একদিকে উঁকি দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন‍্যদিকে অলৌকিক হাতছানি! ভুতুড়ে হোটেল আপনার অপেক্ষায়

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ভুতুড়ে হোটেল সম্পর্কে।

ভুতুড়ে জিনিসপত্রর প্রতি কি আপনার অসীম কৌতূহল? আপনি কি অবসর সময়ে বন্ধ ঘরে একলা বসে হরর ফিল্ম দেখতে ভালবাসেন? ঘুরতে যাওয়ার সময়েও কি আপনি একইরকম রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে চান? তাহলে জেনে আপনি হয়তো বেশ অবাক হবেন যে, ভারতে এমন বিভিন্ন হোটেল আছে, যেখানে চেক-ইন করার মানেই হলো এরকম রহস্য-রোমাঞ্চের মধ্যে গিয়ে পড়া। ভূত দেখা থেকে শুরু করে অতর্কিত আর্তনাদ- এইসব হোটেলের গেস্ট এবং কর্মচারীরা হামেশাই সম্মুখীন হন এমন সব পরিস্থিতির। ফলত হোটেলগুলোর জুটেছে ভুতুড়ে হওয়ার কুখ্যাতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু ভুতুড়ে হোটেল সম্পর্কে। যাদের হৃদয় দুর্বল, তারা কিন্তু সাবধান!

ব্রিজ রাজভবন প্যালেস, রাজস্থান
এই প্রাসাদটি উনিশ শতকের গোড়ায় রাজস্থানের কোটায় তৈরি হয়। পরবর্তীকালে এটি ভারতের এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে আটের দশকে, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছিল। শোনা যায়, সিপাহি বিদ্রোহের সময় এই হোটেলের হলঘরেই সপরিবার হত্যা করা হয়েছিল বার্টনকে। সেই থেকে কথিত আছে যে, চার্লস বার্টনের আত্মা প্রায়শই এই ঐতিহাসিক বিল্ডিংটিতে ঘুরে বেড়ায়। হোটেলকর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মাঝেমধ্যই একটি ভাঙা ভাঙা ইংরেজি কণ্ঠ শুনতে পান। রাতের অন্ধকারে বুটের শব্দও পাওয়া যায়। তবে এই ঐতিহ্যবাহী হোটেলে কোনওদিনও কারও কোনওরকম ক্ষতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

তাজমহল প্যালেস হোটেল, মুম্বই
তাজমহল প্যালেস হোটেল হলো মুম্বইয়ের কোলাবা অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী বিলাসবহুল হোটেল। এটি ভারতের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া-র ঠিক পাশেই অবস্থিত। ৫৬০ কক্ষের এই পাঁচতারা হোটেলটি ভারতের অন্যতম সুন্দর এবং বিলাসবহুল হোটেল। ঐতিহাসিক খ্যাতি ছাড়াও, তাজ হোটেলটিকে ভারতের অন্যতম ভুতুড়ে হোটেল বলেও মনে করা হয়। কথিত আছে যে, এটি নির্মাণের সময় আর্কিটেক্ট-এর অনুমতি না নিয়েই এর ডিজাইনে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ডিজাইনটি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়। ওই আর্কিটেক্ট নিজের ড্রিম প্রোজেক্টের এহেন দশা দেখতে না পেরে বাধ্য হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। এখন এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাঁর আত্মা তাজ হোটেলেই বিরাজ করে বলে মনে করা হয়। অতিথি এবং কর্মীরা মাঝেমধ্যে হলগুলিতে তাঁর মুখোমুখি হয়েছেন বলে শোনা যায়। অনেকেই তাকে ছাদে হাঁটতে দেখেছেন বলেও শোনা যায়।

আরও পড়ুন: অশরীরীর কান্না, রহস্যময় গোলকধাঁধা! পুজোর ছুটিতে গা ছমছমে সফর সারুন নবাবদের শহরে

