ঋণের বোঝা সামলাতে না পেরে ঋণখেলাপি? কীভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল

Loan Settlement: যখন কোনও ঋণগ্রহীতা তার ঋণ সুদসমেত ফেরত দিতে অপারগ থাকেন সেই সময় ব্যাঙ্ক এই লোন সেটলমেন্টের পথে হাঁটে।

বিগত কয়েক মাস যাবৎ লাগাতার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র রেপো রেট। এর ফলে একদিকে যেমন সুবিধা হয়েছে ফিক্সড ডিপোজিট এবং সেভিংস অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের, ঠিক তেমনই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে লোন গ্রহণকারীদের। যে গতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া রেপো রেট বৃদ্ধি করছে, তাতে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গিয়েছে মাসিক ঋণের কিস্তির পরিমাণ। লোনের পরিমাণ চোকাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঋণগ্রহীতাদের। ইএমআই বেড়ে যাওয়ার কারণে বহু মানুষ কার্যত ঋণখেলাপির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। তাই সেক্ষেত্রে এখন বহু মানুষ লোন সেটলমেন্টের পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।

লোন সেটলমেন্ট আসলে কী?
যখন কোনও ঋণগ্রহীতা তার ঋণ সুদসমেত ফেরত দিতে অপারগ থাকেন সেই সময় ব্যাঙ্ক এই লোন সেটলমেন্টের পথে হাঁটে। এই লোন সেটলমেন্টের সময় সেই ঋণগ্রহীতাকে ব্যাঙ্কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয় এবং নিজের ঋণ প্রদানের অসামর্থর কথা জানাতে হয়। ঋণগ্রহীতার অনুরোধ যদি সেই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক গ্রহণ করে, তাহলে সেক্ষেত্রে আসে লোন সেটলমেন্টের বিষয়টা।

এখানে সেই ঋণগ্রহীতাকে ঋণের প্রাথমিক মূল্য পুরোটাই দিতে হয়। তবে, সুদের অর্থ, পেনাল্টি এবং অন্যান্য চার্জ আংশিক রূপে অথবা সম্পূর্ণরূপে মাফ করে দেয় সেই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক। তবে এই লোন সেটলমেন্ট যতটা সহজ এবং সুবিধেজনক মনে হচ্ছে, ততটা সহজ কিন্তু বাস্তব জীবনে নয়। লোন সেটলমেন্ট বিষয়টির একাধিক অসুবিধেও রয়েছে।

আরও পড়ুন: সহজেই লোনের প্রলোভন! এই অ্যাপগুলি হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুফাঁদ

ঋণ নিষ্পত্তির সুবিধা ও অসুবিধা
যদি কোনও ঋণগ্রহীতা সেই নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে ঋণ নিষ্পত্তির অনুরোধ রাখেন, সেই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের এককালীন ঋণ নিষ্পত্তির বিকল্প দিয়ে থাকে। ব্যাঙ্কিং পরিভাষায় এই বিষয়টিকে ওয়ান টাইম সেটলমেন্ট বা OTS বলা হয়ে থাকে। গৃহঋণ, শিক্ষাঋণ, থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত ধরনের ঋণের ক্ষেত্রেই এই ঋণ নিষ্পত্তির বিষয়টি আসতে পারে। এই ঋণ নিষ্পত্তির সবথেকে বড় সুবিধা হলো, আপনি এক্ষেত্রে রিকভারি এজেন্ট থেকে স্বাধীনতা পেয়ে যান। এর পাশাপাশি প্রতি মাসে ইএমআই দেওয়ার ঝামেলা আর থাকেনা তবে এই ঋণ নিষ্পত্তির কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

যদি কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পর ৯১ দিন বা ৩ মাস পর্যন্ত কোনও কিস্তি জমা না করে, তবে এই পরিস্থিতিতে সেই ব্যাঙ্ক তার ঋণকে নন পারফর্মিং অ্যাসেট বিভাগে ফেলে দেয়। সেই সময় ব্যাঙ্কের তরফ থেকে সেই ঋণগ্রহীতার কাছে একটি নোটিশ যায় এবং তাকে সমস্ত ধরনের পেমেন্ট করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙ্ক তাদের রিকভারি এজেন্টকে ওই ব্যক্তির বাড়িতে পাঠায় সেই ঋণের টাকা আদায় করার জন্য।

