খেলা ঘোরাতে ইউক্রেনের অমোঘ অস্ত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি, বদলে যাচ্ছে গোটা অর্থব্যবস্থাই

সারা বিশ্বের তাবড় অর্থবিশেষজ্ঞর একটা বড় অংশই বলছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি, এক বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর এক আবিষ্কার যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আমাদের পৃথিবীর অর্থনীতির দিশা পাল্টে দেওয়ার। ক্ষমতাহীনদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার,  গুটিকয়েক ক্ষমতাবানদের হাত থেকে সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার। ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে Decentralized financial system. সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি এই মুহূর্তে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম মুখ্য চরিত্র। কী ভাবে?

রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইউক্রেন সরকারের অর্থ প্রয়োজন হয়েছে। প্রথম বিশ্বের অনেক দেশই সাহায্য করছে তাদের। কিন্তু শুধু অন্যান্য দেশের সাহায্যের আশাতে বসে থাকেনি তারা। তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে দুটি ক্রিপ্টো ওয়ালেটের তথ্য দিয়ে সরাসরি তাদের সাহায্য পাঠানোর আবেদন করেন। প্রথম চার দিনেই তারা অনুদান পান প্রায় সাড়ে দশ মিলিয়ন ডলার। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় একশ মিলিয়ন ডলার অনুদান পেয়েছেন তাঁরা, জানাচ্ছেন মাইকেল চোবানিয়ন, যিনি "ক্রিপ্টো ফান্ড ফর ইউক্রেন" প্রোগ্রামের অধিকর্তা, সেই সাথে ক্রিপ্টো বিনিময়ের মাধ্যম কুনা ওয়ালেটের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। তিনি আরও জানাচ্ছেন, "আমরা এখনও অনুদান গ্রহণ করছি, এবং সেই অর্থ আমরা খরচ করছি রেশন এবং সেনার জন্যে মিলিটারি সামগ্রী, যেমন বুলেট প্রুফ ভেস্ট এবং হেলমেট কিনতে খরচ করছি।"

আরও পড়ুন-কলেজে পড়াতে পিএইচডি লাগবে না! গবেষকদের অস্তিত্বই প্রশ্নের মুখে…

জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন এই তহবিল থেকে ইউক্রেনের সরকার খরচ করেছে বুলেট প্রুফ ভেস্ট কেনার জন্যে। এই তহবিল তৈরিই করা হয়েছিল যাতে সেনাকে সাহায্য করা যায় এবং সেই সাথে যুদ্ধে আক্রান্ত সমস্ত মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু যুদ্ধের তীব্রতা যে পরিমানে বাড়ছে, তাতে এখন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো অর্থই সেনার সাহায্য করতে, মিলিটারি খাতে খরচ করা হবে।

মাইকেল চোবানিয়ন আরো জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্রিপ্টো অনুদান এসেছে বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মাধ্যমে।

এই ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনুদান নেওয়ার কারণ কী? আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে তো মোটা অঙ্কের অনুদান আসছেই। জানা যাচ্ছে, ক্রিপ্টোর মাধ্যমে অনুদান নেওয়া হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষেরাও তাদের সাধ্য মতো অনুদান পাঠাতে পারেন, এবং যেহেতু ক্রিপ্টো একটি বিকেন্দ্রীভূত আর্থিক ব্যবস্থা, সেই কারণে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে খুব কম প্রসেসিং-ফি দিয়ে তাঁরা এই অনুদান পাঠাতে পারবেন। সবথেকে বড় বিষয় হল, এতে যুবসমাজ আরো বেশি করে এগিয়ে এসেছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তাঁরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে।



অনুদানের এই মাধ্যম বেছে নেওয়ার আরো একটি বড় কারণ হল, যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের যে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে তার কোনো প্রভাব পড়বে না ক্রিপ্টোর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করলে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইউক্রেনের সরকারি মুদ্রার দাম অনেক পড়ে গেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনুদান নিলে এই পড়ন্ত ইউক্রেনের সরকারি মুদ্রার দাম কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেনা।

আরো একটি বিষয় হল লেনদেনের দ্রুততা। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় অর্থগ্রহন করলে তা প্রায় চব্বিশ ঘন্টা লেগে যেতে পারে। কিন্তু সেই জায়গায় ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন অনেক বেশী দ্রুততার সাথে করা সম্ভব। যুদ্ধের সময় এই লেনদেনের দ্রুততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

চোবানিয়ন মনে করছেন ক্রিপ্টোকারেন্সির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে দেশের অর্থনীতির খুব গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ হয়ে ওঠার। তার মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ জিতবে এবং তারপর তাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করবেন।

গত সপ্তাহেই এই পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে তার দেশ। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি বিল পাশ করেছেন যা ভবিষ্যতে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারকে আইনী অনুমোদন দেবে।

তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা শুধু ইউক্রেনই নয়, রাশিয়াও নিচ্ছে, এবং মনে করা হচ্ছে, এত আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়া আরো বেশি করে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকবে।

রাশিয়ার এই আগ্রাসন, এই যুদ্ধ আমাদের পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে বিশ্ব রাজনীতির ভারসাম্য। সেই সঙ্গে অনেক দেশই এখন দেখছে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষমতা এবং আগামী দিনে সব শক্তিশালী দেশই ক্রিপ্টোকে মুক্ত হস্তে গ্রহণ করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

More Articles