মৃতের মাংস ভক্ষণ থেকে শিশুকে শূন্যে ছুঁড়ে দেওয়া! বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভট উপাচারগুলি জানুন

‘সত্যি সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ!’

শুধু কি দেশ! বলা যায়, কি বিচিত্র এই বিশ্ব আর এই বিশ্বের বুকে চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কত বিস্ময়কর লোকাচার। আজ সেরকমই কিছু অদ্ভুত সব লোকাচার নিয়ে কথা বলব, যা রীতিমত শিহরণ জাগিয়ে তুলবে আপনাদের মনে।

শিশুকে ছুঁড়ে ফেলা

প্রথমেই শুরু করা যাক, ভারতবর্ষকে দিয়ে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখনও চিকিৎসাবিজ্ঞান বিশেষ উন্নতি লাভ করেনি। দশ মাস দশ দিনের যুদ্ধ অতিক্রম করে যেসব শিশুরা এই পৃথিবীর মুখ দেখতে সক্ষম হত, তাদের বেশিরভাগই অতি অল্পদিনের মধ্যেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে গমন করত পরলোকে অথবা প্রসবকালীন সময়েই বিভিন্ন কারণে মৃত্যু ঘটত তাঁদের । এই লোকাচার অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ ফুটের উচ্চতায় অবস্থান করা মন্দিরের ছাদ থেকে সদ্যজাত শিশুদের ছুঁড়ে নীচে ফেলে দেওয়া হত। মন্দিরের নীচে বিছানার চাদর নিয়ে অবস্থান করত শিশুর পরিবারের লোকেরা। উপর থেকে ফেলে দেওয়া শিশুটিকে সেই চাদরের মাধ্যমে ধরে ফেলা হত। শোনা যায়, কোনো এক সাধুর আদেশেই প্রথম শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। শিশুদের সৌভাগ্য প্রাপ্তির জন্য বহু বছর ধরে এই লোকাচার চলতে থাকে মূলত মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক রাজ্যেকে কেন্দ্র করে। তবে রাজস্থান এবং গুজরাটেও এই অনুষ্ঠানের চল ছিল বলে শোনা যায়। ২০০৭ সালে এই লোকাচারটিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয় কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে এই উপাচারের প্রচলন ছিল বলে জানা গেছে। হিন্দু-মুসলিম, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকতেন।   

আরও পড়ুন-একে একে নিভিছে দেউটি, কেন বন্ধ হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ওয়েস্টল্যান্ড? 

 গেরেওয়াল ফেস্টিভ্যাল

এই উৎসব পুরুষতান্ত্রিক সমাজে থেকেও এক ভিন্ন রীতিনীতির কথা বলে। যে সমাজে প্রতিক্ষেত্রে কেবল নারীদেরকেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়, সেখানে ওয়াডবে নামক এক উপজাতির পুরুষেরা, এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে নারীদের সামনে নিজেদের প্রমাণ করেন। এই উৎসবে ওয়াডবে উপজাতির পুরুষেরা তাদের মনের মত করে সেজেগুজে, নৃত্য পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে নারী মনকে আকর্ষণ করে থাকে। এই উৎসবে পুরুষেরা ‘ইয়াকে’ বলে একটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং নাচের দক্ষতা, সুন্দর চেহারা ও সাজসজ্জার উপর ভিত্তি করে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়ে থাকে।

ফামাদিহানা 

মাদাগাস্কারের এই উৎসবটির সঙ্গে অনেকাংশেই মিল রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মা’নিনি উৎসবের। মৃত পূর্বপুরুষদের প্রতি, তাদের পরিবারের অগাধ ভালোবাসা থেকেই হয়তো এই উৎসবটির জন্ম। পরিবারের ভালোবাসার লোকগুলির সঙ্গে খানিক সময় ভাগ করে নেওয়াই  উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। বলা চলে, জীবিত এবং মৃত মানুষের পুনঃমিলনের একটি উৎসব হল এই ‘ফামাদিহানা’। এই অনুষ্ঠানের দিনটিতে স্থানীয় লোকেরা পরিবারের সঙ্গে ভাত এবং শুকরের মাংস, কখনও বা গরুর মাংস আহার করে থাকেন। অনেক সময় আবার অন্য লোকেদের নিমন্ত্রণও করা হয়ে থাকে যা ‘ভাবিরমেনকা’ নামে পরিচিত। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে। এই অনুষ্ঠানটির নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ নেই। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে একজন জ্যোতিষী দ্বারা একটি দিন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এবং সেই দিনেই উদযাপিত হয় ফামাদিহানা। মৃত মানুষদের সমাধি থেকে উত্তোলন করে পুনরায় তাদের আবার নতুন এবং পরিষ্কার কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় এই উৎসবের দিনগুলিতে। অনুষ্ঠানের প্রথম দিনটিকে বলা হয়, ‘ফিদিরানা’ বা ‘প্রবেশের দিন’ এবং দ্বিতীয় দিনটিকে বলা হয়, ‘ ফামোনোসোনা’ বা ‘দেহ মোরানো দিবস’।

শৌচালয়ের তালা বন্ধ রাখা

ভারতের অনেক জায়গায়তেই বিয়ের পরে বরের জুতো ছুরি যাওয়ার কাহিনি নেট মাধ্যমে বিশ্বের কমবেশি মানুষের কাছে বোধহয় পৌঁছে গেছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় বিয়ের পরে নবদম্পতিকে ঘিরে যে  অদ্ভুত লোকাচার প্রচলিত রয়েছে, তা বোধহয় এখনো বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা। টিডং সম্প্রদায়ের নববিবাহিত দম্পতিরা বিয়ের পর তিনদিন বাথরুম ব্যবহার করতে পারেন না। তারা বিশ্বাস করেন, যদি এই নিয়ম কেউ অমান্য করে তবে তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হবে না এমনকি ভবিষ্যতে তারা মৃত সন্তানের জন্ম দেবেন। এই কারণে নববিবাহিত দম্পতিদের রীতিমত তিনদিনের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়ে থাকে।

মৃতের দেহাবশেষ ভক্ষণ 

আমাজন অরণ্যে বসবাসকারী ইউনোমামি উপজাতির লোকেরা মনে করেন, মৃতব্যাক্তির দেহের কোন অংশ যদি এই পৃথিবীতে থেকে যায়, তবে তাদের আত্মা শান্তি পায় না। ভেনেজুয়েলা এবং ব্রাজিলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী এই মানুষেরা তাই কবর দেওয়ায় বিশ্বাস রাখেন না। শবদেহ দাহ করার শেষে অবশিষ্ট ছাই এবং হাড় দিয়ে একপ্রকারের স্যুপ বানিয়ে, তা ভক্ষণ করার মধ্যে দিয়ে পরিজনদের আত্মার মুক্তির এবং শান্তির কামনা করে থাকেন।   

 

তথ্যসূত্র –

  • ১. Indiatimes.com
  • ২. NYTimes
  • ৩. Edtimes
  • ৪. guardian
  • ৫. Theculturetrip

 

More Articles