আগুন দর পেট্রলের, তেলের বিকল্প হিসেবে জল ব্যবহার করে চলবে চার চাকা?

তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। কলকাতা শহরে দশ দিন আগেও  পেট্রোলের দাম ছিলো ১১১.০৩ টাকা, আর এখন সেই দামই ১১৫.১২ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছিল গতকাল পর্যন্ত। এদিকে ডিজে়লের দাম ৯৬.২২ টাকা ছিলো পয়লা এপ্রিল, দশ দিনেই ৯৯.৮৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে দৈনন্দিন জিনিদের দাম, খাবার এখন অগ্নিমূল্য।

তাহলে আমাদের কি এবার অন্তত সময় আসেনি পেট্রোল বা ডিজে়লের বিকল্প দিসেবে অন্য কোনো জ্বালানির কথা ভাববার? অন্তত নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, বা মধ্যবিত্তের স্বার্থে? বিকল্প চিন্তার কথা বললে প্রথমেই আসে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের কথা। পুনে, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর ছাড়িয়েও, বৈদ্যুতিক বাসগুলির সংখ্যা মায় কলকাতাতেও বাড়ছে। সমস্যা হল সেই যানগুলোর জন্যে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন নেই। তার থেকেও বড় কথা, বাসগুলির সংখ্যা বাড়লেও, বিদ্যুৎচালিত ব্যক্তিগত গাড়ি এ শহরে চোখে পড়ে না, চোখে পড়ে না বিদ্যুৎচালিত অটো বা ট্যাক্সি। চললেও ঘুরেফিরে সেই চার্জিং স্টেশনের অভাব ঘটবে। তার থেকেও বড় কথা বিদ্যুৎ সরবরাহেও  টান পড়ার বিপুল সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। তাহলে উপায়?

বলব, জলের দ্বারা চালিত গাড়ির কথা। কিন্তু এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, জল-চালিত গাড়ি চলার জন্যে জন্যে আদতে যে শক্তি লাগে, তা কিন্তু জল থেকে আসে না। তা আসলে আসে হাইড্রোজেন থেকে। তাহলে জল-চালিত গাড়ি বা ওয়াটার-পাওয়ার্ড কার কেন বলা হয়? এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে জল থেকে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করা হয়। ইলেক্ট্রোলাইসিস শব্দটির তর্জমা করলে দেখা যাবে, ইলেক্ট্রিক অর্থাৎ বিদ্যুতের মাধ্যমে জলের অণুগুলিকে ভেঙে ফেলা। আর এই হাইড্রোজেনই গাড়ি চালানোর জন্যে শক্তির মূল উৎস।

আরও পড়ুন-আমার গ্রামবাংলার গল্প পড়ে বিদেশি পাঠকরা মুগ্ধ: অমর মিত্র

তাহলে সেই তো ঘুরে ফিরে বিদ্যুতের ব্যবহার করতে হচ্ছে? হ্যাঁ, ঠিক তাই। শুধু এখানেই শেষ নয়, যে পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি দরকার হয় কেবল ইলেক্ট্রোলাইসিসের জন্যে, গাড়ি কিন্তু তত দ্রুত ছোটে না।

আচ্ছা যদি এমন করা যায়, যদি সরাসরি হাইড্রোজেন দিয়েই গাড়িটা চালানো হয়। ব্যপারটা তাতে অনেক সহজ হয় না কি? কিছু গবেষক কিন্তু তাই-ই করছেন। হাইড্রোজেন গ্যাস দিয়েও চলবে গাড়ি? নাহ, কোনো গাঁজাখুরি গল্প নয়। আয়নিত হাইড্রোজেন ব্যবহার করে গাড়ি চালানো যাবে, এমন গাড়িও নির্মান করছেন বেশ কিছু গবেষক। এমনকী এমন কিছু গাড়িও তৈরি করা হচ্ছে যেগুলি জল এবং গ্যাসোলিন দুই দিয়েই চলবে। এক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হলেও, গ্যাসোলিন থাকার কারণে খুব বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োগের দরকার পড়বে না বলেই আশা করা যায়।

তবে গ্যাসোলিন ছাড়াও, কেবল হাইড্রোজেন দিয়ে গাড়ি চালানোও সম্ভব। বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বা পাওয়ার কারের ক্ষেত্রেও সরাসরি আয়নিত হাইড্রোজেন ব্যবহার করা যেতে পারে, এমনই দাবী গবেষকদের। তবে সেক্ষেত্রে আশঙ্কা থাকছে তেজষ্ক্রিয় হাইড্রোজেন অনু তৈরি হওয়ার।

খুব সম্প্রতি ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন গ্যাস-ভিত্তিক অত্যাধুনিক একটি গাড়ি তৈরি করেছে টয়োটা কিরলোস্কর মোটর প্রাইভেট লিমিটেড। ইন্টারন্যাশানাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজির  (আই.সি.এ.টি) সাথে তার জন্যে গাঁটছড়াও বেঁধেছে। গত মার্চেই এর উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রিয় পরিবহণ মন্ত্রী। তবে আপাতত এটি পাইলট প্রজেক্ট স্তরেই সীমাবদ্ধ। এবং পুরোপুরি হাইড্রোজেন নয়, বিদ্যুতের সাহায্যও লাগবে। আশার বিষয় হল, মাত্র পাঁচ মিনিট চার্জেই ৬৫০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে পারবে এই হাইড্রোজেন চালিত গাড়ি।

২০২১ সাল থেকে টয়োটা মিরাই হাইড্রোজেন-চালিত  গাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে একদম জনসাধারণের জন্যে। এবং ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী এই সংস্থার নির্মিত হাইড্রোজেন চালিত গাড়ির সংখ্যা জাপানে প্রায় চার হাজার। যদিও সেই সংখ্যা কম। কিন্তু হাইড্রোজেন দিয়ে গাড়ি চালানো অসম্ভব নয়। তবে প্রতি একশো কিলোমিটার দূরত্ব যেতে এর খরচ খুব কম নয়। কিন্তু বড় বাজারের স্বার্থে গণহারে উৎপাদন শুরু হলে আসা করা যায় পরিবহণ খরচ কমবে। অন্য দিকে পেট্রল নির্ভরতাও কমবে।

যেখানে আকাশছোঁয়া দাম পেট্রল বা ডিজে়লের, সেখানে দাঁড়িয়ে বর্তমানে কিন্তু আশার আলো দেখাচ্ছে হাইড্রোজেন চালিত গাড়ি।

More Articles