কাটলেট-কবিরাজির সেরা ঠিকানা! এবার পুজোয় উত্তরে হোক সন্ধের পেটপুজো

Nonveg snacks of North Kolkata: উত্তর কলকাতায় কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে সুস্বাদু খাবার হাসিমুখে পরিবেশন করে মন জয় করেছে।

ফিশ ফ্রাই, ডিমের ডেভিল, চিকেন কাটলেট, মাটন কবিরাজি- নামগুলোই মানুষের জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ঠ। সুস্বাদু খাবারের গন্ধে অর্ধেক খাওয়া হয়ে যায়। সেই কথা টেনে বলা যেতেই পারে যে, সুস্বাদু খাবারের নাম শুনলে হয়তো সেই খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। সুস্বাদু খাবারের নামের সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের নাম- তাহলে তো কথাই নেই। উত্তর কলকাতায় কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে সকলের পরিচিত এই সুস্বাদু খাবারগুলি হাসিমুখে পরিবেশন করে আমাদের মন জয় করেছে।

মিত্র কাফে আমাদের সকলের পরিচিত একটা নাম। বর্তমানে কলকাতা এবং কলকাতা ছাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকায় তাদের শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের বিভিন্ন শাখায় হরেকরকম খাবার পাওয়া গেলেও মিত্র কাফে-র পরিচিতি সৃষ্টি করা খাবারগুলো আজও তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছে। ফিশ ডায়মন্ড ফ্রাই, ব্রেন চপের মতো পদগুলি মিত্র কাফে-র নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। একইসঙ্গে রয়েছে তাদের অন্যান্য পদের থেকে একেবারে আলাদা ধরনের এক পদ। মিত্র কাফে-র নাম শুনলে পুডিংয়ের নাম প্রথমে মাথায় না এলেও বহু মানুষের মধ্যে এই পদ বেশ জনপ্রিয়। ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার আগে থেকেই মিত্র কাফে-র পথ চলা শুরু হয়েছিল।

Mitra Cafe

জমজমাট মিত্র কাফে

১৯১০ সালে সুশীল রায়ের হাত ধরেই শোভাবাজারে মিত্র কাফে-র পথ চলা শুরু হয়। সুশীল রায়ের বন্ধু গণেশ মিত্র তাকে শোভাবাজারের এই জমিটি বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে দিয়েছিলেন। সুশীল রায়ের সেই মিত্র পদবি-র মিত্র-র সৌজন্যে 'মিত্র কাফে' তার নাম পেয়েছিল। ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ ডায়মন্ড ফ্রাই, ব্রেন চপ, মাটন কবিরাজি-র মতো হরেকরকম খাবার মিত্র কাফে-র মেনুতে জায়গা করে নিয়েছে। সময়ের সঙ্গে খাদ্যতালিকা বড় হয়েছে। তালিকায় যোগ হয়েছে মোগলাই পরোটা, চাউমিন এবং অন্যান্য আরও অনেক কিছু। মিত্র কাফে-র চকলেট পুডিং আমাদের পরিচিত পুডিংয়ের থেকে কিছুটা আলাদা। যারা আইসক্রিম সন্দেশ খেয়েছে, তারা এই পুডিংয়ের স্বাদের সঙ্গে খুব সামান্য মিল খুঁজে পাবে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় মিত্র কাফে-র ঝাঁ-চকচকে শাখা দেখা গেলেও শোভাবাজারের রাস্তার পাশে সেই ছোট কেবিন আজও মানুষের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বজায় রেখেই চলেছে।

আরও পড়ুন: চিকেন স্টু থেকে মালাই টোস্ট, আজও কলকাতার খাবারের সেরা ঠিকানা এই একচিলতে গলি

