আইপিও কি শেষকালে ধ্বংস করবে মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের ভরসা এলআইসি-কেই?

৪ মে বাজারে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ভারতের এলআইসি আইপিও। প্রতিটি শেয়ারের দাম ধার্য করা হয়েছে ৯০২ থেকে ৯৪৯ টাকার মধ্যে। এই এলআইসি আইপিও শেয়ার নিয়ে শেয়ার মার্কেট ট্রেডারদের মধ্যে উৎসাহ রয়েছে বেশ ভালোমতোই। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদি সরকারের এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি কতটা যুক্তিগ্রাহ্য? আদৌ কি এতে কোন লাভ হচ্ছে নাকি বেসরকারিকরণই হতে চলেছে এলআইসি ধ্বংসের পথে প্রথম পদক্ষেপ? 

এলআইসি আইপিও শুধুমাত্র নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য নয়, ভারতের বাইরের গ্লোবাল ট্রেডারদের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখনও পর্যন্ত ভারতের সবথেকে বড় জীবন বিমা সংস্থা হল লাইফ ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ওরফে এলআইসি। কিন্তু এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি এবং এলআইসি আইপিও নিয়ে আসা জনস্বার্থের একটি বড় অপমান বলেই মনে করছেন অনেক মার্কেট এক্সপার্ট। কিন্তু এরকমটা মনে হওয়ার কারণ কি? আদতে, গ্লোবাল ট্রেডাররা বহু বছর ধরে এলআইসি শেয়ার অত্যন্ত কম দামের মধ্যে কেনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তাদের কাছে জনস্বার্থ খুব একটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তাই কোটি কোটি জীবনবিমা গ্রাহক, যারা এত বছর ধরে এলআইসির উপরে ভরসা রেখেছেন, এলআইসিকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের কাছেও এই বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হতে সময় লাগবে। এমনকী, এলআইসি-র এই বেসরকারিকরণের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে এলআইসি আইপিও নিয়ে জালিয়াতির ফাঁদ পাতা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে গ্লোবাল ট্রেডারদের জন্য। যদি এই জালিয়াতি হয় তাহলে ভারতের বেসরকারিকরণের ইতিহাসে এই জালিয়াতি হবে সবথেকে বড়। 

২৩ এপ্রিল তারিখে এলআইসি গভর্নিং বডি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিল, তারা পরিকল্পিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়াও ২৬ এপ্রিল এলআইসি বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফ্লোট লঞ্চের তারিখ এবং তাদের সাথেই পলিসির গ্রাহক এবং কর্মচারীদের জন্য ধার্য্যমূল্যের উপরে আরোপ করা ছাড় নিয়ে বৈঠক করেছিল। এরপর

২৭ এপ্রিল সেবির কাছে আনুষ্ঠানিক রেড হিয়ারিং প্রসপেক্টাস সাবমিট করে এলআইসি আইপিও শুরু করার সমস্ত কাজ শেষ করে এলআইসি গভর্নিং বডি। যদিও, ফেব্রুয়ারি মাসেই এর কাজ খানিকটা এগিয়ে রেখেছিল তারা। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভারত সরকারের তরফ থেকে এলআইসির উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছিল যাতে অতি দ্রুত তারা আইপিও লঞ্চ করে। এজন্য ড্রাফ্ট রেড হিয়ারিং প্রসপেক্টাস সাবমিট করা হয়েছিল সেবির কাছেও।

বিশ্ব পরিস্থিতি এই মুহূর্তে অনেকটা অন্যরকম। একদিকে যেমন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলছে যুদ্ধ, অন্যদিকে আবার শ্রীলঙ্কার আর্থিক বিপর্যয় নিয়ে চিন্তিত গোটা বিশ্ব। তাই ভারত সরকারের কাছে ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল ১২ মে পর্যন্ত। তার মধ্যেই যদিও ভারত সরকারের এলআইসি গভর্নিং বডি তাদের আইপিও  আনতে চলেছে, কিন্তু, ভারত সরকার এবং এলআইসির এই বেপরোয়া মনোভাব, তাদের জন্য কোনো সমস্যা নিয়ে আসছে না তো? 

