রোগা হওয়ার সেরা ডায়েট, পুজোর কথা মনে রেখে শুরু করুন এখন থেকেই

ক্র্যাশ ডায়েট প্ল্যানে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকার, সেগুলো দেখে নিন।

আজকাল মানুষ নিজেকে রোগা দেখাতে কত কিছুই না করে! কঠোর ডায়েট মেনে খাবার খাওয়ার সঙ্গে অনেকে আবার বাজারে পাওয়া বিভিন্ন ওষুধও খান।তবে এসবের কারণে কিন্তু শরীরে দীর্ঘময়াদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খান না। যার ফলে শরীরে নানা রোগ দেখা দেয়। আবার দীর্ঘদিন ডায়েট মেনে খাবার খেলে চুল পড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়। এমনকী, মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্রেও গন্ডগোল দেখা দেয়।তাহলে কী করবেন? এক্ষেত্রে সবথেকে ভালো উপায় হলো, ক্র্যাশ ডায়েট মেনে চলা। অল্প সময়ে ওজন ঝরিয়ে ফেলার জন্য ক্র্যাশ ডায়েটের বিকল্প নেই। এই ডায়েট মেনে খাবার খেলে দ্রুত ওজন কমতে বাধ্য। তাই সামনে কোনও অনুষ্ঠান বা স্পেশাল ইভেন্ট থাকলে আজই শুরু করে দিন এই ডায়েট। তবে ক্র্যাশ ডায়েট প্ল্যানে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকার, সেগুলো দেখে নিন।

 

১. স্টার্চবিহীন সবজি খান বেশি করে

দীর্ঘ সময় ধরে ওজন কমানোর জন্য জীবনযাত্রায় স্থায়ী বদল আনা প্রয়োজন। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের হাতে অত সময়, ধৈর্য কোনওটাই থাকে না। ওজন কমাতে প্রথমেই ডায়েটে প্রচুর শাকসবজি রাখুন। শাকসবজিতে সব রকমের পুষ্টি উপাদান উপস্থিত থাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যালোরি নেই বললেই চলে। স্টার্চবিহীন সবজিতে জলের মাত্রা বেশি, তাই এরা শরীর হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।

 

সাধারণত স্টার্চযুক্ত সবজি, যেমন আলু এবং প্রসেস করা হোল গ্রেনস জাতীয় খাবার সীমিত মাত্রায় খাওয়ার কথা বলা হয়। সব পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর। যেহেতু কার্বোহাইড্রেট জলে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে, তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে যেতে বলা হয় ক্র্যাশ ডায়েটে। যে কোনও অনুষ্ঠানের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে ব্রকোলি, ফুলকপি, মাশরুম, পালং শাক, শসার মতো স্টার্চবিহীন খাবারগুলো খেতে থাকুন। শুধু ওজন ঝরাতে নয়, সবসময়ই খেতে পারেন এগুলি।

 

আরও পড়ুন: চোখের রোগের চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন! কোন অসম্ভব সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের দৌলতে?

 

২. নুন এড়িয়ে চলুন

তাড়াতাড়ি ওজন ঝরিয়ে রোগা দেখাতে আজই খাবার থেকে বাদ দিন নুন। নুনে উপস্থিতি সোডিয়াম দেহে অতিরিক্ত জল ধরে রাখে। ফলস্বরূপ দেহের অন্যান্য ওজন বৃদ্ধি পায়। প্যাকেটজাত খাবার ও প্রসেসড ফুডে অতিরিক্ত নুন থাকে, তাই এই খাবারগুলি খাওয়া বন্ধ করে দিন।

 

নুন ছাড়া খাবার মানেই যে কুখাদ্য, তা কিন্তু নয়। নুনের বদলে এমন কোনও মশলা, হার্বস ব্যবহার করুন, যা আপনার খাবারকে সুস্বাদু করে তুলবে। যেমন ধরুন, গ্রিল করা মাছে ধনেপাতা এবং জিরে গুঁড়ো, চিকেনের জন্য আদা, লেবুর রস এবং রোজমেরি ব্যবহার করতে পারেন। প্রথম প্রথম নুন ছাড়া খাবার খেতে সমস্যা হলেও ওজন কমাতে এইটুকু করাই যায়।

 

৩. খাবারের আগে প্রচুর জল খান

দ্রুত ওজন কমাতে দেহে অতিরিক্ত জলের ওজন কমাতে হবে। কিন্তু তাই বলে জল খাওয়া কমাবেন না। শরীর হাইড্রেটেড রাখা যে কোনও অবস্থাতেই অত্যন্ত জরুরি। তবে খাবার খাওয়ার আগে বেশ খানিকটা জল খেয়ে নিলে কিন্তু বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। আবার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল থাকলে তা খাবার হজম করতেও সাহায্য করে। তাই সবসময় নিজের সঙ্গে জলের বোতল রাখুন। একজন মানুষের সারাদিনে অন্তত ৮ গ্লাস জল খাওয়া উচিত। তবে ভুলেও সফট ড্রিংকস, চা, কফি বা জুসজাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন। জলের মধ্যে একটি লেবুর টুকরো ফেলে দিতে পারেন, এতে সতেজও অনুভব করবেন।

 

৪. গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন

দ্রুত ওজন কমাতে এবং তাৎক্ষণিক ফোলা ভাব হ্রাস করতে গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। সাধারণ সোডা বা ডায়েট সোডাতে সুগার ও সুগার অ্যালকোহল উপস্থিত থাকে এবং এগুলো কার্বনেটেড পানীয়। এই ধরনের পানীয়ের মধ্যে থাকা বুদবুদের কারণে পেট ফুলে উঠতে পারে।

