কোন মন্ত্রে ন'কেজি ওজন কমিয়েছেন এলন মাস্ক? এই ডায়েট করলে পুজোর আগেই মেদ ঝরবে আপনারও

ওজনও কমবে, সঙ্গে ঘায়েল হবে একাধিক রোগব্যাধিও। নতুন এই ডায়েট পদ্ধতির পোশাকি নামই হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং।

বেশ কিছুদিন আগে এলন মাস্কের গ্রিসে ছুটি কাটানোর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেই ছবিতে দেখা যায়, খালি গায়ে বেশ বড় আকারের ভুঁড়ি নিয়ে ছুটি উপভোগ করছেন মাস্ক। তবে এই ছবির কারণে নেটিজেনদের প্রবল ট্রোলের মুখে পড়তে হয় টেসলা অধিকর্তাকে। কিন্তু এই উপহাস যে যথেষ্ট গায়ে লেগেছে মাস্কের, তারই প্রমাণ মিলল সদ্য করা একটি পোস্টের থেকে। তিনি ট্যুইট করে জানিয়েছেন যে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে ইতিমধ্যেই ৯ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন এবং যথেষ্ট ফিট অনুভব করছেন। বন্ধুর পরামর্শেই যে ডায়েট মেনে খাবার খাওয়া শুরু করেছেন, তাও জানান মাস্ক। ওজন ঝরাতে আজকাল অনেকেই এই ডায়েট মেনে চলেন। পুষ্টিবিশারদদের মতেও, ঘরোয়া খাবার খেয়েই খুব সহজে কমানো সম্ভব এই বাড়তি ওজন। তবে খাবার খেতে হবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে, বাকি সময়ে থাকতে হবে উপবাস। আর তাতেই নাকি হবে কেল্লাফতে! ওজনও কমবে, সঙ্গে ঘায়েল হবে একাধিক রোগব্যাধিও। নতুন এই ডায়েট পদ্ধতির পোশাকি নামই হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। আসুন জেনে নিই এই ডায়েট পদ্ধতির খুঁটিনাটি।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কী ?
খুব সহজ কথায়, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো দিনে বা সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময় না-খেয়ে থাকার ডায়েট। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি খেতে পারবেন মাত্র ৮ ঘণ্টা আর বাকি ১৬ ঘণ্টা কাটাতে হবে উপোস করে। তবে সপ্তাহে একদিন খেতেই পারেন মনভরে। সপ্তাহের বাকি দিনগুলো অথবা একদিন বাদে এই পদ্ধতি মেনে চলতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে সারাদিনে খাদ্যতালিকায় ২৫ শতাংশর বেশি ক্যালোরি থাকা চলবে না এবং উপোস ভেঙে খেতে হবে ভারী খাবার।এভাবে মেনে চলতে পারলেই কমবে ওজন, সঙ্গে বাড়বে মেটাবলিক রেটও।

কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি ?
বলা হয়, মানবসভ্যতার আদিকালে মানুষ ছিল শিকারি ও খাবার সংগ্রহকারী। বনজঙ্গলে সবসময় খাবার জুটত না প্রয়োজনীয় খাবার ফলে থাকতে হত উপোস করে। তাই বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা সারদিনে যা খাবার খাই, তার খুব সামান্য অংশেই শরীর চলতে পারে। তাছাড়া মানুষ বাদে এখনও পশুপাখিকে উপোসের সঙ্গে মানিয়েই চলতে হয়। এতে এনার্জির ঘাটতি হয় না বরং লিভারে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড কিটোন বডি প্রস্তুত করে। এখান থেকেই প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে যায় শরীর। ফলে কমতে থাকে অতিরিক্ত ওজন, বৃদ্ধি পায় শারীরিক সুস্থতা। তবে সমালোচকদের মতে, এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সঠিক হবে না। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ও তার কার্যকারিতা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

আরও পড়ুন: এই বিশেষ পদ্ধতিতে বাগান করলে পাওয়া যাবে মানসিক শান্তি, বাড়বে স্মৃতিশক্তি

