পরকীয়া করার জন্য অ্যাপ! ভারতে কেন হু হু করে বাড়ছে এই বিশেষ অ্যাপের চাহিদা!

Extramarital Dating App: পরকীয়াতে আগ্রহী পুরুষদের বেশিরভাগই বয়স ৩০-এর উপরে। আর মহিলারাদের বয়স ২৬-এর উপরে।

চিঠি-চাপাটির সময় শেষ। বাড়ির বাইরে ঘন ঘন সাইকেলের চেন পড়ে যাওয়ার মতো মধুর দুর্ঘটনাও আজকাল ঘটে না। বাসে এক ঝলক দেখতে পাওয়া লাবণ্যকে আজীবন খুঁজে মরার মতো একমুখী প্রেমের জমানা বিগত। এখন এই পাঁচতলা প্রেম পুরোটাই ডেটিং নামে জনপ্রিয়। প্রেমের স্থান-কাল-পাত্র-পাত্রী সবই বদলে বদলে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। অমুক সময়ে তমুক ঝিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে একে অপরের প্রিয় রঙ জিজ্ঞেস করার মতো ঢাকাঢাকি ব্যাপার নেই। ফেসবুক হবিতেই যাবতীয় বোঝাপড়া প্রকাশ্যে সারা হয়ে যায়। প্রেম থেকে যৌনতায় যেতেও খুব বেশি হলে সপ্তাহখানেক, ঘণ্টাখানেকও হয় চাহিদা ভেদে। মোদ্দা কথা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় প্রেমব্যবস্থা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। ডেটিং অ্যাপ তাই খুব সহজ সাধারণ হয়ে উঠেছে মহানগরীগুলিতে। কিন্তু প্রেম শুধু নয়, পরকীয়া করার জন্যও অ্যাপ আছে! একবার বিয়ে করে ফেলেছেন মানেই তো প্রেমের দোরে ছিটকিনি দেওয়া নয়। মানুষ স্বভাবতই বহুগামী। বিয়ে তাকে এক সম্পর্কে বাঁধে, সামাজিকতায় আটকায়। কিন্তু হালফিলে 'মাই লাইফ-মাই রুলজ' এসে সেসব বাঁধনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আটকে পড়া মানুষ বেশি ছটফট করেই। এই ছটফটানিকে বাজার সুলভ মূল্যে কিনে নেয়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য ডেটিং অ্যাপ খুলে ফেলে। এমনকী ভারতের মতো সামাজিকতায় বিশ্বাসী দেশেও সেই অ্যাপ বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি, ফ্রান্সের একটি এক্সট্রা ম্যারিটাল ডেটিং অ্যাপ 'গ্লিডেন' ঘোষণা করেছে যে বিশ্বব্যাপী ১০ মিলিয়ন মানুষ পরকীয়া করতে তাদের অ্যাপ ব্যবহার করছে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই মানুষদের মধ্যে ২ মিলিয়ন ব্যবহারকারীই ভারতের। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারতীয়দের মধ্যে এই অ্যাপের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার ১১ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, নতুন গ্রাহকদের সিংহভাগই মহানগরের বাসিন্দা (৬৬ শতাংশ)। বাকি ৩৪ শতাংশ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণির শহরের বাসিন্দা। ভারতের মতো দেশে পরকীয়া করতে অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে কেন?

আরও পড়ুন- এবার সমকামীদের জন্য ম্যাট্রিমনি অ্যাপ! ভারতের আইনে স্বীকৃতি মিলবে কবে?

ভারতের কি ঐতিহ্য বদলে যাচ্ছে তবে? ভারত এমন এক দেশ যেখানে বিয়েকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিয়ে না করলে জীবন বৃথা বা যাই হয়ে যাক বিয়ে একটা করতেই হবে জাতীয় মানসিকতা থেকে মানুষ বেরোতে পারেন না। পাশাপাশি, ডিভোর্স এখানে অত্যন্ত সমালোচিত। সেই ভারতেই পরকীয়া অ্যাপের গ্রাহকদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গ্লিডেনের ভারতীয় আধিকারিক সিবিল শিডেল জানাচ্ছেন, শুধু ২০২২ সালেই ১৮ শতাংশেরও বেশি নতুন গ্রাহক পেয়েছে অ্যাপটি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে গ্রাহক ছিল ১.৭ মিলিয়ন। বর্তমানে তা ২ মিলিয়নেরও বেশি।

এই অ্যাপটি বিশেষভাবে বিবাহিতদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। গ্লিডেনের মতো পরকীয়ার অ্যাপে ভারতীয়দের এত আগ্রহ প্রমাণ করে সমাজের একটা শ্রেণির কাছে সামাজিক ঐতিহ্যের চেয়েও প্রধান হয়ে উঠছে ব্যক্তিগত চাহিদা। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই অ্যাপে পরকীয়ার অনেকগুলিই সম্মতিমূলকও। অর্থাৎ সকলেই সবটা জানে। সংস্থাটি বলছে, গ্লিডেনের বেশিরভাগ ভারতীয় ব্যবহারকারীই উচ্চ আর্থ-সামাজিক পরিবেশের মানুষ।

পুরুষ এবং মহিলা দুই শ্রেণির গ্রাহকই পরকীয়াতে তুমুল আগ্রহী। ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা, পরামর্শদাতা, ব্যবস্থাপক, চিকিত্সকের পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক গৃহিণীও পরকীয়া অ্যাপে সক্রিয়! বয়সের হিসেব বলছে, পরকীয়াতে আগ্রহী পুরুষদের বেশিরভাগই বয়স ৩০-এর উপরে। আর মহিলাদের বয়স ২৬-এর উপরে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, অ্যাপটি মহিলাদের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত নিরাপত্তার দিকে নজর দিয়েছে। ২০২৩ সালের গোড়াতে এই অ্যাপের পুরুষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ। আর মহিলাদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ।

More Articles