ট্রাম্পের চাপ, হামাসের শর্ত : গাজায় শান্তি ফিরবে?
Trump Peace Plan & Hamas Response: হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় আটক সব ইজরায়েলি বন্দিকে, জীবিত ও মৃত উভয়কেই, মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে, হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনার অন্যান্য দিক নিয়ে আরও আলোচনা চায়।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে গাজার কয়েক লক্ষ মানুষ। আশা নিরাশার দোলাচলে যখন দুলছে গোটা প্যালেস্টাইন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক সেই সময় ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা সামনে আনলেন। তাঁর যুক্তি এই পরিকল্পনাই গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আনার একমাত্র পথ। হামাসও ইতোমধ্যেই আংশিকভাবে সম্মত হয়েছে ট্রাম্পের প্রস্তাবনায়। পাশাপাশি ইজরায়েলকে বলা হয়েছে অবিলম্বে হামলা থামাতে হবে। এ হেন টানাপোড়েনের মধ্যে প্রশ্ন একটাই, গাজায় কি তবে শান্তি ফিরবে?
ট্রাম্পের প্রস্তাবনার মূল বিষয়বস্তু
•ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, গাজার প্রশাসন পরিবর্তন এবং হামাসের অস্ত্রত্যাগ অন্তর্ভুক্ত আছে।
•এই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গাজাকে একটি টেকনোক্র্যাটিক (technocratic), অ-রাজনৈতিক পরিষদ দ্বারা চালানো হবে, যেখানে হামাস কোনো শাসন ভূমিকা রাখবে না।
•যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে ইজরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে এবং বোর্ড অফ পিস (Board of Peace) নামে একটি আন্তর্জাতিক তত্বাবধান বোর্ড থাকবে, যেখানে ট্রাম্প ও অন্যান্য নেতারা দায়িত্বে থাকবেন।
•৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দিরা ফেরত দেওয়া হবে। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে।
তবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় হল— পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে শাসন ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে, অর্থাৎ তারা গাজার পরিচালনায় আর থাকবে না।
আরও পড়ুন
১৯৬৭ থেকে ২০২৫! যেভাবে গাজায় বারবার নিশানা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের
হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় আটক সব ইজরায়েলি বন্দিকে, জীবিত ও মৃত উভয়কেই, মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে, হামাস ট্রাম্পের পরিকল্পনার অন্যান্য দিক নিয়ে আরও আলোচনা চায়। বিশেষ করে, গাজায় একটি প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব তারা মেনে নিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু হামাসের অস্ত্রবিহীন হওয়ার বিষয়টি একটি জাতীয় ফোরামে আলোচনা করতে চায়। অর্থাৎ, হামাস এখনও এই পরিকল্পনায় পুরোপুরি রাজি হয়নি।
তবে ট্রাম্প হামাসের এই প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, "হামাস স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।" তিনি ইজরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে বন্দিদের মুক্তি সম্ভব হয়।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এটি ইজরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ করবে। তিনি সতর্ক করে আরও বলেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বা তা বাস্তবায়নে বাধা দেয়, তাহলে ইজরায়েল এককভাবে পদক্ষেপ নেবে। যদিও এখনও গাজার কিছু অংশে সামরিক হামলা ও বিমান আক্রমণ চলছেই।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিকল্পনাটি ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমত্ব বিষয় খুব কম কথা বলেছে।
উল্লেখ্য, শেষমেষ যুদ্ধবিরতি শুরু হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। তবে মানবিক সহায়তা বাড়তে পারে। এর ফলে চিকিৎসা, খাবার, থাকার জায়গা বাড়বে। বন্দি ও মৃতদেহ বিনিময়ও অনেক পরিবারকে স্বস্তি দেবে। গাজা পুনর্গঠনের সুযোগ পাবে।
আরও পড়ুন
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?
তবে হামাসেরও কিছু শর্ত রয়েছে, যা এখনও আলোচনার বিষয়। গাজায় একটি স্বাধীন প্রশাসন গঠনের বিষয়টি এবং হামাসের অস্ত্রসমর্পণ করার শর্তগুলি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এই বিষয়গুলি সমাধান না হলে, সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। গাজার প্রশাসনকে কার হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়েও মতবৈষম্য রয়েছে। ইজরায়েলের সত্যিই সেনা প্রত্যাহার করবে কি না, তাতেও সন্দেহ আছে। অন্যদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনাটিও মূলত গাজাকে কেন্দ্র করে— পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম সংক্রান্ত বিষয়বস্তু প্রায় নেই, যা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কম সময়সীমার মধ্যে ও চাপের পরিস্থিতিতে তাড়াহুড়ো করে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চাইলে বিরোধও সৃষ্টি হতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি— যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, গাজার প্রশাসনিক রূপান্তর, অনেক মানুষের জন্য আশার আলো। কিন্তু এটি খুব জটিল ও সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রয়াস। গাজায় শান্তি আসবে কি না, তা নির্ভর করবে নির্ধারিত শর্তের বাস্তবায়ন, হামাস, ইজরায়েল ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর আন্তঃসম্পর্কের উপর। তবে বিশ্লেষকরা এও বলছেন, চাপ দিয়ে শান্তি আনা যায় না— শান্তি তখনই ফিরবে, যখন অংশগ্রহণ, স্বীকৃতি ও সমঝোতা থাকবে। গাজায় যুদ্ধের অবসান এবং স্থায়ী শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে সমর্থনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের নতুন গাজা পরিকল্পনা ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে মধ্যপ্রাচ্য। কেউ বলছেন এটি যুদ্ধ থামানোর সুযোগ, কেউ বলছেন— এ কেবল রাজনৈতিক চাপের খেলা। একদিকে হামাসের শর্ত, অন্যদিকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি— সব মিলিয়ে গাজায় শান্তির পথে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি। যদিও কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তবে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে এই আলোচনার ফলস্বরূপ গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

Whatsapp