১৯২২ সালে নিরঞ্জন হাজরা গিরিশ পার্কের কাছেই শুরু করেছিলেন তাঁর ছোট দোকান। সেই দোকান আজ মানুষের কাছে 'নিরঞ্জন আগার' নামে পরিচিত। ডিমের ডেভিল বহু মানুষের কাছেই খুব প্রিয় একটা খাবার। নিরঞ্জন আগার-এর ডিমের ডেভিলের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। বহু দোকানে ডিমের ডেভিলে মুরগির ডিম ব্যবহৃত হলেও নিরঞ্জন আগার-এ আজ অবধি হাঁসের ডিম ব্যবহৃত হয়। সেদ্ধ হাঁসের ডিমের চারপাশে থাকা খাসির মাংসের কিমা-র আস্তরণ নিরঞ্জন আগার-এর ডিমের ডেভিলের স্বাদ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। নিরঞ্জন আগার-এ মাছের তৈরি বিভিন্ন পদ থাকলেও তাদের থেকে বেশি জনপ্রিয় একটি নিরামিষ পদ। এই দোকানের ভেজিটেবল চপকে প্রকৃত অর্থেই জাম্বো ভেজিটেবল চপ বলা যেতে পারে। আমাদের পরিচিত ভেজিটেবল চপের তুলনায় আকারে অনেকটা বড় এবং ভেতরে পুরে ঠাসা চপ মানুষের জিভে জল আনার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া লিভার কারি, ফাউল কাটলেটের মতো বিভিন্ন পদের কথা মানুষের জিভে জিভে ঘোরে। সকালে একবার দোকান খুললেও বিকেল চারটের পরই এই দোকানের জনপ্রিয় পদগুলি প্লেটে করে মানুষের সামনে উপস্থিত হয়।

Niranjan Agar

নিরঞ্জন আগার-এর মেনুতে পদে পদে চমক

হাতিবাগানে টাউন স্কুলের বিপরীতে সিকদারবাগানের রাস্তায় একটু এগিয়ে রয়েছে একটি খাবারের দোকান। দোকান না বলে ছোট একটা স্টল বলাই ভালো। দুটো মাঝারি আকারের টেবিলে খাবার রেখে বিক্রি করা হয়। বসার জায়গা নেই। খাবার কিনে দাঁড়িয়ে খেতে হয়। দোকানের বোর্ডে খাদ্যতালিকার ওপরে লেখা 'আদি মালঞ্চ কর্মীবৃন্দ' রেস্টুরেন্ট। সেই সবকিছু পরোয়া না করেই বহু মানুষ ভিড় করে এই দোকানের সামনে। কাগজের প্লেটে ফিশ ফ্রাই, ডিমের চপ, ফিশ কবিরাজি, চিকেন কাটলেট, মোগলাই পরোটা অথবা এই দোকানের বিখ্যাত নানপুরী। বিভিন্ন বয়সের মানুষ সারা বছর এই স্টলের সামনে খাবার কেনার লাইনে দাঁড়ান। বর্তমান যুগের ঝাঁ-চকচকে দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই দোকান নিজের সুনাম বজায় রেখেছে শুধুমাত্র নিজের তৈরি করা খাবারের স্বাদের মধ্য দিয়ে।

Adi Malancha

আদি মালঞ্চ এখনও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে

বহু বছরের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এই দোকানগুলোর জনপ্রিয়তা বজায় রাখার একমাত্র কারণ চটজলদি, সুস্বাদু খাবার। দুর্গাপুজোর সময়ে সবক'টি দোকানেই মানুষের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি থাকে। তবুও দুর্গাপুজোর সময় হোক অথবা বছরের অন্য কোনও সময়, যদি কেউ এয়ারকন্ডিশন এবং হাল ফ্যাশনের টেবিল-চেয়ার থাকা রেস্টুরেন্টের মায়া ত্যাগ করে শুধুমাত্র সুস্বাদু চপ, কাটলেটে একটা কামড় বসাতে চায়, তাহলে সে এই জাঁকজমকহীন অথচ জনপ্রিয় দোকানগুলিতে যেতেই পারে।

More Articles