কোন পথে সঞ্চয় করলে নিশ্চিন্ত থাকবেন বয়সকালে?

শেষ জীবনে কাজ করতে মন চাইলেও শরীর সঙ্গ দেয় না। কাছের মানুষদের ওপর নির্ভর করেই কাটাতে হয় জীবনের শেষ দিনগুলো। মধ্যবয়সে অনেক অর্থ উপার্জন করলেও অনেকের বার্ধক্য কাটে অর্থাভাবে। অথচ একটু পরিকল্পনা করলেই কত সুন্দরভাবে কাটানো যায় শেষ জীবনটাও। নিশ্চিন্তে আনন্দের সঙ্গে কাটাতে পারবেন অবসরের দিনগুলি। অনেকের কাছে তো এই বিষয়টিও পরিষ্কার নয় যে, কোন স্কিমে টাকা রাখলে তা বেশি লাভজনক হবে। দীর্ঘদিন কোনও ঝুঁকি ছাড়া অর্থ সঞ্চয়ের জন্য অনেকেরই প্রথম পছন্দ পিপিএফ স্কিম। সরকারি, বেসরকারি সংস্থার কর্মী কিংবা ব্যবসায়ী সকলেই মোটা অঙ্কের টাকা ফেরৎ পেতে চাইলে এই স্কিমের আওতায় টাকা রাখতে পারেন। কিন্তু তার আগে জেনে নিন পিপিএফ কী, কীভাবে টাকা রাখবেন এই স্কিমে এবং এর সুবিধাগুলি কী কী?


পিপিএফ কী?
পিপিএফ কথাটির সম্পূর্ণ অর্থ হল পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড। ১৯৬৮ সালে জাতীয় সঞ্চয়ী নির্দেশে অল্প অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে লাভজনক টাকা ফেরতের এই স্কিমটি চালু করা হয়। সঠিকভাবে এই স্কিমের আওতায় টাকা রাখতে পারলে বেশ ভালো পরিমাণে অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব। তবে দীর্ঘমেয়াদি এই স্কিমে ন্যূনতম ১৫ বছর অর্থ রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পিপিএফ স্কিম টাকা জমালে কর ছাড়ের সুযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ওয়াও মোমো || গ্যারেজ থেকে শুরু, আজ কোটির ব্যবসা, অসাধ্যসান যে পথে

পিপিএফ প্ল্যানের সুবিধা
এই দীর্ঘমেয়াদি স্কিমের মূল সুবিধাগুলি হল:


১. কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রচারিত হওয়ায় পিপিএফ স্কিমে অর্থ সঞ্চয় একেবারেই নিরাপদ।


২. শুধুমাত্র নিরাপদ লগ্নি নয়, সঙ্গে আছে নিশ্চিত রিটার্নের ব্যবস্থা। ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে দেশের ব্যাঙ্কগুলোতে বার্ষিক ৪.৯% বা ৫% সুদের ব্যবস্থা রয়েছে। সেক্ষেত্রে শুনলে অবাক হবেন, পিপিএফ স্কিমে মাসিক সুদের হার ৭.১%।


৩. পিপিএফ-এর কর ছাড়ের সুযোগও রয়েছে, যা এই স্কিমকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। তাই যাঁরা মোটা অঙ্কের কর দেন প্রতি বছর, তাঁরা এই স্কিমে টাকা রাখতে পারেন।


৪. আমরা সকলেই জানি, দীর্ঘদিন অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ সম্পদ তৈরি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে পিপিএফ-এ অন্তত ১৫ বছরের প্ল্যান অত্যন্ত ভালো একটি বিকল্প।


৫. পিপিএফ বিশেষ আইনের দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ায় বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি কোনও লোন শোধ করতে ব্যর্থ হলে আপনার পিপিএফ স্কিমের টাকা ব্যাঙ্ক কখনওই বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না।


পিপিএফ-এর ইনকাম ট্যাক্স সুবিধাগুলি কী?
ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত যে সুবিধাগুলো আপনি পিপিএফ-এর মাধ্যমে পেতে পারেন, সেগুলি হল:


প্রথমত, পুরনো কর ব্যবস্থায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের সুবিধা ছিল। অর্থাৎ কারও আয় বার্ষিক ১৫ লক্ষ টাকা হলে তাঁকে কেবল ১৩.৫ লক্ষ টাকার ওপরেই সুদ দিতে হত। কিন্তু নতুন করে ব্যবস্থায় সে সুযোগ নেই। তবে এক্ষেত্রে সুদের হার এবং মোট অর্থের ওপর কোনওরকম ছাড় নেই। 

দ্বিতীয়ত, যাদের সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ লক্ষ টাকার বেশি, তাদের ১% কর দানের রীতি চালু আছে। তবে এক্ষেত্রে কোনও কর দিতে হয় না।


পিপিএফ স্কিমের জন্য কী কী দরকার?
পিপিএফ স্কিমের লগ্নির ক্ষেত্রে অবশ্যই অর্থ-লগ্নিকারীকে ভারতীয় হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সন্তানের জন্যও পিপিএফ স্কিমে টাকা রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে সে নিজেই এই প্ল্যান পরিচালনা করতে পারবে। এই স্কিমের আওতায় লোন দানের সুবিধাও রয়েছে। তবে শুধুমাত্র ৩ থেকে ৬ বছরের মধ্যেই লোন নিতে পারবেন । যেহেতু ৭ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে প্রয়োজনমতো অর্থ তুলে নিতে পারবেন, তাই সেসময় লোন প্রদান করা হয় না। তবে আপনার সন্তান ১৫ বছরের মধ্যেই যদি বিদেশে থাকতে শুরু করেন, তবে ৭ বছর পর প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করে টাকা তোলার সুবিধাও রয়েছে। এই স্কিমের আওতায় আপনি প্রতি বছর অন্তত ৫০০ টাকা থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমাতে পারেন।


পিপিএফ রিটার্নের পদ্ধতি
প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে ১৫ বছর অর্থ সঞ্চয়ের পর মোট অর্থ দাঁড়ায় ১.৮০ লক্ষ টাকা। সাথে ৭.১% সুদের হারে এই সময়ে মোট ১.৪৫ লক্ষ টাকা সুদ পেতে পারেন। ফলে মোট অর্থ দাঁড়ায় ৩.২৫ লক্ষ টাকা। ১৫ বছর পরেও যদি মাসিক কিস্তি-সহ পাঁচ বছরের জন্য টাকা রাখেন, সেক্ষেত্রে এই অর্থ বেড়ে হবে ৫.৩২ লক্ষ টাকা। দ্বিতীয়বার ফের পাঁচ বছরের জন্য এই টাকা রাখলে মোট অর্থের পরিমাণ হবে ৮.২৪ লক্ষ টাকা। এভাবে মোট ৩৫ বছর অর্থ জমা রাখলে প্রায় ১৮.১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন।


তাই এখনই এই স্কিমের আওতায় টাকা রাখতে শুরু করুন নিশ্চিত ও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে।

More Articles