কোন ব‍্যাঙ্কের মেয়াদি আমানত দেবে সর্বোচ্চ লাভ? অ্যাকাউন্ট খুলতে যে তথ্য জানতেই হবে

Fixed Deposit: চলুন জেনে নেওয়া যাক, এসবিআই থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক কত শতাংশ সুদ দেয় মেয়াদি আমানতের ওপর।

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক-সহ ভারতের সবথেকে বড় কয়েকটি ব্যাঙ্ক তাদের মেয়াদি আমানতের ওপরে সুদের হার পরিবর্তন করেছে বিগত কয়েকদিনে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বারা লাগাতার রেপো রেট বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন কারণবশত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি। তাই যদি আপনি নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে একটি মেয়াদি আমানত অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনার অবশ্যই জানা উচিত, কোন ব্যাঙ্কে আপনি সুদ পাবেন সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি, ক'বছরের মেয়াদি আমানতে কত শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে কোন ব্যাঙ্ক? এটাও কিন্তু জানা দরকার। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, এসবিআই থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক কত শতাংশ সুদ দেয় মেয়াদি আমানতের ওপর, আর কোন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট করলে আপনার লাভ সবথেকে বেশি।

আরও পড়ুন: ঝুঁকি নেই, সুদের হার সবচেয়ে বেশি, রইল PPF-এ বিনিয়োগের খুঁটিনাটি

এক বছরের ফিক্সড ডিপোজিট
এক বছরের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সুদ দিয়ে থাকে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক। একটু অবাক করা বিষয় হলেও ভারত সরকারের অধীনস্থ এই ব্যাঙ্কটি সবথেকে বেশি সুদ অফার করে তাদের গ্রাহকদের। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এক বছরের ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৬.১০ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের সুদের হার হয়ে থাকে ৬.২৫ শতাংশ। আর, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এক্ষেত্রে ৬.৩০ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে, যা অন্যান্য ব্যাঙ্কের তুলনায় সবথেকে বেশি।

২ বছরের ফিক্সড ডিপোজিট
দু'বছরের মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে চিত্রটা একধাক্কায় অনেকটা পাল্টে যায়। দু'বছরের ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক সবথেকে বেশি সুদ অফার করে থাকে, যা ৬.৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক ৬.৪০ শতাংশ সুদ অফার করে থাকে। আর স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক দিয়ে থাকে ৬.২৫ শতাংশ হারে সুদ।

৩ বছরের ফিক্সড ডিপোজিট
তিন বছরের ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে তিনটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সবথেকে বেশি সুদ অফার করে। অর্থাৎ আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক আপনাকে সবথেকে বেশি সুদ দেবে এক্ষেত্রে। তিন বছরের মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে এই তিনটি ব্যাংকের সুদের হার ৬.৫০ শতাংশ। অন্যদিকে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এক্ষেত্রে ৬.১০ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে।

৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিট
এই ধরনের ফিক্স ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট সাধারণত ভারতে খুব কম মানুষ করেন। ৫ বছরের ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক সবথেকে বেশি সুদ অফার করে থাকে, ৬.৬০ শতাংশ। এরপরে আসে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, যারা ৬.৫০ শতাংশ সুদ দিয়ে থাকে। সবশেষে আসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, যারা ৬.১০ শতাংশ সুদ দেয়।

এফডি থেকে পাওয়া সুদের ওপর দিতে হয় ট্যাক্স
ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট কোনওরকম আয়কর ছাড়ের সুবিধা আপনাকে দেয় না। অর্থাৎ, সহজ ভাষায় বলতে গেলে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট থেকে আপনি যত পরিমাণ সুদ পাবেন, তার ওপরে কিন্তু আপনাকে অতিরিক্ত আয়কর দিতে হবে। আপনার ফিক্স ডিপোজিট থেকে প্রাপ্ত সুদ আপনার মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে। এবং আপনার সর্বমোট আয়ের ওপর নির্ভর করেই ট্যাক্স স্ল্যাব তৈরি করা হয়। তবে, FD থেকে প্রাপ্ত আয় 'ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস' অর্থাৎ, বিকল্প পথ থেকে আয়ের ক্যাটেগরিতে যুক্ত হয়। তাই এখানে আপনাদের TDS চার্জ দিতে হয়। যখনই আপনার ব্যাংক আপনার একাউন্টে সুদের টাকা জমা করে, সেই সময় এই TDS কেটে নেওয়া হয়।

ফিক্সড ডিপোজিটের সঙ্গে জড়িত কিছু পয়েন্ট
১. যদি আপনার সর্বমোট আয় বার্ষিক ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে কম হয় তাহলে ফিক্সড ডিপোজিট এর উপরে TDS কাটা হয় না। তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে আয়কর ফর্ম 15G বা 15H জমা করতে হয়। তাই যদি আপনি আপনার TDS বাঁচাতে চান তাহলে অবশ্যই এই দুটি ফর্ম এর মধ্যে যেকোনো একটি ফর্ম পূরণ করুন।

২. যদি আপনার সমস্ত ফিক্স ডিপোজিট থেকে আপনার সর্বমোট সুদের আয় ৪০,০০০ টাকা থেকে কম হয় তাহলে আপনার টিডিএস কাটা হয় না। সেখানেই যদি আপনার সুদের আয় প্রতিবছরে ৪০, হাজার টাকা থেকে বেশি হয়, তাহলে ১০% টিডিএস কাটা হয়। অন্যদিকে, প্যান কার্ড না দিলে ২০% টিডিএস কাটা হয়।

৩. আপনার বয়স যদি ষাট বছরের কম হয় তাহলে ফিক্সড ডিপোজিটের এই সুদের আয়ের লিমিট ৪০,০০০ টাকা হয়ে থাকে। সেখানেই যদি আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয় তাহলে এই স্ল্যাব ৫০,০০০ টাকা করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে সিনিয়র সিটিজেন ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে। জেনারেল ফিক্সড ডিপোজিট খুললে কিন্তু এই সুবিধা পাওয়া যাবে না।

৪. যদি আপনার ব্যাংক টিডিএস কেটে নিয়ে থাকে এবং আপনার সর্বমোট আয় আয়করের স্ল্যাব থেকে নিচে থাকে তাহলে আপনি ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করার সময় আপনার কেটে যাওয়া টিডিএস পুনরায় ক্লেম করতে পারেন। ক্লেম করার কিছু দিনের মধ্যেই আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুনরায় এই টাকা ক্রেডিট করে দেওয়া হয়।

More Articles