বিশাল ডিসকাউন্টে এলআইসি শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ

এলআইসি গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে ঠিক করা হয় এলআইসি আইপিও এর মূল্য ৯০২ থেকে ৯৪৯ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। কিন্তু কী ভাবে এতটা কম দামের মধ্যে এলআইসি শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে? অর্থ দপ্তরের বেশ কিছু রিপোর্ট সূত্রে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ভারত সরকার নাকি এলআইসি আইপিও-র পরিমাণ ৭০-৭৫,০০০ কোটি টাকা থেকে মাত্র ২১,০০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিল যাতে এলআইসি শেয়ার এর মূল্য কমতে পারে। দু'টি উপায় ব্যবহার করে এই আইপিও আকার কমানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন-কম সময়ে সঞ্চয় দ্বিগুণ করতে চাইলে বিনিয়োগ করুন পোস্ট অফিসের এই স্কিমগুলিতে

প্রথম পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শেয়ার অফলোড করা হয় এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিতে সম্ভাব্য শেয়ারহোল্ডারদের কাছে অফার করা প্রতিটি শেয়ারের মূল্য হ্রাস করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, ড্রাফ্ট রেড হিয়ারিং প্রসপেক্টাস অনুসারে ভারত সরকার ৩১.৬২৫ কোটি শেয়ার অফলোড করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এলআইসি এর ৬৩২.৫০ কোটি শেয়ারের ইকুইটি বেসের মাত্র ৫ শতাংশ এই পরিমাণ। তবে এই মুহূর্তে ভারত সরকারের তরফ থেকে ২২.১৩৭৫ কোটি শেয়ার আপলোড করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা এলআইসির সম্পূর্ণ ইকুইটি বেসের মাত্র ৩.৫ শতাংশ। 

বিনিয়োগকারীদের লাভ, পলিসিহোল্ডারদের ক্ষতি

মাত্র দুই মাস আগে, যখন প্রথমবার এলআইসি শেয়ার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল সেই সময় মনে করা হয়েছিল, এলআইসি শেয়ার মূলত এলআইসির সম্পূর্ণ ভ্যালুয়েশনের ২.৫ থেকে ৩ গুণ দামে মার্কেটে আসবে। কিন্তু আদতে সেরকম হলো না।

আরও পড়ুন-টাটা থেকে দেবী শেট্টি, বাংলা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কী ভাবনা?

একটা সময় মনে করা হয়েছিল এলআইসি শেয়ারের প্রত্যেকটি শেয়ারের দাম মোটামুটি ২,১৩৩ টাকা থেকে ২,৫৫৯ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। ৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব যদি বাজারে ছাড় হয়, তাহলে সেই অংশীদারিত্ব ভারত সরকারের ঘরে ৬৭,৪৫৬ কোটি থেকে ৮০,৯২৮ কোটি টাকা নিয়ে আসবে। 

বাস্তবে কিন্তু সে রকমটা হলো না। মিডিয়া রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, বিশ্ব বাজারের বড় বড় গ্লোবাল ট্রেডারদের চাপে পড়ে এবং বিধ্বস্ত মার্কেটের কারণে অনেকটাই কম হয়ে গিয়েছে এলআইসি শেয়ারের দাম। এই মুহূর্তে এলআইসি তাদের শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সম্পূর্ণ ভ্যালুয়েশনের মাত্র ১.১ গুণ দামে। এর ফলে প্রতিটি শেয়ারের দাম নেমে গিয়েছে ১,০০০ টাকার নিচে। যেখানে, সঠিক ভ্যালুয়েশনের প্রায় ৩ গুণ দাম হাঁকা সম্ভব ছিল, সেখানে মাত্র ১.১ গুণ দাম হাঁকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এর ফলে একদিকে যেমন ভারত সরকারের ঘরে টাকার অঙ্ক অনেক কম প্রবেশ করবে, তেমনি কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে পলিসি হোল্ডারদের। সর্বোপরি, অদূর ভবিষ্যতে ভারতের সর্ববৃহৎ জীবন বিমা সংস্থার ট্র্যাক রেকর্ড এবং মার্কেট দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। 

এই মুহূর্তে ভারত সরকারের তরফ থেকে, এলআইসি শেয়ারের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা আগের ভ্যালুয়েশনের থেকে প্রায় ৪৪ শতাংশ কম। আগের ভ্যালুয়েশন হিসেবে বিচার করলে গ্লোবাল ট্রেডারদের প্রায় ৬৩ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। তার ওপর মাত্র ২২.১৩৭৫ কোটি শেয়ার মাকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলআইসি গভর্নিং বডি। আমরা যদি ২২.১৩৭৫ কোটি শেয়ার অর্থাৎ ৩.৫ শতাংশ শেয়ারকে ধ্রুবক ধরে নিয়ে এগোই তাহলে আগের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারণ করা ২.৫ থেকে ৩ গুণিতক শেয়ারের নিরিখে ভারত সরকারের ঘরে আসতে পারতো ৪৭,২১৯ কোটি টাকা থেকে ৫৬,৬৫০ কোটি টাকা। কিন্তু, ৯৩৮ টাকার প্রাইসট্যাগ থাকা ১.১ গুণিতক মূল্যের শেয়ার যদি সেই ৩.৫ শতাংশ ভারতের মার্কেটে নিয়ে আসা হয় তাহলে ভারত সরকারের ঘরে প্রবেশ করবে মাত্র ২০,৭৬৫ কোটি টাকা, অর্থাৎ, আগের ভ্যালুয়েশনের থেকে প্রায় ২৬,৪৪৩ থেকে ৩৫,৮৮৫ কোটি টাকা ক্ষতি হতে চলেছে ভারত সরকারের।

