গ্রেটার অবমাননা, ইজরায়েলের স্বরূপ দেখল গোটা বিশ্ব

Greta Thunberg: ইতালির সাংবাদিক লোরেঞ্জো আগোস্তিনো জানান, “গ্রেটা থানবার্গ মাত্র ২২ বছরের এক সাহসী মেয়ে। তাঁকে অপমান করা হয়েছে, ইজরায়েলের পতাকায় জড়িয়ে ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।”

গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করেছিল ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহর। অংশগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বের নানা দেশের ৪৫০ জনেরও বেশি মানবাধিকার কর্মী। কিন্তু গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ৪০টি নৌকা ও নৌবহরে থাকা কর্মীদের আটক করে ইজরায়েলি বাহিনী। এবং জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থানবার্গকে অকথ্য নির্যাতন করার অভিযোগ তুলেছেন ত্রাণবাহী নৌবহরে থাকা কর্মীরা। ইজরায়েলি বাহিনী কী ভাবে গাজায় ত্রাণ দিতে যাওয়া কর্মীদের নির্যাতন করছে, সেই বীভৎসতা উঠে এসেছে তাঁদের কথায়।

শনিবার বিভিন্ন দেশের ১৩৭ জন মানবাধিকার কর্মী তুরস্কের ইস্তানবুলে পৌঁছান, যাদের মধ্যে ছিলেন ৩৬ জন তুর্কি নাগরিক। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডান-সহ বিভিন্ন দেশের কর্মীরা ছিলেন।

‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-য় অংশগ্রহণকারী, তুরস্কের সাংবাদিক এরসিন চেলিক এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি নিজের চোখে দেখেছেন কী ভাবে ইজরায়েলি বাহিনী গ্রেটা থানবার্গকে মাটিতে টেনে নিয়ে গিয়ে জোর করে ইজরায়েলের পতাকায় চুম্বন করতে বাধ্য করেছে।

আরও পড়ুন- ট্রাম্পের চাপ, হামাসের শর্ত : গাজায় শান্তি ফিরবে?

ইতালির সাংবাদিক লোরেঞ্জো আগোস্তিনো জানান, “গ্রেটা থানবার্গ মাত্র ২২ বছরের এক সাহসী মেয়ে। তাঁকে অপমান করা হয়েছে, ইজরায়েলের পতাকায় জড়িয়ে ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে।”

তুর্কি টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেন, “আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তিন দিন আমাদের খেতে দেওয়া হয়নি, জল দেওয়া হয়নি— বাধ্য হয়ে টয়লেটের জল খেতে হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে আমরা যেন পুড়ছিলাম।” তিনি আরও বলেন, এই অভিজ্ঞতা তাঁকে “গাজার মানুষের কষ্ট আরও কাছ থেকে বুঝতে সাহায্য করেছে।”

মালয়েশিয়ার হাজওয়ানি হেলমি ও আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী উইন্ডফিল্ড বিবার একই কথা বলেছেন। তাঁরা জানান, থানবার্গকে ধাক্কা দিয়ে পতাকায় মোড়ানো অবস্থায় ঘোরানো হয়েছিল। হেলমি বলেন, “এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছিল। আমাদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। খাবার, বিশুদ্ধ জল, ওষুধ কিছুই দেওয়া হয়নি।” বিবার আরও জানান, থানবার্গের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করা হয়েছিল এবং তাঁকে ‘প্রচারের হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, “ওকে এক ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ঠিক তখনই ডানপন্থী নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সেখানে ঢোকেন।”

ইজরায়েলি বাহিনী দ্বারা আটক হওয়া ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’-র আরেক কর্মী আইসিন কান্তোগলু জানান, আটক ঘরের দেওয়ালে রক্তের দাগ ও আগের বন্দিদের লেখা বার্তায় লেখা— “আমরা দেখেছি মায়েরা তাঁদের সন্তানের নাম দেওয়ালে লিখে রেখেছেন। আমরা বুঝতে পেরেছি, ফিলিস্তিনিরা কী সহ্য করেন।”

ইতালির ২৬ জন নাগরিককে দেশে ফেরানো হয়েছে, তবে আরও ১৫ জন এখনো ইজরায়েলে আটক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি। 

আরও পড়ুন- প্রলয় আসছে, দায়ী আপনি, রাষ্ট্রনেতার চোখে চোখ রেখে বলে যান গ্রেটা

ওই নৌবহরে ছিলেন ইতালির সংসদ সদস্য আরতুরো স্কোত্তো। তাঁর কথায়, “নৌবহরের সবাই আইন মেনে কাজ করছিলেন। যারা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে, তারাই আসলে বেআইনি কাজ করেছে।”

ইজরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা আদালাহ জানিয়েছে, আটক কর্মীদের ঘন্টার পর ঘন্টা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়, ওষুধ দেওয়া হয়নি, আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগও দেওয়া হয়নি।

তবে ইজরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে দাবি করেছে। এক মুখপাত্র বলেছেন, “সব বন্দিদের যথাযথভাবে জল, খাবার ও বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের সব আইনি অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।”

সমালোচকদের দাবি, গ্রেটা থানবার্গ যেহেতু সুমুদে থাকা অন্যান্য কর্মীদের তুলনায় বেশি পরিচিত মুখ। তাই তার উপর পরিকল্পিতভাবেই বেশি নির্যাতন করা হয়েছে। যাতে তাঁকে দেখে আর কেউ গাজাকে সাহায্য করার দুঃসাহস না দেখায়। ত্রাণবাহী নৌবহর ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’-য় এই হামলা আবারও প্রমাণ করল যে ইজরায়েল বেআইনিভাবে গাজার ২৩ লাখ মানুষের জীবনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

প্রসঙ্গত, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এই নৌবহরটি অগাস্টের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। যার উদ্দেশ্য ছিল, ইজরায়েলি সামুদ্রিক অবরোধ ভেঙে গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া।

More Articles