অশরীরীর কান্না, রহস্যময় গোলকধাঁধা! পুজোর ছুটিতে গা ছমছমে সফর সারুন নবাবদের শহরে

পুজোর ছুটিতে ঘুরতে পারবেন এই ঐতিহাসিক শহর, তেমন অল্প-স্বল্প স্বাদও পেতে পারেন ইতিহাসের পাতায় রয়ে যাওয়া রহস্যের।

ভাদ্রর আকাশ জানান দিচ্ছে, পুজো আর মাত্র ক'টা দিন পরেই। ছুটি বলতে এই পুজোর সময়েই যা পাওয়া যায়, তাই মনের স্বাদ মেটাতে এক মুহূর্ত কেউ নষ্ট করতে চান না। তবে অনেকেই পছন্দ করেন অ্যাডভেঞ্চার, ছুঁতে চান রহস্যের নানা পরতকে। ভূতুড়ে, গা ছমছমে অভিজ্ঞতা লাভ করতে চাইলে এই ছুটিতে পাড়ি দিতে পারেন লখনউতে। রথ দেখা ও কলা বেচা দুই-ই হবে এই সুযোগে। পুজোর ছুটিতে ঘুরতে পারবেন এই ঐতিহাসিক শহর, তেমন অল্প-স্বল্প স্বাদও পেতে পারেন ইতিহাসের পাতায় রয়ে যাওয়া রহস্যের। এমনিতেই লখনউকে বলা হয় নবাবদের শহর।

এই শহরের অলিগলিতে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্য ও ইতিহাস। এখানে অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিরীহ মানুষ নবাবদের অত্যাচারে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর তাঁদেরই অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনও ঘুরে-ফিরে বেড়ায় লখনউতে। বিখ্যাত সিকান্দারবাগ, বড় ইমামবাড়া থেকে শুরু করে ওইএল হাউস এবং বলরামপুর হাসপাতালকে নিয়ে রয়েছে নানা রকমের ভয়ার্ত কাহিনি। আপনি যদি ভূতে বিশ্বাস না করেন, তাহলে একবার রাত কাটিয়ে আসতেই পারেন এই জায়গাগুলো থেকে। রইল হদিশ।

ওইএল হাউস
লখনউয়ের ওইএল হাউসটিকে নিয়ে এমন সব গল্প রয়েছে, যা আপনাকে সারারাত জাগিয়ে রাখবে। নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ-র বাসভবন ছিল এটা। ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের সময় বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ সৈনিককে মেরে কুয়োর ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়। ওখানকার স্থানীয় মানুষেরা এখনও বিশ্বাস করেন যে, ওই সৈন্যদের আত্মারা গোটা বাড়ি দখল করে রেখেছেন। এই ঘটনা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে, যখন একটি বাচ্চা ছেলেকে কুয়োর পাশে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন যে, বাচ্চাটি কুয়োতে ঢিল মেরে মৃত সৈন্যদের বিরক্ত করছিল বলে অকালে তাকে প্রাণ দিতে হয়।

OEL House

ওইএল হাউজ

বড় ইমামবড়া
বড় ইমামবড়ার ভেতরে এমন সব ম্যাজ রয়েছে, স্থাপত্য রয়েছে- যা দেখলে আপনার গা একটু হলেও ছমছম করবে। একবার যদি কোনও ব্যক্তি এর মধ্যে হারিয়ে যান, তাহলে তাঁর বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিলের। এছাড়াও এর ভেতরে প্রতিটা পরতে রয়েছে রহস্য। শোনা যায়, ব্রিটিশরা ভারতীয় পুরুষদের এর ভেতরে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখত!

Bara Imambara

বড় ইমামবড়া

বাড়া ইমামবড়ার সবথেকে আকর্ষণীয় জায়গা হলো এই ভুলভুলাইয়া। এখানে ১০২৪টি প্রবেশপথ রয়েছে; যেগুলির কোনও একটি দিয়ে আপনি ঢুকতে পারবেন। তবে বেরনোর পথমাত্র ২টি। তাই বহু মানুষ এখানে এসে হারিয়ে যান। এই গোলকধাঁধার জায়গাটি ইমামবড়ার একদম শীর্ষে অবস্থিত। ছোট ছোট অন্ধকার একাধিক সিঁড়ি অতিক্রম করতে করতে কখন খোলা বারান্দার ছাদে পৌঁছে যাবেন, তা বুঝতে পারবেন না। এই গোলকধাঁধাও সৃষ্টি করে ভৌতিক আবহাওয়া।

রেলওয়ে কোয়ার্টারস
এখানে গল্পটা শুরু হয়েছিল প্রেম দিয়ে, কিন্তু তার শেষটা মোটেও সুখকর ছিল না। এখানকার রেল কোয়ার্টারের একটি ঘর বরাদ্দ হয় বিল টার্নার নামে একজন ইঞ্জিনিয়ারের নামে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী এখানে থাকতেন। একদিন তিনি কাজ থেকে বাড়ি ফিরে তাঁর সুন্দরী স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখেন। আর তখনই তিনি তাঁর রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বন্দুক বের করে হত্যা করেন স্ত্রীকে। আর এরপর থেকেই এই কোয়ার্টারটি ভূতুড়ে বলে পরিচিত ওখানকার বাসিন্দাদের কাছে।

Railway Quarters

রেলওয়ে কোয়ার্টারস, লখনউ

সিকান্দরবাগ
লখনউয়ের অন্যতম বিখ্যাত জায়গা হলো সিকান্দরবাগ। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস, ভূতুড়ে রহস্য। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় বহু মানুষকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। তাঁদেরই আত্মা এখনও ছড়িয়ে রয়েছে ওখানে, এমন দাবি করেন অনেকে। সূর্যাস্তের পর আর কেউ ওখানে যান না, রাতে ওই এলাকা হিমশীতল হয়ে আসে বলে শোনা যায়। এছাড়াও অনেকেই নাকি ওখান থেকে কান্নার শব্দ এখনও শুনতে পান।

বলরামপুর হসপিটাল
লখনউ শহরে এই হাসপাতালকে দেখলেই যেন শরীরের সব রক্ত শীতল হয়ে যায়। শোনা যায়, ব্রিটিশরা একটি কবরস্থানের ওপর এই হাসপাতালটি নির্মাণ করেছিলেন। যাঁরা নিজেদের সাহসের ওপর যথেষ্ট ভরসা করেন, তাঁরা চাইলে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন এই হাসপাতালের, তবে এখনও পর্যন্ত নাকি সেখানে কিছু সমাধিও দেখতে পাওয়া যায়। এই হাসপাতালের রোগীরাও বিভিন্ন সময়ে নানা ভৌতিক ঘটনা অনুভব করেছেন বলে শোনা গেছে। তাই দুর্বল হৃদয়ের মানুষদের জন্য এই স্থানগুলো একেবারেই নিরাপদ নয়।

More Articles