পদ্ধতি
একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা যেতে পারে। তবে আপনার জন্য কোনটি সঠিক তা একজন চিকিৎসকই বলতে পারেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের জনপ্রিয় তিনটি পদ্ধতি হলো।

১৬/৮ পদ্ধতি
প্রতিদিন প্রায় ১৬ ঘণ্টা উপবাস করা এবং আপনার দৈনিক খাওয়ার সময় প্রায় ৮ ঘন্টা। এই সময়ের মধ্যে আপনি দুই, তিন বা তার বেশি খাবার খেতে পারেন।এই পদ্ধতিটি লিনগেন্স প্রোটোকল নামেও পরিচিত এবং ফিটনেস বিশেষজ্ঞ মার্টিন বারখান এটি জনপ্রিয় করেছেন। এক্ষেত্রে আপনি রাতের খাবারের পরে কিছু না খাওয়া এবং প্রাতঃরাশ বাদ দেওয়ার মতো কাজ করতে পারেন সহজেই। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি রাতের খাবার ৮ টায় শেষ করেন তবে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত কিছু খাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি প্রায় ১৬ ঘণ্টা উপবাসে থাকলেন। যারা সকালে প্রাতঃরাশ খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই পদ্ধতি মেনে চলা কঠিন হতে পারে কিন্তু যারা প্রাতঃরাশ এড়িয়ে যান তাঁরা সহজেই অনুসরণ করতে পারেন এই পদ্ধতি। উপবাসের সময় আপনি জল, কফি এবং অন্যান্য জিরো-ক্যালোরিযুক্ত পানীয় পান করতে পারেন, যা ক্ষুধার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করবে। তবে খাওয়ার সময় প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি প্রচুর প্রক্রিয়াজাত খাবার বা অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খান তবে এই পদ্ধতিটি কাজ করবে না।

৫:২ ডায়েট
এই ডায়েটে আপনি সপ্তাহের ২ দিনের জন্য আপনার ক্যালোরির পরিমাণ ৫০০-৬০০ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে বাকি ৫ দিন খেতে পারেন ঘরোয়াভাবে রান্না করা যে-কোনও খাবার। এই পদ্ধতিকে ফাস্ট ডায়েটও বলা হয় এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক মাইকেল মোসলে জনপ্রিয় করেছিলেন। উপবাসের দিনে, মহিলাদের ৫০০ ক্যালোরি এবং পুরুষদের ৬০০ ক্যালোরি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি সোমবার এবং শনিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সাধারণ খাবারই খেতে পারেন। এই ২ দিনের জন্য মহিলাদের জন্য ২৫০ ক্যালোরি এবং পুরুষদের জন্য ৩০০ ক্যালোরির ২টি ছোট খাবার খেতে পারেন। ৫:২ ডায়েট ওজন কমাতে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।

অনায়াসে উপবাস করুন
এক্ষেত্রে উপবাসের কোনও নিয়ম নেই। শুধুমাত্র অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত বোধ না করলে কিংবা কাজে ব্যস্ত থাকলে খাওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন। এমনকী, বাদ দিতে পারেন প্রাতঃরাশও।তবে স্বাস্থ্যকর লাঞ্চ ও ডিনার খান। সুষম খাবার খাওয়া নিশ্চিত করলেই সুফল মিলবে।

রোগ প্রতিরোধ
এই ডায়েট পদ্ধতি মেনে খাবার খেলে একাধিক রোগের মোকাবিলা করা সম্ভব। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর পাশাপাশি রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে এই ডায়েট প্ল্যান। ডিএনএ-র ক্ষত সেরে উঠতে পারে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং পদ্ধতিতে খাবার গ্রহণ করলে। আবার হৃদযন্ত্রের সুস্থতাও বজায় থাকবে ।

তবে মনে রাখবেন আপনার জন্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন, তা ডাক্তারই সঠিক বলতে পারবেন। তাই এই ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

More Articles