একলাফে বেতন বৃদ্ধি, একসঙ্গে কত টাকা পেতে চলেছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা?
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনেকদিন ধরেই এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করার অনুরোধ করে আসছেন। তাদের দাবি, ২.৫৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে যদি ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হয় ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, তাহলে তাঁরা উপকৃত হবেন।
মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য ঘোষণার সঙ্গে আবারও পুজোর আগে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন সুখবর নিয়ে এল মোদি সরকার। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে আর কিছুদিনের মধ্যেই বাড়তে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেসিক বেতন। কেন্দ্রীয় সরকার খুব তাড়াতাড়ি তাদের কর্মীদের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করার অনুমোদন দিতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, আগামী ৩ আগস্ট মন্ত্রিসভার একটি বিশেষ বৈঠকে এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে, এই বৈঠকেই বেসিক বেতন বৃদ্ধির অনুমোদন দিতে পারে কেন্দ্রের মোদি সরকার।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি কেন্দ্রীয় সরকার এই অনুমতি দিয়ে দেয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য তা রীতিমতো সুসংবাদ হতে চলেছে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার এই বিষয়ে অনুমতি দিয়ে দেয়, তাহলে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর হয়ে যাবে নতুন বেতন। অর্থাৎ, পুজোর আগেই একধাক্কায় আট হাজার টাকা বৃদ্ধি পাবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন।
কেন্দ্রীয় সরকার যদি ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বাড়ানোর অনুমতি দেয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেসিক বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে যাবে ২৬,০০০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি মাসে ৮,০০০ টাকা বেতন বাড়বে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের। সবদিক থেকে হিসেব করে দেখতে গেলে সারা বছরে প্রায় ৯৬,০০০ টাকা বেশি পাবেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা।
আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তর পকেটে টান, বাজারের কোথায় কতটা কোপ বসাচ্ছে জিএসটি?
বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ২.৫৭ শতাংশ অনুসারে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের অধীনে বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। যদি এই ফ্যাক্টর বাড়িয়ে ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন প্রতি মাসে ৮,০০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর জন্য এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বিষয়টি ব্যবহার করা হয়। যদি মোদি সরকার এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বাড়িয়ে দেয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন, অর্থাৎ বেসিক স্যালারি বৃদ্ধি পাবে ৮,০০০ টাকার মতো।
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনেকদিন ধরেই এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধির অনুরোধ করে আসছিলেন। তাদের দাবি ছিল, এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হোক, অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম ১৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করে দেওয়া হোক ২৬,০০০ টাকা।
ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর হচ্ছে এমন একটি বিষয়, যার ওপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন। এই ফ্যাক্টর যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পাবে, আর যদি এই ফ্যাক্টর কমে, তাহলে কমবে বেতন। এই ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্ত মহার্ঘ ভাতা, টিএ, এবং বাড়ি ভাড়ার ভাতা (হাউজ রেন্ট অ্যালাউন্স)। এই তিনটি প্রাপ্ত ভাতার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর। এটি যদি বৃদ্ধি হয়, তাহলে কর্মচারীদের বেতন একইভাবে বৃদ্ধি পাবে।
এতদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ শতাংশের ঘরে রয়েছে। যদি এই ফ্যাক্টর ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হয় তাহলে একধাক্কায় নূন্যতম বেসিক বেতন ১৮,০০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৬,০০০ টাকা হয়ে যাবে। অর্থাৎ ৮,০০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে বেসিক বেতন।
এন্ট্রি লেভেল বেতন
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা মাঝেমধ্যেই বৃদ্ধি পেলেও তাদের বেসিক বেতন খুব একটা সহজে বৃদ্ধি পায় না। যে-বছর ভারত সরকারের তরফ থেকে জিএসটি নিয়ে আসা হয়েছিল, অর্থাৎ ২০১৭ সালে, সেই বছরই শেষবারের জন্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেসিক বেতন। তার আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বেসিক বেতন পেতেন ১১,০০০ টাকা। সেই সময় ৭,০০০ টাকা বৃদ্ধি করে ১৮,০০০ টাকা করা হয়েছিল তাদের বেসিক বেতন। বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল বেতন রয়েছে ৫৬,৯০০ টাকা। সপ্তম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, অর্থাৎ ২.৫৭ গুণ করে মূল বেতন গণনা করা হয়। এই মুহূর্তে যদি একজন কর্মচারীর মূল বেতন ১৮,০০০ টাকা হয়, এবং ভাতা বাদ দিয়ে যদি ২.৫৭ দিয়ে গুণ করা হয়, তাহলে এই মুহূর্তে ১৮,০০০×২.৫৭ = ৪৬,২০০ টাকা পান তিনি।
কেমন হবে নতুন বেতন স্ট্রাকচার?
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী, যদি ভারত সরকারের তরফ থেকে তাদের বেসিক পে ১৮,০০০ থেকে বাড়িয়ে দিয়ে ২৬,০০০ করে দেওয়া হয় এবং তৎসহ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৫৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দিয়ে ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হয়, তাহলে একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাবে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন। যদি নতুন দু'টি দাবি একেবারে পূরণ করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে, তাহলে নতুন ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন হবে ৯৫,৬৮০ টাকা (২৬,০০০×৩.৬৮ = ৯৫,৬৮০)।
অনেকদিন ধরেই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করার অনুরোধ করা হচ্ছে
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনেকদিন ধরেই এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করার অনুরোধ করে আসছেন। তাদের দাবি, ২.৫৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে যদি ৩.৬৮ শতাংশ করে দেওয়া হয় ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর, তাহলে তাঁরা উপকৃত হবেন। অর্থাৎ তাঁদের দাবি, যেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৬,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি পূরণ করলে তাদের দীর্ঘকালীন আন্দোলন সফলতা পাবে।
উপকৃত হবেন লাখ লাখ মানুষ
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা এই জুলাই কিংবা আগস্ট মাস থেকেই ৪ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি না দেওয়া হলেও মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যান ৭.০১ শতাংশ হয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ৫০ লক্ষ কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হতে চলেছেন।
দেওয়া হবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা
শুধুমাত্র মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি করা নয়, আগস্ট মাসের বৈঠকের পরে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা মহার্ঘ ভাতা সরকার ক্লিয়ার করে দিতে পারে বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। একসঙ্গে কর্মীদের দুই লক্ষ টাকা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত বকেয়া সমস্ত মহার্ঘ ভাতা একবারই ক্লিয়ার করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। বকেয়া ডিএ ক্লিয়ার করে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি রেখেছিল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা।