বড় ঘোষণা! পিএম কিসান-এর সঙ্গে পেনশন পেতে হলে এই নিয়মগুলি মানতেই হবে কৃষকদের

এর আগে যে-সমস্ত কৃষকদের ২ হেক্টর পর্যন্ত জমি ছিল, তারাই এই প্রকল্পের সুবিধে পেতেন। কিন্তু, বর্তমানে ক্ষুদ্র জমির মালিকানাধীন কৃষকরাও এই প্রকল্পের সুবিধে গ্রহণ করতে পারেন।

ভারতের কৃষকদের আত্মনির্ভর করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিয়ে এসেছিলেন কিষান সম্মান নিধি যোজনা। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে চালু করে প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনাটি। এই যোজনার অধীনে সমস্ত জমিধারী কৃষকদের প্রতি বছর ছয় হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। এপ্রিল থেকে জুলাই, আগস্ট থেকে নভেম্বর এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে প্রতিটি পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে তিনটি কিস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। টাকা চলে যায় সরাসরি এই প্রকল্পের সুবিধেভোগী কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এর আগে যে-সমস্ত কৃষকদের ২ হেক্টর পর্যন্ত জমি ছিল, তারাই এই প্রকল্পের সুবিধে পেতেন। কিন্তু, বর্তমানে ক্ষুদ্র জমির মালিকানাধীন কৃষকরাও এই প্রকল্পের সুবিধে গ্রহণ করতে পারেন।

তবে এবার ভারতের যে সমস্ত কৃষক প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনার সুবিধা নিতেন, তাদের জন্য একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে ভারত সরকার। এই নতুন প্রকল্প অনুযায়ী, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ভারত সরকার প্রদান করবে বৃদ্ধ ব্যবস্থার একটি মাসিক পেনশন স্কিম। কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পরিচালিত এই বিশেষ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কিষান মান-ধন যোজনা। যে সমস্ত প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, তাঁদের জন্যই চালু করা হয়েছে এই যোজনা। লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং কেন্দ্রীয় কৃষি দফতরের যৌথ সহযোগিতায় এই বিশেষ প্রকল্পের সূচনা করেছে ভারত সরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই বিশেষ প্রকল্পে কী কী সুবিধে পেতে চলেছেন ভারতের কৃষকরা।

প্রধানমন্ত্রী কিষান মান-ধন যোজনা

যদি আপনারা প্রধানমন্ত্রী কিষান মান-ধন যোজনায় নিজের নাম নথিভুক্ত করেন, তাহলে ৬০ বছর পর আপনারা প্রত্যেক মাসে ৩০০০ টাকা করে পেনশন পেয়ে যাবেন। ভারতের ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকরা যাতে নিজের শেষ বয়সে আর্থিক অনটনের মধ্যে না পড়েন, তার জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে এই বিশেষ প্রকল্প। ১৮ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে যে সমস্ত কৃষক এই প্রকল্প গ্রহণ করবেন, তাঁদের জন্যই এই পেনশন স্কিম। তবে, এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যে কৃষক ৬০ বছর বয়সের পরে প্রতি মাসে পেনশন গ্রহণ করতে চাইবেন, তাঁকে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সেই প্রকল্পে জমা দিতে হবে, অনেকটা জীবনবিমার মতো। প্রতি মাসে ৫৫ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আপনাকে এই প্রকল্পে জমা দিতে হবে, এবং যত টাকা আপনি জমা দেবেন, সেই নিরিখে আপনি ৬০ বছর বয়সের পরে পেনশন পাবেন।

আরও পড়ুন: কোন পথে সঞ্চয় করলে নিশ্চিন্ত থাকবেন বয়সকালে?

কারা গ্রহণ করতে পারবেন এই প্রকল্প?

কেন্দ্রীয় কৃষি দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সি কৃষকরা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে সবার জন্য এই প্রকল্প নয়। এই প্রকল্পে আবেদন করার কিছু বিশেষ ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। যারা সেই সমস্ত ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে পারবেন না, তারা এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

কাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পটি থেকে?