বাজারমূল্যের খেলা

এই আইপিও শেয়ার বিক্রির বিষয়টি যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই এলআইসি-র বাজারমূল্য নিয়ে শুরু হয়েছে সমস্যা। প্রথমেই যখন ভারতের বাজারে এলআইসি শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেই সময় এলআইসি-র একটি মূল্যমান স্থির করা হয়েছিল। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট এবং বিশ্বের তাবড় তাবড় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনামাফিকভাবেই প্রথমেই এলআইসি-র আসল দাম অনেকটা কম দেখানো হয়েছিল। এলআইসি-র ভ্যালুয়েশন যদি কম হয়, তাহলে এলআইসির শেয়ারের দাম অনেকটাই কম হবে। এই কারণে প্রথমেই সঠিক ভ্যালুয়েশন নির্ধারণ করা হয়নি এলআইসি আইপিও-র ক্ষেত্রে। আর ভারতীয় রাষ্ট্রায়াত্ত জীবনবিমা সংস্থার এই কম ভ্যালুয়েশন এর জন্য মূলত দায়ী ভারতের ইনসিওরেন্স ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। এরকম একটি আর্থিক সংস্থার ভ্যালুয়েশন যতটা রাখা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি ভ্যালুয়েশন হওয়ার কথা ছিল এই সংস্থার। কিন্তু অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বারা লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার ভ্যালুয়েশন কমিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে এলআইসি শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব হয়। 

এখানেই প্রমাদ গুণছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, অন্ততপক্ষে বৈশ্বিক আর্থিক পতনের মধ্যে অবশ্যই এলআইসি-র সঠিক মূল্য নির্ধারণ জরুরি ছিল।বিশ্ববাজারে আর্থিক অবক্ষয়ের পরে সারা বিশ্বের জীবন বিমা কোম্পানিগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে গত দুই বছরে। এমনকী বেশকিছু জীবন বিমা কোম্পানি এই দুই বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায়, যদি ভারতের একটি প্রধান জীবনবিমা সংস্থার ভ্যালুয়েশন কম রাখা হয়, তাহলে একদিকে যেমন সেই সংস্থাকে ক্ষতির মুখে নিয়ে যাওয়া হয় তেমনি কিন্তু সেই সংস্থার পলিসিহোল্ডাররাও সমস্যার মধ্যে পড়েন। 

তবে এলআইসি ভ্যালুয়েশনের বিষয়টির মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি সেটা হল, এলআইসির অংশীদার সংস্থা মিলিমান কিন্তু এই হিসাবের মধ্যে নিজের আয়ত্তে থাকা অংশীদারিত্বকে কোনোভাবেই এর মধ্যে নিয়ে আসেনি। তাদের অংশীদারিত্বের অংশটুকু সম্পূর্ণভাবে বাদ গেছে এই হিসাবের মধ্য থেকে।

এই মুহূর্তে এলআইসি ভারতের সবথেকে বড় জীবন বীমা সংস্থা। মেট্রো শহর নয়, মেট্রো শহর বাদে অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রেও এলআইসি সমস্ত বড় প্রপার্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাবে কাজ করে থাকে। যেকোনো ধরনের সম্পত্তির বীমার ক্ষেত্রে এলআইসি এখনো সবথেকে বড় খেলোয়ার ভারতের মার্কেটে। এই কারণেই লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঠিক ভ্যালুয়েশন নিয়ে আসা সহজে সম্ভব নয়। অনেকের ধারণা মিলিমানের দ্বারা তৈরি করা ভ্যালুয়েশন মোটামুটি ঠিকঠাক। তবে, আরো অনেকে আবার মনে করছেন মিলিমান যে ভ্যালুয়েশন তৈরি করেছে তার থেকে প্রায় কয়েক গুণ বেশি এলআইসির আসল ভ্যালুয়েশন। 

পলিসিহোল্ডারদের কম মূল্যায়ণ

সেবির কাছে জমা দেওয়া দলিলেই উঠে এসেছে, এই মুহূর্তে ভ্যালুয়েশন এর সময় কয়েক লক্ষ পলিসিহোল্ডারদের রীতিমতো বাদ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, মার্চ ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১ মাত্র ৬ মাসের মধ্যেই এলআইসির ভ্যালুয়েশন ০.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৫.৪০ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু এরকম টা হল কেন? এর প্রধান কারণটাই ছিল এলআইসি আইনে নিয়ে আসা বেশকিছু নতুন পরিবর্তন। 

