আপনি আকাশে, নিচে পাহাড়-সমুদ্র || অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসলে এই জায়গাগুলোতে যেতেই হবে আপনাকে

চার বছর হল অভিষেক একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। সপ্তাহে ছয়দিন অফিস যেতে হয়, কাজের চাপ মারাত্মক। সারা সপ্তাহ অফিস করে রবিবার তার আর কোনও কিছু করার ক্ষমতা থাকেনা, কারণ রোজ প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার যাতায়াত, তার ওপর অফিসের কাজ। কিন্তু এই জীবন সে চায়নি। ছোটবেলা থেকে চুটিয়ে এনসিসি করা, খেলাধুলো করা অভিষেকের একটাই নেশা ছিল। অ্যাড্রিনালিনের, রোমাঞ্চের, ঝুঁকির। শহরের এই দূষিত বাতাস, কংক্রিটের জঙ্গল, একঘেয়ে জীবন তার কাছে অসহ্য। গত বছর পরিবারকে নিয়ে দার্জিলিং গিয়েছিল বটে, কিন্তু হোটেলে থেকে, গাড়িতে গাড়িতে কিছু বাছাই করা পর্যটন কেন্দ্র দেখে তার একেবারেই মন ভরেনি। এই বছর ঠিকই করে নিয়েছে, সে এমনভাবে ঘুরবে, যাতে তার অ্যাডভেঞ্চার করার শখ পুরণ হয়। এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি কোথায় যাবে। একটা তালিকা বানিয়েছে, আর সেটা আমাদের হাতে এসেছে। নিচে রইল আমাদের দেশের সেই বারোটি বিখ্যাত জায়গার তালিকা। তবে এই তালিকায় উত্তরবঙ্গের এবং সিকিমের অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের জায়গাগুলো রাখা হয়নি।

ওয়াইট ওয়াটার র‌্যাফটিং, ডানডেলি, কর্নাটক

ডানডেলির কালী নদী এমনিতেই পর্যটকদের কাছে তার সৌন্দর্যের জন্য খুব আকর্ষণীয়। সেই সঙ্গে নদীর গতি ও জলের প্রবাহ র‌্যাফটিংয়ের জন্য আদর্শ। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এর জন্য আদর্শ।

কায়াকিং, পালোলেম, গোয়া

গোয়া যাবেন আর পালোলেম সমুদ্রসৈকতে যাবেন না এরকম পর্যটকের কথা বিশেষ দেখা বা শোনা যায় না। কিন্তু অনেকেই যেটা খেয়াল করেন না, সেটা হল এই সৈকতে কায়াকিংয়েরও ব্যবস্থা আছে। কায়াকিং হল ছোট্ট একটি নৌকার সওয়ার হওয়া এবং নিজেই চালানো। এখানে সমুদ্র সাধারণত শান্ত থাকে, এবং কপাল ভালো থাকলে ডলফিনেরও দেখা পাওয়া সম্ভব। অক্টোবর থেকে মে হল এখানে যাওয়ার আদর্শ সময়।

আরও পড়ুন: দিঘা-পুরী-দার্জিলিং নয়, বাঙালির মনে জায়গা পাকা করছে চটকপুর

প্যারাগ্লাইডিং, বির, হিমাচল প্রদেশ

আকাশের রঙ আসতে আসতে পাল্টে যাচ্ছে সূর্যাস্তের সঙ্গে, আর আপনি সেই আকাশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছেন, মিশে গেছেন, কারণ আপনিও আকাশে আর আপনার নিচে পাহাড়। এটা হল প্যারাগ্লাইডিংয়ের সৌন্দর্য। হৃদয় দুর্বল হলে এই রোমাঞ্চরস থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখাই ভালো। তবে যাঁরাই এই অভিজ্ঞতা হিমাচলের এই গ্রাম বিরে গিয়ে সঞ্চয় করেছেন, তাঁরা সকলে একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, এই অভিজ্ঞতা কারও হাতছাড়া করা উচিত নয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর হল এই গ্রাম এবং প্যারাগ্লাইডিং উপভোগ করার শ্রেষ্ঠ সময়।

ট্রেকিং, সোলাং ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশ

আপনি একেবারে আনকোরা হ'ন বা প্রচণ্ড অভিজ্ঞ, এই ট্রেকিং সবার জন্য। সোলাং ভ্যালির এই ট্রেকের নাম হল বিয়াস কুণ্ড ট্রেক। রাস্তা খুব বেশি দীর্ঘ নয়, কিন্তু যেদিকেই তাকাবেন, বরফের চাদরে ঢাকা পাহাড় দেখবেন, সেই সঙ্গে সোলাংয়ের অপূর্ব দৃশ্য। মে থেকে অক্টোবর হল এই ট্রেকটি করার জন্য আদর্শ সময়।