সেই সময় যদি ওই ব্যক্তি ব্যাঙ্কে অনুরোধ করেন, তখন OTS বা লোন সেটলমেন্টের প্রসঙ্গ আসে। কিন্তু এই লোন সেটলমেন্ট নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। এই OTS-কে অনেকেই লোন ক্লোজার হিসেবে গ্রহণ করে নেন, কিন্তু এটা কখনওই সঠিক নয়। যখন আপনি আপনার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে অপারগ হন, সেই সময় OTS ব্যবহার করা হয়। তবে এই OTS ব্যবহার করলে আপনার ঋণের ক্রেডিট স্কোর একধাপে একেবারে তলানিতে পৌঁছে যেতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার পরবর্তী ঋণের ওপরে। যদি OTS ব্যবহার করে একটি ঋণ পরিশোধ করার পরে আবার আপনার ঋণের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু কোনও ব্যাঙ্ক আপনাকে ঋণ দিতে চাইবে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আপনার সিবিল CIBIL SCORE-এর ওপরেও, যে প্রভাব আগামী ৭ বছর পর্যন্ত থাকবে।

ক্রেডিট স্কোরের ওপর কী প্রভাব থাকে?
যদি কোনও ঋণগ্রহীতা এই ঋণ নিষ্পত্তির প্রস্তাব রাখেন, তখন সেই ব্যাঙ্ক অথবা ঋণদাতা সংস্থা আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে সরাসরি ক্রেডিট ব্যুরোর কাছে আপনার অ্যাকাউন্ট পাঠিয়ে দেয় লোন সেটলমেন্ট করানোর জন্য। এই ক্রেডিট ব্যুরো আপনার ক্রেডিট স্কোর তৈরি করে। যখন আপনার অ্যাকাউন্ট লোন সেটেলমেন্ট করানোর জন্য ক্রেডিট ব্যুরো-র কাছে পৌঁছায় তখন সরাসরি ক্রেডিট ব্যুরো আপনার একাউন্টকে ডিফল্টার অ্যাকাউন্ট হিসেবে মনে করে এবং আপনার ক্রেডিট স্কোর নিচে নামিয়ে দেয়। ৫০ থেকে ১০০ পয়েন্ট অথবা তার থেকেও বেশি নেমে যেতে পারে আপনার ক্রেডিট স্কোর। পাশাপাশি ব্যাঙ্কের তরফ থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্ল্যাক লিস্টেডও করে দেওয়া হতে পারে।

মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি
এই ঋণনিষ্পত্তির সময় একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, যাঁরা আপনাকে ঋণ দেবেন, তাঁরা সবসময় চাইবেন, যেন আপনার থেকে সর্বাধিক টাকা তাঁরা পরিশোধ করতে পারেন। তাই যখন আপনি ঋণনিষ্পত্তির প্রস্তাব রাখবেন, তখন একেবারে কম থেকে শুরু করুন। সম্ভব হলে আপনার বকেয়া রাশির ৩০ শতাংশ থেকে কথা শুরু করুন।

হয়তো ব্যাঙ্ক এই টাকায় ঋণনিষ্পত্তি করতে দেবে না। ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ৮০ শতাংশ টাকার প্রস্তাব রাখা হবে। কিন্তু সরাসরি আপনি এই প্রস্তাব নাকচ করুন। আপনি চেষ্টা করুন, যাতে ৫০ শতাংশর কাছাকাছি জায়গায় এই ঋণনিষ্পত্তির ব্যাপারটা ফাইনাল হয়। যদি সেই রকম জায়গায় এই ঋণনিষ্পত্তির বিষয়টা ফাইনাল হতে পারে, তাহলে আপনি অনেকটাই সুবিধেজনক জায়গায় থাকবেন।

এই ঋণনিষ্পত্তির সময় আরেকটা বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, যে ব্যাঙ্কের সঙ্গে আপনি ঋণনিষ্পত্তি করবেন, তারা কিন্তু আপনাকে একটি লিখিত এবং ব্যাঙ্কের স্বাক্ষরিত চিঠি দেবে। সেই চিঠি আপনার কাছে রাখতে হবে। সেটাই হলো আপনার ঋণনিষ্পত্তির সবথেকে বড় প্রমাণ। এই প্রমাণ হারিয়ে গেলে কিন্তু চলবে না।

আপনি কী করতে পারেন?
আপনি যদি ঋণনিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে তা সম্পূর্ণরূপে ঋণ ক্লোজার করে দেবেন না। পরবর্তীতে টাকা এলে এবং আপনার আর্থিক অবস্থা ভালো হলে সেই টাকা দিয়ে ঋণের সুদ এবং আসল রাশি পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোরের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না এবং আপনার CIBIL স্কোর ভালো থাকবে। এরপরে পরবর্তী ঋণ নেওয়ার সময় আপনার কোনও সমস্যা হবে না।

More Articles