 

যদিও প্রতিটা মানুষের হজমশক্তি আলাদা কিন্তু মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, ফুলকপি-জাতীয় খাবারগুলো এই সময় এড়িয়ে চলুন। চিকেন বা মাছ খেতে পারেন ক্র্যাশ ডায়েট পদ্ধতিতে। যদি আপনি নিরামিষ খেতে চান, তবে অ্যাসপারাগাস, সবুজ শাক, শসা খেতে পারেন।

 

৫. প্যাকেট জাতীয় খাবার খাবেন না

প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত নুন, সুগার এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। তাই দ্রুত ওজন কমানোর সময় এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। খাদ্যতালিকায় প্রসেস করা খাবার যেন না থাকে। স্টার্চবিহীন শাকসবজি, প্রোটিন, নুনের পরিবর্তে বিভিন্ন মশলা থাকুক খাদ্যতালিকায়। চিপস জাতীয় খাবারের বদলে প্রোটিনযুক্ত খাবার খান ওজন কমানোর সময়। যেমন ধরুন, সেদ্ধ করা গাজর এবং হাফ বয়েল ডিম সামান্য গোলমরিচ ছড়িয়ে খেয়ে নিন সন্ধ্যার টিফিন হিসেবে।আবার একটা আপেল, সঙ্গে অল্প পরিমাণে বাদামও খেতে পারেন টিফিনে। রাতের খাবারে সেদ্ধ করা ব্রকোলি, পালং শাক দিয়ে বানানো স্যালাড খেতে পারেন।

 

৬. পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করুন

দ্রুত ওজন কমানোর সময়ও খেয়াল রাখুন, যেন কোনওভাবেই খাবারে প্রোটিনের ঘাটতি না থাকে। ওজন কমানোর সময় যেহেতু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া যায় না, তাই প্রোটিনই শরীরকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, উচ্চ প্রোটিনসম্পন্ন সকালের জলখাবার শরীরকে সারাদিন চাঙ্গা রাখতে পারে।

 

ওজন হ্রাসের সময় পেশির ভর বজায় রাখতেও প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালোরির পরিমাণ কমালে দ্রুত ওজন কমবে ঠিকই, কিন্তু এতে পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে দেহ প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করতে মেটাবলিজমের হার কমিয়ে আনে। তাই ক্র্যাশ ডায়েট দীর্ঘ সময়ের জন্য মেনে চলতে বারণ করেন চিকিৎসকেরা।

 

কিন্তু সঠিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে ওজন কমানোর সময়ও তা দেহের পেশি ও মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। চিকেন ব্রেস্ট, মাছ, সি ফুড, টার্কিজাতীয় পদ রাখুন ওজন কমাতে।

 

৭. পর্যাপ্ত ঘুম দরকার

সারাদিনের ধকলের পর নতুন উদ্যমে পরের দিন কাজ শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দরকার।চেষ্টা করুন প্রতি রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা ঘুমোনোর। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোনো এবং ঘুম থেকে ওঠাও দরকার। দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া জীবনের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে।

 

৮. সন্ধেবেলা হালকা খাবার খান

গবেষণা বলছে, দিনের শেষের দিকে অর্থাৎ সন্ধেবেলা বা রাতের দিকে বেশি পরিমাণে খাবার খেলে ওজন কমতে অনেক বেশি সময় লাগে। অপরদিকে ভারী প্রাতঃরাশ এবং পরবর্তী সময়ে অল্প পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের ফলে দেহের ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।

 

অনেকেই সন্ধেবেলায় ভারী টিফিন খেয়ে রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে রাতের বেলা খিদের চোটে ফ্রিজে যা থাকে, তাই খেতে শুরু করেন। এতে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি দেহে অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরিও জমা হতে থাকে। তাই সন্ধেবেলায় ভারী কোনও খাবার খেতে মন চাইলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যি কি এতটা খিদে পেয়েছে? না কি আপনি স্বভাববশত কিংবা বোরডম কাটাতে খাবার খাচ্ছেন। নিজেই শাসন করুন নিজেকে।

 

৯. হিট (HIIT) জিম করুন

হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং ( HIIT) দেহের পেশি গঠনে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে দৌড় বা জগিং-এর কোনও বিকল্প নেই। ৩০ সেকেন্ড দৌড় বা জগিং করার পর এক থেকে দু'মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ফের শুরু করুন। এই ধরনের এক্সারসাইজ শরীরের মেদ ঝরিয়ে মেটাবলিজম রেটও বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কিন্তু ভুলেও ওয়েট ট্রেনিং করতে যাবেন না এতে কিন্তু ফল হবে উল্টো।

 

১০. ব্যাকআপ ভাবনাও রাখুন

হঠাৎ করে একরকম ডায়েট থেকে ক্র‍্যাশ ডায়েট প্ল্যান মেনে খাবার খেতে থাকলে ওজনের ফারাক নিজেই বুঝতে পারবেন। এর মূল কারণ, ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে শরীরে অতিরিক্ত জলের ওজন কমে যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই লক্ষণীয় পরিমাণে ওজন কমলেও অনেকেই দুর্বল, ক্লান্ত এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এই ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ভেবে দেখুন। শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা সম্পর্কে সচেতন হন।

 

তবে স্পেশাল অনুষ্ঠানে বেনিয়ম তো হবেই। কিন্তু তা কেটে যেতেই নিজের জীবনযাত্রায় স্থায়ী বদল এনে ওজন কমাতে সচেষ্ট হন। দরকার পড়লে চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ নিয়ে তবেই ডায়েট প্ল্যানগুলি ফলো করুন।

More Articles