দেওঘরই প্রথম নয়, তাড়া করছে অতীতের ভয়ানক রোপওয়ে দুর্ঘটনার স্মৃতি

রবিবার বিকালে দেওঘরের রোপওয়ে দুর্ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা চার। দুটি কেবল তারের সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২ জন মহিলার। মাঝপথে ৫৭ জন যাত্রী-সহ আটকে পড়ে বাকি রোপওয়েগুলি। দুর্ঘটনাস্থলে ভারতীয় বায়ু সেনার দল রবিবারই ১১ জন পর্যটককে উদ্ধার করেন। বাকিদের সেদিন উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে ড্রোনের মাধ্যমে রাতের খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল পর্যটকদের। সোমবার ফের উদ্ধার কাজ শুরু হলে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আটকে পড়া কেবল কার থেকে হেলিকপ্টারে ওঠার সময়ে ভারসাম্য হারিয়ে দেড় হাজার ফুট নীচে পাহাড়ি খাদে পড়ে মারা যান ওই ব্যক্তি।

আটকে থাকা বাকি পর্যটকদের মধ্যে ৩২ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। মঙ্গলবার অর্থাৎ উদ্ধারকার্যের শেষদিনেও এক মহিলা হেলিকপ্টার থেকে দড়ি ছিঁড়ে নীচের পাথুরে জমিতে পড়ে যান। গুরুতর জখম অবস্থায় ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মাথায় চোট পেয়েই প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী ওই মহিলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পড়ে যাওয়ার ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছেন নেটনাগরিকেরা। মঙ্গলবার ১৪ জনকে উদ্ধারের মাধ্যমে বায়ুসেনার উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।  প্রায় ৭৬৬ মিটার দীর্ঘ এই রোপওয়েতে মোট ২৫ টি কেবল কার চলে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ভারতের অন্যান্য কেবল কার দুর্ঘটনাগুলির স্মৃতি উস্কে দেয়। অতীতের এমনই কিছু রোপওয়ে দুর্ঘটনার কথা ফিরে দেখা যাক -

গুলমার্গ গন্ডোলা দুর্ঘটনা

২০১৭ সালে জম্মু কাশ্মীরের বারমুল্লা জেলার জনপ্রিয় রোপওয়ে চলাচলের পথে গুলমার্গে গাছ পড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে। গাছ পড়ে কেবল কার ছিড়ে নিচে পড়ে যায়। এই ঘটনায় একই পরিবারের চার জন সদস্য সহ মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়। চারজনের ওই পরিবার দিল্লীর শালিমারবাগের বাসিন্দা এবং জয়ন্ত আন্দ্রাসকার, তার স্ত্রী মানশিয়া আন্দ্রাসকার এবং তাদের দুই মেয়ে অনঘা এবং জাহ্নবী হিসাবে চিহ্নিত করা হয় তাঁদের। মুখতার আহমেদ নামে এক ব্যক্তিও মারা গেছেন। প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকায় গাছটি ভেঙে যায় বলে তদন্তে জানা যায়। দুর্ঘটনার জেরে মাঝপথে আটকে পড়া ১৫০ যাত্রীকে পরে উদ্ধার করা হয়।

গুলমার্গ কেবল কারটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩,৭৮০ ফুট উচ্চতায় যাত্রী বহন করে। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেবল কার প্রকল্প, যার পরিবহন ক্ষমতা প্রতি ঘন্টায় ৬০০জন।

জম্মু কেবল কার দুর্ঘটনা


২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কিছুদিন আগেই রবিবার জম্মুতে নির্মাণাধীন জম্মু রোপওয়ে প্রকল্পের একটি কেবল কারে কাজের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিক নিহত ও চারজন আহত হয়েছিলেন। মহামায়া মন্দিরের কাছে কিছু প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটে।

সে সময় ছয় শ্রমিক বহনকারী একটি ট্রলি ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিহারের বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী রাকেশ কুমারের।

বিশাখাপত্তনমের ঘটনা

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশাখাপত্তনমের কৈলাসিগিরি হিল পার্ক থেকে নামার সময় একটি ট্রলি ছিঁড়ে যাওয়ায় সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ জেলা কর্তৃপক্ষ রোপওয়ের চলাচল স্থগিত করার নির্দেশে দেন ।

আরও পড়ুন-লিখেছিলেন বাংলা এনসাইক্লোপিডিয়া, বিস্মৃতির অতলে এই কৃতী বাঙালি

দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে রোপওয়ের ঝুড়িটি যে হুকের সাহায্যে তারের সাথে আটকে থাকে তা আলগা হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি ঘটেছে।

উত্তরাখণ্ডের দুর্ঘটনা


বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও পর পর কিছু বছর উত্তরাখণ্ডের রোপওয়েতে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে।২০১৬ সালের জুলাই মাসে এক ২৬ বছর বয়সী যুবক রোপওয়ে থেকে নীচের মন্দাকিনী নদীতে পড়ে গিয়ে মারা যায়। সেবছরই সেপ্টেম্বর মাসে একটি তিন বছরের বাচ্চা মেয়েও একই ভাবে রোপওয়ে থেকে নদীতে পড়ে যায়।
এর আগে ২০১৪ সালে নেপালের এক পর্যটকের হাত আটকে যায় রোপওয়ের দরজায়। পরে তাঁর হাত বাদ দেওয়া হয় বলেই জানা যায়। 

ছত্তিশগড় দুর্ঘটনা

গত বছর এই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। রাজনন্দগাও জেলার দোনগড়গড় এলাকায় তাঁর রোপওয়ে ট্রলিটি একটি টাওয়ারে ধাক্কা লাগায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বামলেশ্বরি মন্দিরের দর্শনার্থী পরিবহনের জন্য দুর্ঘটনার এক বছর আগেই এর উদ্বোধন হয়।
 

More Articles