প্রধানমন্ত্রী কিষান প্রকল্পের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী কিষান মান-ধন যোজনায় আবেদন করার জন্য আপনাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যারা সেই সমস্ত শর্ত পূরণ করতে পারবেন না, তাদের এই প্রকল্পে আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হবে না।

১. যে সমস্ত প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা কোনও এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, অথবা ন্যাশনাল পেনশন স্কিমের কোনও একটি পেনশন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, তারা প্রধানমন্ত্রী কিষান মান-ধন যোজনায় আবেদন করতে পারবেন না।

২. যে সমস্ত কৃষকরা ভারত সরকারের শ্রম এবং কর্মসংস্থান বিভাগ পরিচালিত প্রধানমন্ত্রী শ্রম যোগী মান-ধন যোজনা গ্রহণ করেছেন, তারাও এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

৩. সবশেষে, যে সমস্ত কৃষকরা একটু উচ্চবিত্ত অথবা উচ্চ-মধ্যবিত্ত, তারাও এই প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন না। পাশাপাশি যদি নিম্নলিখিত ক্রাইটেরিয়াগুলির মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক আপনার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলেও কিন্তু আপনি এই প্রকল্পের সুবিধে গ্রহণ করতে পারবেন না। ক্রাইটেরিয়াগুলি হলো,

ক. যদি আপনার কাছে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক জমি থাকে

খ. যদি আপনি বর্তমানে অথবা এর আগে কোনও সাংবিধানিক পদে থাকেন

গ. বর্তমান অথবা প্রাক্তন মন্ত্রী/রাজ্য মন্ত্রী/লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা এবং বিধান পরিষদের বর্তমান সদস্য/কোনও একটি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের বর্তমান অথবা প্রাক্তন মেয়র/কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান অথবা প্রাক্তন চেয়ারপারসন

ঘ. বর্তমান অথবা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অফিসার/রাজ্য সরকারি অফিসার/রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরগুলির অফিসার পদের কর্মী/সরকার-অধিকৃত কোনও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার লোকাল বডি কর্মী

ঙ. যাঁরা গত আর্থিক বছরে আয়কর প্রদান করেছেন

চ. ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট‍্যান্ট এবং আর্কিটেক্ট, যাদের কিনা পেশাদার কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং লাইসেন্স দুটোই রয়েছে।

কীভাবে হবে পেনশনের হিসেব?

ভারতের একটা বড় সংখ্যার কৃষকের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে এই বিশেষ প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে। যদি এই প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী আপনি যোগ্য হন এবং আপনি ৬০ বছর বয়সের পরে প্রতি মাসে ৩,০০০ হাজার টাকা করে পেনশন গ্রহণ করতে চান, তাহলে যে বয়সে আপনি নিজের নাম নথিভুক্ত করবেন, সেই অনুযায়ী আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। যদি আপনি নিজে গিয়ে প্রত্যেক মাসে টাকা জমা দিতে না চান, তাহলে আপনার প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনার টাকা থেকেও প্রতি মাসে সরাসরি আপনি টাকা ডেবিট করে দিতে পারেন। যদি আপনি ১৮ বছর বয়সে এই প্রকল্পে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন তাহলে আপনাকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে দিতে হবে ৫৫ টাকা করে। অন্যদিকে, যদি ২৯ বছর বয়সে এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেন, তাহলে প্রত্যেক মাসে আপনাকে দিতে হবে ১০০ টাকা করে।

কী কী সুবিধে দেওয়া হচ্ছে এই প্রকল্পে
১. ৬০ বয়সের পর থেকে কৃষকরা প্রতি মাসে পেয়ে যাবেন তিন হাজার টাকা করে পেনশন।

২. এই প্রকল্পের ন্যূনতম প্রিমিয়াম প্রতিমাসে ৫৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

৩. যদি পলিসি গ্রহণকারী কৃষকের মৃত্যু হয়, তাহলে তাঁর স্ত্রী এই পেনশনের টাকার ৫০ শতাংশ টাকা অর্থাৎ মাসে ১৫০০ টাকা করে পেনশন পেতে থাকবেন।

৪. যতটা টাকা কৃষক প্রিমিয়াম দেবেন, ঠিক ততটা টাকা ভারত সরকারের তরফ থেকেও প্রিমিয়াম দেওয়া হবে।

৫. যদি প্রকল্প চলাকালীন সময়ে কেউ এই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে যেতে চান, তাহলেও কোনওরকম টাকা কাটা হবে না, বরং তাঁর পুরো টাকাটা সাধারণ সুদ যোগ করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।

৬. রেজিস্ট্রেশনের জন্য কোনও অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না।

কীভাবে করবেন রেজিস্ট্রেশন?
১. পেনশন যোজনার সুবিধে নেওয়ার জন্য আপনাকে কমন সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

২. আধার কার্ড থাকাটা বাধ্যতামূলক। আধার কার্ড না থাকলে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব নয়।

৩. দুই কপি ফোটো এবং ব্যাঙ্কের একটি পাস বই আপনাকে জমা করতে হবে।

৪. রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার রেজিস্টার করা মোবাইল নম্বরে একটি বিশেষ কোড যাবে, সেটা আপনাকে দিতে হবে।

৫. রেজিস্ট্রেশনের সময় কিষান পেনশন ইউনিক নম্বর এবং পেনশন কার্ড তৈরি করে দেওয়া হবে।

More Articles