লাখো মানুষের চোখ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে, পরিবেশের জন্য এই মুদ্রা ঠিক কতটা খারাপ

ক্রিপ্টোকারেন্সি, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে এই ভার্চুয়াল মুদ্রাটির প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নাতীত। সারাবিশ্বে ইনভেস্টমেন্টের ক্ষেত্রে একটি বড় অংশ দখল করে রয়েছে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি। বিটকয়েন থেকে শুরু করে ইথেরিয়াম, সোলানা, টেথার ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে মুদ্রার অভাব নেই। প্রায় এক দশক আগে যখন বিশ্ব বাজারে লঞ্চ হয়েছিল বিটকয়েন, সেই সময় কেউ হয়তো চিন্তা করতে পারেননি, মাত্র দশ বছরের মধ্যেই এতটা পরিবর্তন হয়ে যাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির জগৎটা। এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মূলত কাজ করে ব্লকচেইন টেকনোলজির উপর। কিন্তু এই ব্লকচেইন টেকনোলজি বিষয়টা কি, কিভাবে আদৌ কাজ করে ক্রিপ্টোকারেন্সি? এর সঙ্গে গোটা মুদ্রাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের সম্পর্ক কি? 

যারা মোটামুটি ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নগুলো খুব একটা কঠিন প্রশ্ন নয়। কিন্তু যারা সবে সবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আগেভাগে জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনভেস্টমেন্ট পাশ্চাত্য বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি একটি সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ এমন রয়েছেন যারা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করেন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের ইচ্ছা রাখেন। যার মধ্যে সিংহভাগ কিন্তু ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি মহিলা। অন্যদিকে আবার ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে প্রযুক্তি এবং রাজনীতির একটা সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তাই সকলেরই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে কিছু ধারনা থাকা অবশ্যই উচিত।

ব্লকচেইন টেকনোলজি

মূলত ব্লকচেইন টেকনোলজি হলো এমন একটি টেকনোলজি যা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রানজাকশন রেকর্ড করে রাখে। একটি কম্পিউটার কোডের মাধ্যমে এই বিশেষ টেকনোলজি কাজ করে এবং এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রত্যেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি জন্য আলাদা আলাদা রকমের ব্লকচেইন তৈরি করা হয়েছে। কিছু কিছু ব্লকচেইনে ডেভলপাররা কিছু অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারেন এবং কিছু কন্টাক্ট প্রোগ্রাম করতে পারেন। তবে অধিকাংশ ব্লকচেইন সম্পূর্ণরূপে এনক্রিপটেড এবং ডিজিটাল ভাবে সুরক্ষিত। তাই সব জায়গায় এই ব্লকচেইন টেকনোলজি নিয়ে কাজ করার সহজ হয় না।

প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য আলাদা আলাদা ব্লকচেইন ব্যবস্থা রয়েছে। একদিকে যেমন বিটকয়েন তৈরি করা হয়েছে বিটকয়েন ব্লকচেইনের ওপরে। অন্যদিকে আবার ইথার তৈরি হয়েছে ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের উপরে। এছাড়াও এমন কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে যারা কিন্তু অন্য একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি উপরে নির্ভর করে চলে। কিন্তু, তাদের নাম আলাদা হতে পারে তবে তাদের ব্লকচেইন একই থাকবে। যদিও সেই রকম ক্রিপ্টোকারেন্সি এই মুহূর্তে খুব একটা বেশি নেই, অথবা তাদের প্রচলন খুব একটা ভালো নয়। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, এই ডিজিটাল মানি কোনোভাবেই কোনো সরকারি সংস্থার দ্বারা পরিচালিত বা সাহায্যপ্রাপ্ত হয় না। তাই এই ব্যবস্থায় ব্লকচেইন টেকনোলজির উপরে আপনাকে পুরোপুরি ভাবে নির্ভর করতে হবে। ডিজিটাল কারেন্সির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে সরকারি কোন সাহায্য খুব একটা সহজে পাওয়া যায় না।

কী ভাবে তৈরি হয় ক্রিপ্টো মুদ্রা?

ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করার জন্য নানা ধরনের পদ্ধতি আছে। প্রত্যেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সিকে তৈরি করার জন্য আলাদা রকমের পদ্ধতি রয়েছে। তবে তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় যে পদ্ধতি সেটা হল মাইনিং। আসল জগতে একটি কম্পিউটার বিদ্যুতের মাধ্যমে চলে এবং একটি বিশাল মাত্রায় শব্দ এবং তাপ উৎপন্ন করতে পারে। অন্যদিকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে দেখতে গেলে, একটি কম্পিউটার সবসময় একটি গণিতের ধাঁধা সমাধান করতে থাকে। যে কম্পিউটার সবার আগে সেই গণিতের ধাঁধার সমাধান করতে পারবে, সেই কম্পিউটার তৈরি করবে নতুন মাইনিং করা বিটকয়েন। এই বিটকয়েনের ডিজাইন এখনো পর্যন্ত তৈরি করা হয় ২০০৯ সালে তৈরি করা একটি ওপেনসোর্স ডিজাইন থেকে। তবে সম্ভাবনা আছে খুব শীঘ্রই এই বিটকয়েনের আকার-আকৃতি কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। 

বিটকয়েন বিষয়ক অন্য লেখা- রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধে নির্ণায়ক শক্তি, কী ভবিষ্যৎ বিটকয়েনের?

তবে, মাইনিং শুধুমাত্র যে বিটকয়েন তৈরি করার ক্ষেত্রে কাজে লাগে, তা কিন্তু নয়। বিটকয়েন তৈরি করার পর কী ভাবে এই বিটকয়েনের ট্রানজাকশন হচ্ছে সেই তথ্য সংগ্রহ করে রাখার জন্য একইভাবে ব্যবহার করা হয় মাইনিং। কম্পিউটার যখন গণিতের ধাঁধা সমাধান করে, সেই সময় যে বিটকয়েন ট্রানজেকশন হয়ে থাকে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হয় ব্লকচেইনে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরাও জানতে পারেন তাদের কাছে কতটা বিটকয়েন রয়েছে এবং কত টাকা মূল্যের বিটকয়েন রয়েছে। 

কী ভাবে কাজ করে বিটকয়েন মাইনিং?

বিটকয়েন ইকোসিস্টেমে মাইনারদের একটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে অগুন্তি সংখ্যক মাইনার বর্তমানে কাজ করছেন। এই মাইনাররা তাদের অত্যন্ত পাওয়ারফুল সুপার কম্পিউটারের সিপিইউ ব্যবহার করে এই সমস্ত ডিজিটাল লেনদেন সম্পাদন করতে পারেন। পাশাপাশি, তারা কিন্তু তৈরি করতে পারেন নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি।

যদি কোন ব্যবহারকারী তার কোন প্রিয়জনকে ক্রিপ্টোকারেন্সি পাঠাতে চান তাহলে প্রথমে তিনি পাবলিক সার্ভারে প্রবেশ করবেন এবং তারপর প্রাইভেট কি জেনারেট করে একটি অনলাইন সিগনেচার তৈরি করবেন। তারপরেই সম্পূর্ণ এনক্রিপটেড ইনফর্মেশন পৌঁছে যাবে একটি নির্দিষ্ট মাইনার এর নেটওয়ার্কের কাছে। তারা এই পুরো তথ্য সম্পূর্ণরূপে স্ক্যান করবেন এবং ভেরিফাই করবেন। তারপর তারা দেখবেন ওই ব্যক্তির ওয়ালেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটকয়েন রয়েছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ওই মাইনার ওই ব্যক্তির লেনদেন সম্পন্ন করবেন তার সিপিইউ ব্যবহার করে। যে মাইনার এর সিপিইউ যত বেশি পাওয়ারফুল হবে, তিনি তত তাড়াতাড়ি লেনদেন করতে সক্ষম হবেন। আর একজন মাইনার যতগুলি লেনদেন সম্পন্ন করবেন, সেই অনুযায়ী তিনি রোজগার করতে পারবেন। এখানে সরাসরিভাবে ওই মাইনিংয়ে জড়িত ব্যক্তির অংশগ্রহণ করা সব সময় বাধ্যতামূলক নয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে এই লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব। 

একজন মাইনার একটা নির্দিষ্ট সময়ে যতগুলি লেনদেন করতে পারবেন, সেই নিরিখে তিনি রোজগার করতে পারবেন। তার পাশাপাশি তিনি নিজের লেনদেন করার একটি কপি সংগ্রহ করতে পারবেন যা তিনি পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিটকয়েন তৈরি করার পদ্ধতি খুব একটা সহজ নয়। যত সহজে কোন মাইনার একটি লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন, তত সহজে কিন্তু বিটকয়েন তৈরি করা যায় না। একটি বিটকয়েন তৈরি করতে গেলে অনেক সময় ১ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। একটা সময় ছিল যখন বিটকয়েন তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় গণিতের ধাঁধা খুব একটা কঠিন ছিল না, সেই সময় খুব সহজে বিটকয়েন তৈরি করা যেত। কিন্তু এই মুহূর্তে নতুন বিটকয়েন তৈরি করার ক্ষেত্রে গণিতের ধাঁধা আরো বেশি জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করেছে। এর ফলে প্রয়োজন হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ এবং সংখ্যায় অনেকটাই কমে যাচ্ছে মাইনার এর পরিমান। সুরক্ষা আরো বাড়ছে, ফলে বিটকয়েন তৈরি করতে সময় অনেক বেশি লাগছে। 

