ক্রিপ্টোর বাজারে মন্দা, কী করলে অর্থ সুরক্ষিত থাকবে, জেনে নিন

এই মুহূর্তে মার্কেট যেরকম ওঠানামা করতে শুরু করেছে, তাতে এরকম সেল অফ ট্রেন্ড আরও বেশ কিছু সময় ধরে চলার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে যাঁরা রিটেলে বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তাঁদের একটু বুঝেশুনে পদক্ষেপ ফেলা উচিত। স্পট ট্রে...

ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীদের জন্য এই বছরটা ছিল অত্যন্ত খারাপ। এখনও পর্যন্ত এই বছরে বিনিয়োগকারীরা একেবারেই লাভের মুখ দেখতে পাননি বললেই চলে। এই বছরের শুরু থেকেই সারা বিশ্বের ক্রিপ্টোজগৎ লোকসানের সম্মুখীন হতে শুরু করেছিল। ইতিমধ্যেই এই ডিজিটাল কারেন্সির গ্লোবাল মার্কেট ক্যাপিটাল ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছে এবং এই ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের প্রত্যেকটি কয়েন তাদের মূল্য হারিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ করে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে, চলতে থাকা মন্দার বাজারে ক্রিপ্টোকারেন্সির হাল ফেরার আর কোনও আশা এবং সম্ভাবনাও দেখছেন না অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিটকয়েন এবং অন্যান্য প্রথম সারির ক্রিপ্টোকয়েনগুলির বাজারে এই মুহূর্তে মন্দা চললেও, সবথেকে খারাপ অবস্থা টেরা নামক ক্রিপ্টো মুদ্রাটির। গত মাসে যেভাবে এই মুদ্রাটি নিজের মূল্য হারিয়েছিল, তাতে এই বিষয়টা পরিষ্কার হয়, ক্রিপ্টো মুদ্রার আবারও সেই পুরনো জায়গা ফেরত পাওয়া বেশ শক্ত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবথেকে বড় ক্রিপ্টো লেনদেনকারী, এক্সচেঞ্জ এবং কোম্পানিগুলি আশঙ্কা করছেন আরও বড় কোনও ক্ষতির। টেরা খুব একটা বেশি জনপ্রিয় ক্রিপ্টো মুদ্রা নয়। কিন্তু যদি ইথেরিয়াম কিংবা বিটকয়েনের মতো কোনও ক্রিপ্টো মুদ্রা, যাতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক বেশি, নিজের মূল্য হারায়, তাহলে কিন্তু সারা বিশ্বের বিরাট সংখ্যক ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের বিশাল বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

ইতিমধ্যেই এই দু'টি কয়েনও নিজেদের মূল্য হারাতে শুরু করেছে। গত বছর মোটামুটি এই সময় বিশ্বের বিভিন্ন ক্রিপ্টো মুদ্রার দাম যেরকম ছিল, তার তুলনায় আজকের দাম প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতিতে এই ধরনের মুদ্রায় বিনিয়োগ করা খুব একটা সহজ বিষয় হবে না। তার ওপর যারা নতুন নতুন এই মার্কেটে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য তো বিষয়টা আরও কঠিন হতে চলেছে। তাই মূলত ক্রিপ্টো-নবিশদের জন্যই রইল কিছু এক্সপার্ট অ্যাডভাইস।

আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে উপহার? বিটকয়েন না কি অন্য কিছু দেবেন?

স্পট ট্রেডিং থেকে দূরে থাকবেন
এই মুহূর্তে মার্কেট যেরকম ওঠানামা করতে শুরু করেছে, তাতে এরকম সেল অফ ট্রেন্ড আরও বেশ কিছু সময় ধরে চলার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে যাঁরা রিটেলে বিনিয়োগ করতে চাইছেন, তাঁদের একটু বুঝেশুনে পদক্ষেপ ফেলা উচিত। স্পট ট্রেডিং থেকে কিছু সময় পর্যন্ত অব্যাহতি নিন।

ব্লক চেন আইডেন্টিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল‍্যাটফর্ম আর্থ আইডি-র রিসার্চ স্ট্রাটেজিস্ট শরৎ চন্দ্র বলছেন, "এই মুহূর্তে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতের জন্য একেবারেই ভালো সময় যাচ্ছে না। শুধু ছোটখাটো ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, সময় খারাপ চলছে বড় বড় নামীদামি ক্রিপ্টো মুদ্রার জন্যও। এই অবস্থায় যাঁরা বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতেন, তাঁরাও কিন্তু নিজেদের হোল্ডিং বিক্রি করা শুরু করেছেন। পরিস্থিতি এমনই খারাপ, রিটেল মার্কেট প্রায় প্রত্যেকদিন ওঠানামা করতে শুরু করেছে। যাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা ক্রিপ্টো-ফিক্সড ডিপোজিট এবং ক্রিপ্টো SIP-র সুবিধে গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু রিটেল বিনিয়োগ যাঁরা করেন, তাঁদের এই মুহূর্তে স্পট ট্রেডিং থেকে অনেকটা দূরে থাকা উচিত।"

