পথচলা সাঙ্গ হল ওয়েস্টল্যান্ডের, বিখ্যাত লেখকদের বইগুলির ভবিষ্যত কী?

অবশেষে নিজের দীর্ঘ প্রকাশনার ইতিহাসে সরকারি ভাবে যবনিকা টানল ওয়েস্টল্যান্ড বুকস। আগেই এক বিজ্ঞপ্তিতে ওয়েস্টল্যান্ডের মালিক অ্যামাজন জানিয়েছিল প্রকাশনা সংস্থার ব্যবসা থেকে তাঁরা নিজেদের সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য কোনো সংস্থা ওয়েস্টল্যান্ডের মালিকানা গ্রহণে ইচ্ছুক না হওয়ায় ৩১ মার্চ ২০২২ পথচলা শেষ করল ওয়েস্টল্যান্ড।

কিন্তু এখানেই যাবতীয় সম্ভাবনার অপমৃত্যু নয়। ওয়েস্টল্যান্ড বন্ধ হয়ে গেলেও ওয়েস্টল্যান্ডের প্রাক্তন সিইও গৌতম পদ্মনাভন এবং প্রকাশক কার্তিকা ভিকে যৌথ ভাবে ওয়েস্টল্যান্ডের প্রাক্তন কর্মচারীদের নিয়ে এক নতুন প্রকাশনা সংস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন। বেঙ্গালুরুর সংস্থা নাসাদিয়া টেকনোলজির মালিকানাধীন সংস্থা প্রতিলিপি ডট কমে প্রায় ১২ টি ভারতীয় ভাষায় লেখকরা তাদের বিভিন্ন ধরনের লেখা পাঠকদের পড়ার এবং আলোচনা করার সুযোগ পাবেন। এটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এই নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রতিলিপির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রঞ্জিত প্রতাপ সিং।

জানা যাচ্ছে শীঘ্রই ওয়েস্টল্যান্ডের বিকল্প হিসেবে একটি নতুন প্রকাশনা সংস্থা শুরু করবে এই দলটি। ওয়েস্টল্যান্ডের সম্পাদকীয়, প্রকাশনা এবং বিপণন বিভাগের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের প্রায় সকলেই এই নতুন প্রকাশনা সংস্থায় পুরোনো পদে নিযুক্ত হয়েছেন। জুন থেকে এই নতুন প্রকাশন সংস্থার কাজ শুরু করার কথা প্রাথমিক ভাবে নির্ধারিত হয়েছে। ওয়েস্টল্যান্ডের যেসব কর্মচারী এই নতুন সংস্থায় যোগদান করেছেন সেই তালিকায় রয়েছেন ওয়েস্টল্যান্ডের প্রাক্তন প্রকাশক কার্তিকা ভিকে, কনটেক্সট ইমপ্রিন্টের প্রাক্তন ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি অজিথা জিএস, ভাষা বিষয়ক বিভাগের প্রাক্তন প্রকাশক মীনাক্ষী ঠাকুর , শিশুসাহিত্যের প্রকাশনা সংস্থা রেড পান্ডার প্রাক্তন প্রকাশক বিধি ভার্গব এবং ওয়েস্টল্যান্ডের প্রাক্তন সিইও গৌতম পদ্মনাভন। 

এই উদ্যোগ কি ওয়েস্টল্যান্ড প্রকাশনারই নতুন মোড়ক?

নতুন উদ্যোগের নাম কী হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। নাম যাই হোক, এটি যে মূলত প্রকাশনার জগতেই নতুন করে কাজ শুরু করবে তা এক প্রকার নিশ্চিত। এমনকী ভারতের বাজারে অতীতে বিভিন্ন বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা যেমন ট্রাঙ্কেবার, ওয়েস্টল্যান্ড, একা (অনুবাদ সাহিত্যের জন্য বিখ্যাত) এবং রেড পান্ডার বই ও নতুন করে প্রকাশের দায়িত্ব নেবে এই নতুন সংস্থা, সূত্রের খবর এমনটাই।

আরও পড়ুন-ধর্মতলার লেনিন থেকে ভিক্টোরিয়ার পরী, ফিরে দেখা স্ট্যাচুর শহর কলকাতা

অ্যামাজনের সঙ্গে বই প্রকাশনা বিষয়ক আলোচনা সফল হলে, নতুন সংস্থাটি পুরনো নামেই বইগুলো ছাপবে। যদি কোনও কারণে অ্যামাজনের অনুমতি না মেলে তবে বিকল্প নাম ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে এই সংস্থা ১৯৬২ তে প্রতিষ্ঠিত ‘ইস্ট ওয়েস্ট বুকস’কে নতুন করে সাজাবার উদ্যোগ নিতে পারে। ‘ইস্ট ওয়েস্ট বুকস’ ২০০৮ সালে অ্যামাজন কিনে নেওয়ার পরে নতুন নামকরণ হয় ‘ওয়েস্টল্যান্ড’।

কিন্তু ওয়েস্টল্যান্ড প্রকাশনার অধীনে যে সমস্ত লেখক বই প্রকাশ করতেন তাদের কাছে এই রদবদল কতটা অর্থবহ হবে? ওয়েস্টল্যান্ড বন্ধের ঘোষণার পর লেখক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল ওয়েস্টল্যান্ড প্রকাশিত বই গুলির ভবিষ্যৎ কী? ইতিমধ্যেই ওয়েস্টল্যান্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তাদের বইগুলি ভারতীয় বইবাজার থেকে তুলে নেওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। এই উদ্যোগ কি সেই আশঙ্কায় খানিক আশা জোগাবে? 

অ্যামাজন ওয়েস্টল্যান্ড বন্ধের ঘোষণা করার পরে ওয়েস্টল্যান্ড থেকে সমস্ত লেখকদের জানানো হয়, প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যাবতীয় চুক্তি ৩১ মার্চ, ২০২২ এ শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তীকালে প্রকাশনা সংস্থাটি যদি অন্য কোনও ব্যবসায়িক সংস্থা কিনে নেয় তখন আবার নতুন করে পুরোনো চুক্তিগুলির ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা হবে।  

এই নতুন সংস্থা যদি ওয়েস্টল্যান্ড প্রকাশিত বইয়ের লেখকদের বইগুলিকে নতুন করে প্রকাশ করতে উদ্যোগ নেয় তবে তাদের কে আইন মাফিক নতুন করে লেখকদের সঙ্গে চুক্তির পথে হাঁটতে হবে। ইতিমধ্যেই ওয়েস্টল্যান্ড ও একা পাবলিশিং এর বেশ কয়েকজন লেখক সদ্য তৈরি হওয়া কোম্পানিটির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ কথা ঠিক লেখকরা যদি সত্যিই এই নতুন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন তাহলে প্রকাশনার জগতে এই সংস্থা খানিক হলে ও বাড়তি অক্সিজেন পাবে, কমবে প্রাথমিক বিনিয়োগের ঝক্কিও। তবে ব্র্যান্ড বড় বালাই। নতুন ইমেজ তৈরি করতে এই নতুন সংস্থাটি ওয়েস্টল্যান্ডের তালিকায় থাকা সমস্ত বই পুনঃপ্রকাশ করতে উদ্যোগী না ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওয়েস্টল্যান্ডের পুরনো বইগুলির ভাগ্য কী হবে, লেখকদের রয়্যালটির কী হবে, তা নিয়ে সংশয় ও রয়েছে লেখক ও পাঠক মহলে।

More Articles