হিতাহিত ভুলে একটানা ফোনের স্ক্রিনে চোখ, নিঃশব্দে মৃত্যুকে ডেকে আনছেন আপনি

আপনি কি সারাদিন ফোনে বুঁদ হয়ে থাকেন? ফোন হাতে নিয়ে বসলেই খেয়াল থাকে না সময়ের!ধরুন টাইমলাইন স্ক্রোল করেই যাচ্ছেন সব কাজ ভুলে গিয়ে।ক্রমাগত খারাপ খবরগুলি গোগ্রাসে গিলেই চলেছেন। ভেবেছিলেন একটু ফোনটা দেখেই বাকি থাকা কাজ করতে বসবেন কিন্তু কোথায় কাজ ! ঘন্টাখানেক সময় পেরিয়ে গেছে অথচ খেয়ালই নেই কাজের কথা। কিংবা ধরুন গভীর রাত তাও চোখে ঘুম নেই, ঘেঁটেই চলেছেন ফোন। হঠাৎ এমন একটি খবর নজরে এল যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারলেন না। শেষ দুবছরে করোনাকালে সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই খারাপ খবর নজরে এসেছে। কোনো চেনা মানুষের মৃত্যুর যা দেখে মন খারাপ বেড়েছে সর্বদা। সঙ্গে বেড়েছে নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তাও। একটানা সংবাদ মাধ্যমেও পৃথিবীব্যাপী এই অসুখের কথা শুনে মুষড়ে পড়েছে মন। এই নেতিবাচক খবরের স্রোত আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসক মহল।চিকিৎসকেরা ফোন বুঁদ হয়ে এই নেতিবাচক খবর শোনার প্রবণতাকে 'ডুমস্ক্রলিং' নাম দিয়েছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি একটি নতুন শব্দ। ২০১৮ সালে ট্যুইটারে প্রথম শব্দটি দেখা যায়। ক্রমে ২০১৯ সালে অতিমারী শুরু হলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই শব্দটি। চিকিৎসকরা বলছেন, ডুমস্ক্রলিংয়ের কারণে বেড়ে চলেছে মানুষের খারাপ থাকার প্রবণতা। বাড়ছে বিষাদ।

মস্তিষ্কের সেরেটোনিন নামক রাসায়নিক উপাদানটি আমাদের মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাথে দেহে অ্যাড্রিনালিন এবং কর্টিসোলের ভারসাম্যও ব্যাহত হয়। দীর্ঘ সময় ধরে উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার কারণে এই উপাদানের মাত্রা হ্রাস পায় শরীরে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুঃখের গান চালিয়ে মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করেও দেহে সেরেটোনিনের মাত্রা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। এই কারণে চিকিৎসকেরা উদ্বেগ, বিষণ্ণতার চিকিৎসায় রোগীর শরীরে সেরেটোনিন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন।

স্বাস্থ্যের ওপর ডুমস্ক্রলিংয়ের প্রভাব

চারপাশের বিষয়ে উদাসীন হয়ে একটানা ফোন দেখাটা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, আতঙ্কের উদ্রেক হয় এবং তা স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। এমনকী স্নায়ুতন্ত্রের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এই ডুমস্ক্রলিংয়ের কারণে। মনোযোগ হ্রাস, স্মৃতিশক্তিও বিলোপ পেতে শুরু করে এর ফলে।

তবে চিকিৎসকদের মতে এই আসক্তির কারণে শুধু মানসিক নয় শারীরিক স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক অবনতি লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকে ফোন দেখার কারণে ঘাড়ের স্পন্ডিলোসিসে আক্রান্ত হওয়ার হার ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভব হতে পারে এবং অস্থিসন্ধিতে আর্থরাইটিস দেখা দেয়। পরিসংখ্যান বলছে, গত দুবছরে কার্পাল টানেল সিনড্রোমের মত স্নায়ুর সমস্যা, স্থূলতা এবং দৃষ্টি শক্তির সমস্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। তাছাড়া মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার প্রবণতাও যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী। 

আরও পড়ুন-লাখো মানুষের চোখ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে, পরিবেশের জন্য এই মুদ্রা ঠিক কতটা খারাপ

কীভাবে বুঝবেন আপনারও এই আসক্তি রয়েছে?

আপনি যদি ফোন হাতে বসে সোশ্যাল মিডিয়ার  নেতিবাচক রিল, ভিডিও, খবরগুলি অনবরত দেখতেই থাকেন তবে সময় এসেছে নিজেকে শাসন করার। এখনই নিজেকে আটকান এই আসক্তির থেকে।

নির্দিষ্ট সময়ে ফোন দেখুন

এই আসক্তির থেকে বেরিয়ে আসতে দিনের একটু নির্দিষ্ট সময়ে ফোন ধরার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন কাজের মাঝে বিরতির সময়টুকু বা শরীরচর্চার পর যে সময়টুকু হাওয়ায় বসে আছে বা সন্তানকে ঘুমিয়ে পড়ার পর বা আপনার সুবিধা মতো। এই নির্ধারিত সময়টুকু ছাড়া ফোন ধরবেন না। এতে প্রথম কিছুদিন অসুবিধা হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারবেন।

ঘুম থেকে ওঠার পরেই ফোন ধরবেন না

আমাদের মধ্যে অনেকেরই স্বভাব আছে মাথার কাছে ফোন নিয়ে ঘুমানোর এবং সকালে চোখ খুলেই আগেই ফোন ধরার। এই কাজ থেকে বিরত থাকুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুটা সময় ধ্যান করুন। বিশ্বের সাথে যোগাযোগ তৈরির আগে নিজেকে সময় দিন এর ফলে শরীর মন দুই ভালো থাকবে। তাই আজই এই অভ্যাস বদলে ফেলার চেষ্টা করুন।

বাইরে সময় কাটান

বাইরের আলো ,বাতাস,গাছ শরীর ও মনকে সতেজ রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।তাই চেষ্টা করুন ফোন ছেড়ে বাইরে পরিবেশের মধ্যে নিজেকে ভালো রাখার।গাছ লাগাতে পারেন ফাঁকা সময়ে এতে পরিবেশ রক্ষা পাবে, মন ভালো থাকবে আর ফোনের প্রতি আসক্তিও ধীরে ধীরে কমে যাবে।

সুঅভ্যাস গড়ে তুলুন

ফোনে যে সময় ব্যয় করছেন সেই সময় ইতিবাচক সৃজনশীল কোনো কাজের জন্য ব্যয় করুন।বই পড়া, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, ছবি আঁকা, ডুডলিং, জার্নাল লেখা, যোগব্যায়াম করতে পারেন ফাঁকা সময়ে। এতেমন ও ভালো থাকবে, কাজের উৎসাহও বাড়বে।

More Articles