মাথাপিছু খরচ দশ হাজারও নয়! পুজোয় বেড়ানো আর তীর্থ একসঙ্গে সারতে যেতেই হবে এই রাজ্যে

পুজোয় বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যদি তীর্থভ্রমণে যেতে চান, তাহলে কোথায় যাবেন?

অতিমারীর কোপে বেড়ানো বন্ধ ছিল বহুদিন। বাড়িতে বসে প্রাণ ওষ্ঠাগত। যদিও বা ছুটি মিলেছে, তা কেটেছে বাঙালির 'দীপুদা'-র কাছেই; অর্থাৎ দীঘা, পুরী কিংবা দার্জিলিংয়ে। কিন্তু এবার মনটা একটু বেশি ছটফট করছে। তবে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যদি তীর্থভ্রমণে যেতে চান, তাহলে কোথায় যাবেন? সেই হদিশ দিতেই এই লেখা। গুজরা কিংবা অযোধ্যা হয়ে উঠতে পারে আপনার পুজোর গন্তব্য। এককথায় গুজরাতের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানে যেমন রয়েছে উদ্যান, তেমন এখানকার মন্দিরগুলোও ধরে রেখেছে দেশের শিল্পকলা ও ঐতিহ্যকে।

অন্যদিকে, অযোধ্যা হলো বিশ্বের অন্যতম পৌরাণিক তীর্থক্ষেত্র। রামায়ণ অনুযায়ী এই শহরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্য। রাজনৈতিক কারণে 'রামচন্দ্রের জন্মস্থান' হিসেবে অযোধ্যা জগৎখ্যাত। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই শহরের আনাচকানাচে রয়েছে পুরনো মন্দির, বিভিন্ন রকমের কারুকার্য। প্রতি বছর বহু পর্যটক দেশ-বিদেশ থেকে এখানে এসে ভিড় করেন, উপভোগ করেন পৌরাণিক শহরের মাহাত্ম্যকে।

একঝলকে গুজরাতের মন্দিরগুলির বর্ণনা

সোমনাথ মন্দির, সোমনাথ
এটি গুজরাতের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে তীর্থ করতে আসেন এখানে। এটি মূলত শিবের মন্দির। ভারতে যে ১২টি শিবের জ্যোতির্লিঙ্গের মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সোমনাথ মন্দির। এর বিশাল স্থাপত্য ও কারুকার্য ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের ভীষণই আকর্ষণ করে। বর্তমানে যে মন্দিরে দর্শনার্থীরা আসেন, সেটা তৈরি হয় ১৯৫০ সালে।

আরও পড়ুন: নদীর অতলে তলিয়ে গেছে একের পর এক মন্দির, পুরুলিয়ার যে ইতিহাস চলে গেছে আড়ালে

সূর্যমন্দির, মোধেরা
গুজরাতের অন্যতম চমকপ্রদ মন্দির হলো মোধেরার সূর্যমন্দির। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো, এটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যে, সূর্যের রশ্মি গিয়ে সরাসরি মন্দিরের সূর্যচক্রের ওপর পড়ে। শোলাঙ্কি রাজ্যের রাজা ভীমদেব একাদশ শতাব্দীতে এই মন্দিরটি বানান। আমেদাবাদ থেকে ১০৬ কিমি দূরে পাহাড়ের কোলে রয়েছে এই মন্দিরটি। এই মন্দির পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রিয় জায়গা।

রুক্মিনী মন্দির, দ্বারকা
দ্বারকাতে গেলে অবশ্যই রুক্মিনী মন্দির দেখবেন। এই মন্দিরটি শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী রুক্মিনীর উদ্দেশ‍্যে বানানো হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে এই মন্দির বানানো হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

দ্বারকাধিশ মন্দির, দ্বারকা
দ্বারকার এই মন্দিরটা জগৎ মন্দির নামেই পরিচিত। এটি অন্যতম ধর্মীয় কেন্দ্র। বিখ্যাত চারধাম যাত্রার অন্যতম ধাম হলো এটি। এই মন্দিরকেই স্বর্গের দ্বার বলা হয়। অনেকেই একে মোক্ষদ্বারও বলেন। রেকর্ড অনুসারে, মন্দিরটি ২৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো।

এ তো গেল একনজরে গুজরাতের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর কথা। এবার দেখা যাক, অযোধ্যার বিখ্যাত মন্দিরগুলোকে। এই মন্দিরগুলোর যেমন ধর্মীয় আবেগ রয়েছে, তেমনই রয়েছে তার স্থাপত্য ও অতিসূক্ষ্ম কারুকার্য, যা অনেক বেশি করে হৃদয় স্পর্শ করে।

অযোধ্যার বিখ্যাত মন্দিরগুলি

হনুমান গড়ি
এটা অযোধ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। অযোধ্যায় এসে সবার প্রথমে তীর্থযাত্রীরা এই মন্দিরেরই দর্শন করেন। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, অনেকেই বিশ্বাস করেন যে রামের সঙ্গে হনুমানও এখানে বসবাস শুরু করেন এই শহরকে রক্ষা করার জন্য। তারপরে এখানে এই মন্দির বানানো হয়, মন্দিরে শিশু হনুমান তাঁর মা অঞ্জনীর কোলে বসে রয়েছে। ৭৬টা সিঁড়ি পেরিয়ে আসার পরেই এই মন্দিরের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায়।

দশরথ মহল
হনুমান গড়ির খুব কাছেই রয়েছে দশরথ মহল। রামচন্দ্রের বাবা ও অযোধ্যার রাজা দশরথ। এই রাজপ্রাসাদ ভীষণই সুন্দর ও রঙিন। বিভিন্ন স্থাপত্য ও কারুকার্যের নির্দশন পাওয়া যায় এখানে।

কনক ভবন
অযোধ্যার আরও একটি অন্যতম মন্দির হলো কনক ভবন। কথিত আছে, কৈকেয়ী এই প্রাসাদটি রামচন্দ্রর বিয়ের পর সীতাকে উপহার দিয়েছিলেন। রাম-সীতার ব্যক্তিগত বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই প্রাসাদটি।

অযোধ্যার আরও বিশেষ একটি মন্দির
অযোধ্যাতে একটি ছোট মন্দির রয়েছে, যার নাম 'সীতা কি রসোই' (সীতার রান্নাঘর), যা মূলত সোনার পাত্র দিয়ে তৈরি প্রতীকী রান্নাঘর। 'সীতা কি রসোই' থেকে, সরযূ নদীর ঘাটে পৌঁছতে আধঘণ্টা হাঁটতে হবে। এখানেই রয়েছে স্বর্গদ্বার ওরফে রমা ঘাট এমন এক স্থান, যেখানে বিশ্বাস করা হয় যে, পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পরে রামকে শেষ কবর দেওয়া হয়েছিল। নাগেশ্বরনাথ মন্দিরটি রাম-সীতার পুত্র কুশের তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। সরযূর তীরে সন্ধ্যা-আরতি অবশ্যই একটি দেখার মতো অনুষ্ঠান। এছাড়াও, নদীর তীরে নৌকাবিহারও উপভোগ করতে ভুলবেন না।

More Articles