পলিসি হোল্ডারের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং সেগুলিকে শেয়ারহোল্ডারদের কাছে হস্তান্তর করার মাধ্যমেই একটা অসাধারণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায় এলআইসির সঠিক ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে। কিন্তু, অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে লক্ষ্য লক্ষ্য পলিসি হোল্ডারের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই ভ্যালুয়েশন। যারা এতদিন পর্যন্ত নিজেদের সঞ্চয় স্থাপন করেছেন এলআইসির উপরে, তাদেরকে কিন্তু একদিন থেকে বঞ্চিত করা হলো ভ্যালুয়েশন এর ক্ষেত্রে। 

দেখতে গেলে কম মূল্যায়ন কিন্তু দুটি ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারির আকার ধারণ করতে পারে। প্রথমটি হলো, এটি সরাসরি সরকারকে আইপিও থেকে অর্জিত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে। সঙ্গে দ্বিতীয় কারণটি হলো, এটি পলিসিহোল্ডারদের অধিকার কেড়ে নেয় এবং উদ্বৃত্ত সমস্ত লাভ একটি প্রাইভেট এনটিটির কাছে হস্তান্তর করে দেয়। যারা এত বছর পর্যন্ত এলআইসি বৃদ্ধিতে এবং এলআইসি-কে তৈরি করতে কোন ভূমিকা নেয় নি, তাদেরকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয় এলআইসি সমস্ত লাভ। 

​​​​​​আইপিও কি এলআইসি ধ্বংসের পথে প্রথম পদক্ষেপ?

লাইফ ইনসিওরেন্স কর্পোরেশন ফর ইন্ডিয়ার জন্য আইপিও বিষয়টি প্রথম থেকেই একটু সমস্যার সৃষ্টি করে আসছে। মার্কেট রেগুলেটররা ইতিমধ্যেই এলআইসির উপর শর্ত আরোপ করেছে আগামী দুই বছরের মধ্যে তাদের পাবলিক হোল্ডিং ১০ শতাংশ করতে হবে। অন্য দিকে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই পাবলিক হোল্ডিং পৌঁছতে হবে ২৫ শতাংশের মধ্যে। তবে সেখানেই সমস্যা করবে আইপিওতে প্রদত্ত গভীর ডিসকাউন্ট। ইতিমধ্যেই এই ডিসকাউন্ট সরকারের জন্য সমস্যাদায়ক হতে শুরু করেছে। সম্ভাবনা রয়েছে সরকারি অংশীদারিত্বের মূল্যকে আরো কমিয়ে দেবে এই অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট।

২০১৯ সালে আইআরসিটিসি আইপিও-র সঙ্গে ঘটা ঘটনার যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে কিন্তু বিষয়টা আরো সমস্যার হয়ে যাবে। ২০১৯ সালে যখন আইআরসিটিসি আইপিও শুরু হয়েছিল সেই সময় শেয়ার প্রাইস রাখা হয়েছিল প্রতি শেয়ারে ৩১৫ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে। কিন্তু যখন মার্কেট ওপেন হল তখন শেয়ারের প্রাইস পৌঁছে গেল ৬৪৪ টাকায়। এতে না হল সরকারের লাভ, না হল গভর্নিং বডির লাভ। মাঝখান দিয়ে বিদেশি ট্রেডাররা লাভের গুড় খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। ঠিক সেরকমই হতে পারে এলআইসি আইপিওর ক্ষেত্রে। আর এক্ষেত্রে কিন্তু এই মার্জিন আরো উঁচু হতে পারে। 

সম্ভবত, মোদি সরকার এলআইসির মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি টাকা ঘরে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু, একই সঙ্গে এলআইসির সরকারি অংশীদারিত্ব এবং পলিসিহোল্ডারদের বিশ্বাস দুটির সাথেই করতে হচ্ছে সমঝোতা। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এলআইসি আইপিও ভারতের শীর্ষস্থানীয় একটি আইপিও হয়ে উঠবে খুব শীঘ্রই। অনেকে মনে করতে পারেন, এলআইসি আইপিও এর ফলে ভারত সরকারের আয় অনেকটা বাড়বে। কিন্তু, অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, আইপিও তৈরি করার ফলে সরাসরি সমস্যায় পড়বে এলআইসি সংস্থাটি।এলআইসি-কে যারা ভালবাসেন, তাদের আশঙ্কা, একটা সময় হয়তো এমন হবে, বেসরকারিকরণের চাপে পড়ে শেষকালে ধ্বংস হয়ে যাবে ভারতবর্ষের সবথেকে বড় জীবনবিমা সংস্থাটি।

More Articles