মরগ্যান হাউস, কালিম্পং
এবার চলে আসুন আমাদের নিজের রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গের একটি জনপ্রিয় হোটেলে। এই হোটেলে প্রবেশ করলেই দেখবেন, লনের এককোণে আকাশে আয়েশ করে গা এলিয়ে শুয়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাংলোটাকে এড়িয়ে চারপাশে দেখতে দেখতে প্রেমের ঘোর লাগবে। তারপরে দুরু দুরু বুকে ফের যদি তাকান বাংলোর দিকে, ছ্যাঁত করে উঠবেই বুকটা। ভূতে বিশ্বাস করেন না, চারপাশে ঝকঝকে রোদ, লনে উল গায়ে কুকুরছানা খেলছে। তারপরেও ভয় করবে। মরগ্যান হাউস এমনই। গেট ছাড়িয়ে ঢুকলেই মনে হবে, একটা ভুতুড়ে পোড়ো বাড়ি। বাড়ির গা-জুড়ে শিকড়বাকড়, লতানে গাছের সারি। ১৯৩০ সালে এই সাধের বাংলো তৈরি করেছিলেন জর্জ মরগ্যান। পাটের ব্যবসা ছিল তাঁর। দেদার টাকা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তিও মন্দ ছিল না। তখন তিন কিলোমিটার দূরের কালিম্পং শহর অনেকটাই আয়তনে ছোট। লোকজন কম, প্রকৃতি আরও উদার। এমন জায়গার প্রেমে না পড়ে থাকা যায়! মরগ্যান সাহেব স্ত্রী-কে নিয়ে এসে উঠলেন এই বাংলোয়। গ্রীষ্মে তো বটেই, পারলে সারা বছরই কাটান এখানে। একসময় সাহেব মারা গেলেন, তাঁর প্রিয়তমাও চোখ বুজলেন। নিঃসন্তান দম্পতি কোনও উত্তরাধিকারী রেখে যেতে পারেননি। ফলে, এই বাংলো চলে এল ভারত সরকারের হাতে। ১৯৬২-তে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু যখন অসুস্থ, ঠিক হলো, এই বাংলোটিকেই সরকারি রেস্ট হাউসে পরিণত করা হবে। কিন্তু, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই নেহরুর মৃত্যু। শোনা যায়, লেডি মরগ্যান অদ্ভুত ভালবাসতেন এই বাড়িকে। মৃত্যুর পরেও তাঁর সেই প্রেম ঘোচেনি। এখনও নাকি তিনি প্রায়ই দেখা দেন। ঘুরে বেড়ান হোটেল থুড়ি বাংলোর করিডরে, এমনকী, ঘরেও ঢোকেন। সাদা গাউন পরিহিতা লেডি মরগ্যানকে অনেকবার দেখেছেন বাংলোর পাহারাদাররা। তাঁর এবং মরগ্যান সাহেবের শোওয়ার ঘরে যে-সব অতিথিরা থাকেন, তাঁদেরও নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে অতীতে। এমনও জনশ্রুতি রয়েছে, পর্যটকদের মাথায় নাকি হাতও বুলিয়ে দিয়েছেন লেডি মরগ্যান।

হোটেল ফার্ন হিলস প্যালেস, উটি
১৮৪৪ সালে নির্মাণ করা হয় হোটেলটিকে। বলিউড সিনেমা 'রাজ'-এর শ্যুটিং চলাকালীন এই হোটেলে ছিলেন পুরো সিনেমার টিম। একদিন রাতে কোরিওগ্রাফার সরোজ খান, তাঁর টিম এবং বেশ কয়েকজন মানুষ শুনতে পান তাঁদের ওপরের তলায় জোরে চেয়ার সরানো হচ্ছে। কিন্তু রিসেপশনে ফোন করতে গেলে দেখেন, ফোন ডেড। পরদিন যখন হোটেল স্টাফদের তাঁরা এই বিষয় জানান, তখন তাঁরা জানতে পারেন, হোটেলে কোনও ওপরতলা বা আপার ফ্লোর নেই। অর্থাৎ, এটি একতলা হোটেল। এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন বন্ধ করে দেওয়া হয় হোটলটিকে।

হোটেল স্যাভয়, মুসৌরি

Hotel Savoy, Mussoorie

হোটেল স‍্যাভয়ে জমা রয়েছে আতঙ্কের আখ‍্যান

পূর্বোক্ত আলোচিত যে কোনও হোটেলের থেকে মুসৌরির হোটেলটি অনেক বেশি ভয়ানক। শোনা যায়, লেডি গার্নেট অরম নামে এক অশরীরী মহিলার অতৃপ্ত আত্মা হোটেলটির আনাচ-কানাচে ঘুরে বেড়ায়। কাহিনী অনুযায়ী এটির পূর্বতন মালকিন লেডি গার্নেটের প্রণয়ী ছিলেন এক ডাক্তার, যিনি গার্নেটকে ওষুধে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেন। কিছু বছর পর রহস্যজনক অবস্থায় সেই ডাক্তারের মৃতদেহও ওই একই জায়গায় পাওয়া যায়। এর ভয়াবহ কাহিনি দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। এর ওপর ভিত্তি করেই আগাথা ক্রিস্টি লেখেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘The Mysterious Affair at Styles’।

More Articles