প্যারাসেলিং, কান্নুর, কেরালা

কান্নুরের পায়য়ামবালাম সৈকতকে এমনিতেই বলা হয়ে থাকে বাস্তব জীবনের পোস্টকার্ড। জায়গাটি এতটাই সুন্দর। সেই সঙ্গে এখানে আপনি একটি অভিনব বিষয়ের অভিজ্ঞতা করতে পারবেন। প্যারাগ্লাইডিং শুনেছেন, কিন্তু প্যারাসেলিং? বিষয়টি অনেকটাই একরকম, তফাত হল প্যারাগ্লাইডিং আকাশে, আর প্যারাসেলিং আপনি করবেন সমুদ্রের ওপর, বোটের সাহায্যে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল আদর্শ সময় এই জায়গা ঘোরার জন্য।

কেভিং, মসমাই, মেঘালয়

আকাশ, সমুদ্র কিছুই যদি পছন্দ না হয় তাহলে মেঘালয়ের অসংখ্য গুহা রোমাঞ্চ ভ্রমণের জন্যে আদর্শ। মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত যায় এই সকল গুহাগুলো। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মেঘালয়ের এই গুহাগুলো ঘোরার জন্য আদর্শ সময়।

স্কুবা ডাইভিং, হ্যাভলক, আন্দামান

আপনি সমুদ্রের গর্ভে প্রবেশ করে নিজের হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চান কোরাল প্রাচীর? বা মাছের ঝাঁকের পাশে সাঁতার কাটতে চান? তাহলে হ্যাভলকের স্কুবা ডাইভিং আপনার জন্য আদর্শ। জল ওখানে কাচের মতো স্বচ্ছ এবং আপাতভাবে শান্ত। অক্টোবর থেকে মে হল আদর্শ সময়।

ট্রেকিং, ভালপারাই, তামিলনাড়ু

গভীর ঘন সবুজের জঙ্গলের মাঝে এই ট্রেকিংয়ের রাস্তা পরিবেশপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। এখানে গন্তব্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং উপভোগ্য রাস্তাটি। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করার আদর্শ সময়।

স্পিড বোটিং, উটি, তামিলনাড়ু

উটির পাইকারা লেকের রূপ পর্যটকদের এতটাই মুগ্ধ করে যে তাঁরা বলেন, শুধু লেকটি দেখেই সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। আপাতদৃষ্টিতে এটি যথেষ্ট শান্ত একটি লেক, কিন্তু এর ভোল সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে যায় যখন এর বুকে স্পিড বোট ভ্রমণ করা শুরু করে। দু'দিকে পাইনের জঙ্গল, সেই সঙ্গে লেকের রূপ, সব মিলিয়ে খুবই দুর্দান্ত এক অভিজ্ঞতা উপহার দেয় উটির এই লেক। জুন থেকে অক্টোবর এর জন্য আদর্শ সময়।

মীরাথাঙ হিমবাহ-রোহন, অরুণাচল প্রদেশ

মীরাথাঙ হিমবাহ এমন একটি স্থান যেখানে বরফের দেওয়াল বয়ে পর্যটকরা উঠে পড়েন হিমবাহের চূড়ায়। তবে এই বরফের দেওয়াল পর্যন্ত পৌঁছতে গেলে তার আগে চব্বিশ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে অতিক্রম করতে হবে। মে থেকে জুলাই শ্রেষ্ঠ সময় এই অভাবনীয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য।

হাইকিং, স্পিতি ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশ

হিমালয়ের হৃদয়ে, বরফের মরুভূমির ভেতরে অবস্থিত এই স্পিতি ভ্যালি। পাহাড় যাঁরা নিয়মিত যান, স্বাস্থ্য মজবুত, তাঁদের জন্য এই স্থান স্বর্গ। সবথেকে উঁচুতে উঠতে পারলে যে দৃশ্য দেখা যায়, তা দেখে মুগ্ধ হওয়া বললেও কম বলা হয়। সেই সঙ্গে বলা ভালো, ঝুঁকি নিতে যাঁরা ভালবাসেন, স্পিতি ভ্যালি তাঁদের অবশ্যই যাওয়া উচিত। জুলাই থেকে অক্টোবর সবথেকে ভালো সময়।

স্নোরকেলিং, দাওকি, মেঘালয়

ভাবুন, আপনি একটি নদীর ওপর ছোট্ট একটা নৌকা চালাচ্ছেন। নিচের দিকে তাকালেন, দেখলেন নদীর পৃষ্ঠ দেখতে পাচ্ছেন, জল এতটাই স্বচ্ছ। এই নদী খরস্রোতা নয়, এখানে বিশ্বের সব শান্তি প্রকৃতি আপনার জন্য তুলে রেখেছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই জায়গা যাওয়ার আদর্শ সময়।

তালিকা প্রস্তুত, বাকি আপনাদের বিচার্য। তবে সব জায়গার ক্ষেত্রে একটি নিয়ম মানা অপরিহার্য। পরিবেশ এবং তার সৌন্দর্যের জন্যেই জায়গাগুলো এত আকর্ষণীয়। তা ধ্বংস করা কখনওই কাম্য নয়।

More Articles