রপতন আটকাতে ব্যবহার করা হতো লিডোকেন।আবিষ্কারের পর থেকেই প্রিম্যাচিওর ইজ্যাকুলেশন আটকানোর অব্যর্থ টোটকা হিসেবে ব্যবহার হওয়া শুরু হয় লিডোকেন। তবে তখন লিডোকেন স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বেঞ্জো়কেনেরও ব্যবহার শুরু হয় কিছুদিন পর। সাম্প্রতিককালে কন্ডোম প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি সরাসরি কন্ডোমেই ব্যবহার করে বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেনের মতো রাসায়নিক।

এবার আসা যাক এই রাসায়নিকগুলি শীঘ্রপতন আটকাতে অথবা অর্গাজ়ম যাতে দেরিতে হয়, তার জন্য কীভাবে কাজ করে। প্রথম কথা হলো, পুরুষটি যদি যৌন সঙ্গমের সময় কোনওরকম যৌন অনুভূতি উপলব্ধি না করে, তার অর্গাজ়ম হবে না বা অনেক সময় লাগবে অর্গাজ়ম হতে। সেই অনুভূতি পাওয়াই যদি আটকে দেওয়া যায় সাময়িকভাবে, তাহলেই তো দীর্ঘায়িত হবে অর্গাজমের সময়। ঠিক সেই কাজই করে বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেনের মতো রাসায়নিক। আর অনুভূতি বন্ধ করার জন্য বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেন অসাড় করে দেয় নার্ভকোশগুলিকে। লিঙ্গের ঠিক মাথায় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা অনুভূত হয়। এক্ষেত্রে সেই অঞ্চলের নার্ভকোশগুলোই অসাড় করা হয়। কন্ডোমগুলি বানানোও হয় সেইভাবেই, যাতে কন্ডোমের যে অংশটি লিঙ্গের মাথা স্পর্শ করবে, সেখানেই বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেন থাকবে।

কিন্তু কীভাবে অসাড় করে নার্ভগুলিকে এরা?

আমরা যে কোনও কিছু অনুভব করি যখন, নার্ভের মধ্য দিয়ে সিগনাল বা সংকেত প্রবাহ হয়। আর এই সংকেত প্রবাহিত হয়, যখন নার্ভের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের আয়ন প্রবাহিত হয়। আবার সেই সংকেত ধেয়ে যায় পরবর্তী নিউরোনে।সোডিয়াম, পটাশিয়াম যাতে একটি নার্ভকোশ থেকে সংলগ্ন পরের নার্ভে পৌঁছতে পারে, তাই দুই নার্ভের কোশের প্রান্তে থাকে সোডিয়াম-পটাশিয়াম চ্যানেল। সহজ করে বলা যাক, এই সোডিয়াম-পটাশিয়াম চ্যানেল আদতে দরজা। যার সাহায্যে একটি নার্ভ থেকে সোডিয়াম,পটাশিয়াম আয়ন বেরিয়ে যায়। আবার পরবর্তী নার্ভের দরজা দিয়ে সোডিয়াম,পটাশিয়াম প্রবেশ করতে পারে।

প্রথমে আয়নিত অবস্থায় না থাকলেও, বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেন উভয়েই কোশের পর্দা ভেদ করে কোশে প্রবেশ করার পরে আয়নিত হয়ে যায়। এবং আয়নিত অবস্থাতেই সোডিয়াম-পটাশিয়াম চ্যানেলে আবদ্ধ হয়।বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেনের মতো রাসায়নিক, সোডিয়াম-পটাশিয়াম চ্যানেলগুলিতে সাময়িকভাবে আবদ্ধ হয়ে, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আয়নের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নার্ভের মধ্য দিয়ে অনুভূতির সংকেত প্রবাহ। আর অনুভূতি না পেলে যে অর্গাজ়ম হবে না, তা তো আগেই বলা হলো।

তবে এই রাসায়নিকগুলির কাজ অনেক ক্ষেত্রেই কোশের পিএইচ-এর ওপর নির্ভর করে, তবে বেঞ্জো়কেনের কাজের ওপর পিএইচের প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। কিছুক্ষণ পরে যখন বেঞ্জো়কেন বা লিডোকেনের প্রভাব আর থাকে না, তখন লিঙ্গের অনুভূতি আবার ফিরে আসে। আর তারপর আসে সেই চরম মুহূর্ত, যখন যৌনসুখ শিখরে পৌঁছয়।

 

More Articles