এই মুহূর্তে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই
যদি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে কিছুদিনের জন্য আপনি আপনার ইনভেস্টমেন্ট থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। যখন সারা বিশ্বের ক্রিপ্টোজগতের অবস্থা ভালো হবে তখন নাহয় আপনি ভালোভাবে বিনিয়োগ করুন এই ক্রিপ্টো মার্কেটে। KuCoin ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কোম্পানির সিইও জনি লিউ বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন শর্ট টার্ম মার্কেট থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এই মুহূর্তে, শর্ট টার্ম মার্কেট খুব একটা ভালোভাবে কাজ করবে না। এই মুহূর্তে যদি আপনি এরকম মার্কেটে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা প্রবল। এই মুহূর্তে স্বল্পমেয়াদি মার্কেট নতুন বিনিয়োগকারীদের বিশাল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন করে দিতে পারে।

তাঁর কথায়, "এই মুহূর্তে স্বল্পমেয়াদি মার্কেটের যা পরিস্থিতি, সেই দেখে মনে করা হচ্ছে বিশ্বের বড় কিছু কোম্পানির বড় প্রজেক্টও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে সবথেকে ভালো এটাই যে, স্বল্পমেয়াদি মার্কেট ভালো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে যান।"

আরেকটু গবেষণা করুন
আপনি যদি নতুন নতুন এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে প্রবেশ করে থাকেন, তাহলে আপনাকে আপনার বিনিয়োগের ওপর আরেকটু গবেষণা করতে হবে। আর যাঁরা পুরনো বিনিয়োগকারী রয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই নিজের স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে হবে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আপনাকে আরও ভালোভাবে রিসার্চ করতে হবে এই সম্পূর্ণ মার্কেট নিয়ে। কোন বিনিয়োগে রিটার্ন বেশি, কোন মার্কেটের পরিস্থিতি ভালো, সবকিছু নিয়ে ভালো করে রিসার্চ করতে হবে আপনাকে।

উইট্রেড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও প্রশান্ত কুমার বলছেন, "যদি আপনার ক্রিপ্টো মার্কেটে বিনিয়োগের ইচ্ছা থাকে, তাহলে বিভিন্ন ধরনের ক্রিপ্টোকয়েন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করুন। দেখুন কোন কয়েনের ওঠানামা কতটা ভালো, কোন কয়েন কত বেশি রিটার্ন দিতে পারে, কোন কয়েনের রিস্ক বেশি, কোন কয়েনের রিস্ক কম, স্বল্পমেয়াদি মার্কেটে কোন কয়েন ভালো কাজ করে, দীর্ঘমেয়াদি মার্কেটে কোন কয়েন ভালো কাজ করে, সব দেখে নিয়ে তারপরেই বিনিয়োগের চিন্তাভাবনা শুরু করুন। প্রয়োজন পড়লে, যারা ক্রিপ্টো মার্কেটে এর আগে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের কাছ থেকেও আপনি উপদেশ গ্রহণ করতে পারেন।"

আপনার আয়ের থেকে বেশি ব্যয় করবেন না কখনও
যাঁরা এই মার্কেটে প্রথম প্রথম প্রবেশ করতে চাইছেন, তাঁদের একটা কথা বলে রাখা ভালো, ক্রিপ্টো মার্কেট একটি হাই-রিস্ক এবং হাই-রিওয়ার্ড গেম। তাই আপনাকে এমনভাবেই বিনিয়োগ করতে হবে, যেখানে ক্ষতি হলেও আপনার তেমন কিছু সমস্যা হবে না। যদি আপনি রিটেল বিনিয়োগকারী হতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার ডিসপোজেবল ইনকাম বিনিয়োগ করে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের জন্য ক্রিপ্টো মার্কেটের এই পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে ভালো প্রমাণিত হতে পারে। সাইফার ক্যাপিটাল নামের একটি ব্লকচেন কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার বিনীত বুদকি বলছেন, "সারা বিশ্বের ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের এই খারাপ পরিস্থিতিটা ভারতের জন্য অত্যন্ত স্থিতিশীল একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা কোনওদিকে না ভেবে বিনিয়োগ করার জন্য উদ্যত হয়ে পড়বেন না, বরং সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে তারপরেই বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করবেন। এতে ভারতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট নিয়ে ধারণা আরও পরিষ্কার হবে এবং ভবিষ্যতে ভারতীয় বিনিয়োগকারীরাও প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতের ক্রিপ্টো মার্কেটকে আরও উন্নত করে তুলবেন।"

 

More Articles