বিকেন্দ্রীকরণ

ব্লকচেইন টেকনোলজির একটি বিশেষত্ব হল, একসঙ্গে একাধিক কম্পিউটারের লেনদেনের তথ্য এই টেকনোলজি একসাথে জমা করে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে এই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে কানেক্ট থাকা সমস্ত কম্পিউটার এবং নোড সব সময় একে অপরের রেকর্ড যাচাই করতে থাকে। এর ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে কোনভাবেই কোন তথ্যে ভুল হবার জায়গা নেই। একাধিক জায়গায় এই সমস্ত তথ্যের একেকটি কপি করা থাকে, যার ফলে কোনো তথ্য যদি কোন কম্পিউটার থেকে সরে যায়, তাহলে অনেক জায়গা থেকে ব্যাকআপ নেওয়া যেতে পারে।

ব্লকচেইন টেকনোলজির বিকেন্দ্রীকৃত এবং ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক সব সময় প্রমাণ করে কোনরকম সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থা এই বিটকয়েন নেটওয়ার্ক এর উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে বিকেন্দ্রীকৃত এবং এই সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক পরিচালনা হয় শুধুমাত্র সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে। এই টেকনোলজির উপরে সরকারি হস্তক্ষেপ চলে না, ফলে যে সমস্ত সরকারের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা রয়েছে, সেসব দেশে বিটকয়েন কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সি চলতে পারে না। সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে চিনে এই একই কারণের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বেআইনি বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয় কারণ, সেই সময়ে চিন সরকারের মনে হয়েছিল সে দেশের আর্থিক ব্যবস্থার উপর থেকে সরকারের প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে দেবে বিটকয়েন। এছাড়াও, সাইবারক্রাইম এবং আর্থিক লেনদেনের ঝুঁকি থাকার কারণেও অনেক দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি বেআইনি বলে স্বীকৃত। 

কতটা সুরক্ষিত এই ব্লকচেইন?

যারা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে চর্চা রাখেন, তারা সব সময় বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাক করা কারো মুখের কথা নয়। নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের নিরিখে সুরক্ষার মান পরিবর্তিত হলেও, ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাক করা কোন বড় হ্যাকার এর পক্ষেও খুব একটা সহজ কাজ না। সত্যিই কি তাই? ব্লকচেইন টেকনোলজির উপরে হস্তক্ষেপ করা কি সত্যিই এতটা কঠিন?

এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের সবথেকে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন হলো বিটকয়েন ব্লকচেইন। এখনো পর্যন্ত এই বিটকয়েন ব্লকচেইন এর উপরে কোনরকম হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটতে পারেনি। আজ অবধি এই ব্লকচেইন সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত। তবে, সমস্ত ব্লকচেইনই যে একইভাবে কাজ করবে সেরকমটা নাও হতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি চেইন ইথেরিয়াম যদিও এর আগে একটা বৃহৎ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৬ সালে একটি সফটওয়্যার সমস্যার কারণে বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল ইথেরিয়াম। যদিও সেই সময়ে ব্লকচেইন হ্যাক করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইথার কয়েন চুরি হয়েছিল ইথেরিয়াম ব্লকচেইন থেকে। 

এছাড়াও বিভিন্ন ব্লকচেইনের ক্ষেত্রে এই হ্যাকিং এর সমস্যা থাকে। একবার ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জেও ডিজিটাল ব্যাংক ডাকাতদের আবির্ভাব ঘটেছিল। সেই সময়ে একাধিক একাউন্ট তারা খালি করে দিতে পারলেও, খুব একটা বেশি ক্ষতি হয়নি সেই নির্দিষ্ট ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের। এছাড়াও, ২০১৮ সালে একটি জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সিইও তার কাছে থাকা উচিত গুরুত্বপূর্ণ পাস কোড পরবর্তী সিইওর হাতে না তুলে দিয়েই মারা যান। এ সময় ওই বিশেষ পাসকোড খুঁজে না পাওয়ার কারণে লক হয়ে যায় বহু মানুষের কোটি কোটি টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি।

তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে যদি কোনো ভাবে আপনার মুদ্রা আটকে যায়, তাহলে কিন্তু ব্যবহারকারীর সমস্যার শেষ নেই। নিজের টাকা ফেরত পাবার খুব কম অপশন রয়েছে ওই ব্যবহারকারীর হাতে। যদি কোন সিকিউরিটি ব্রিচ অথবা কোন অনলাইন জালিয়াতির কারণে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড আপনি ভুলে যান, তাহলে কিন্তু বিকেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থা হওয়ার কারণে, পাসওয়ার্ড নতুন করে সেট করার কোন অপশন নেই। এছাড়াও এক্ষেত্রে আপনি কোন রকম বীমা কোম্পানির সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন না। 

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ক্রিপ্টোকারেন্সি যথেষ্ট সুরক্ষিত একটি মুদ্রা ব্যবস্থা। কিন্তু যদি আপনার টাকা কখনো আটকায়, কখনো আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে যান, অথবা কখনো সফটওয়্যার সমস্যার কারণে সেই ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কে কোন সমস্যা হয়, তাহলে আপনার কাছে আপনার টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমনকি, যথেষ্ট পরিমাণ সুরক্ষিত হওয়া সত্বেও বিটকয়েনও কিন্তু অনেক সময় আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারে।

​​​​​​হ্যাকারদের প্রাইম টার্গেট

হয়তো বিটকয়েনের ক্ষেত্রে নয়, কিন্তু এমন অনেক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে যেখানে ক্রিপ্টো গ্রাহকদের সম্পূর্ণ তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সকলেই জানতে পেরে যান, কার কাছে কত পরিমান ক্রিপ্টো মুদ্রা রয়েছে। এর ফলে হ্যাকাররা সহজেই সেই অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে জালিয়াতির ছক রচনা করতে পারে। এছাড়াও যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে যেহেতু খুবই সহজে বিশ্বের যে কোন স্থানে সহজে টাকা পাঠানো যায়, তাই বিভিন্ন বেআইনি কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি। বিভিন্ন বেআইনি ড্রাগ এবং একাধিক বেআইনি জিনিসপত্রের চালান এবং জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা।

​​​​​​আজকের যুগে ক্রিপ্টোকারেন্সির গুরুত্ব

এই ক্রিপ্টোকারেন্সি যেহেতু কোনো সাধারণ মুদ্রা না, তাই কোন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, কোনো সরকার এমনকী কোন সরকারি সংস্থা এই কারেন্সি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই এই মুদ্রার গুরুত্ব প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা রকমের। যারা এই মুদ্রা ব্যবহার করে অভ্যস্ত এবং যারা এই মুদ্রায় যথেষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেন, তাদের কাছে কিন্তু এই ডিজিটাল মুদ্রা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাইনারদের কাছেও ক্রিপ্টোকারেন্সির গুরুত্ব রয়েছে। তারা মনে করেন যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ এই জগতে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাদের লাভের অঙ্কটাও বাড়বে।

তবে হ্যাঁ, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সবার ক্ষেত্রে সুবিধার নাও হতে পারে। যারা সাধারণত এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে জানেন না, তাদের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সির তেমন একটা গুরুত্ব নেই। কিছু কিছু এমন মুদ্রা রয়েছে সেগুলি মূলত ব্যবহার করা হয় বিনিয়োগের জন্য। তাই সে ক্ষেত্রে ওই ধরনের মুদ্রাগুলির ব্যাপারে খুব কম সংখ্যক মানুষ আগ্রহ দেখান। তবে যে সমস্ত মুদ্রা সাধারণভাবে ব্যবহার করা যায় এবং তা দিয়ে বিনিয়োগও সম্ভব, সেই মুদ্রার কদর সবথেকে বেশি।

পরিবেশের কি সুবিধা?

ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরি করতে যাদের সবার আগে প্রয়োজন তারা হলেন মাইনার।  ব্যবহার করতে হয় কয়লা পুড়িয়ে তৈরি করা তাপবিদ্যুৎ। তাই সে দিক থেকে দেখতে গেলে পরিবেশের পক্ষে ক্রিপ্টোকারেন্সি খুব একটা লাভজনক নয়। এছাড়াও গরম সুপারকম্পিউটার ঠান্ডা করতেও প্রয়োজন হয় এয়ারকন্ডিশনের। এয়ারকন্ডিশন মেশিন থেকেও পরিবেশ দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছিল ২০১৮ সালে শুধুমাত্র বিটকয়েন তৈরি করার জন্যই সারা বছরে প্রয়োজন হয়েছিল ৪৫.৮ টেরাওয়াট বিদ্যুতের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফর্মেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ভবিষ্যতে বিটকয়েন তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে এই ক্রিপ্টোকারেন্সি যে পরিবেশের পক্ষে কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

More Articles