ঝুঁকি নেই, সুদের হার সবচেয়ে বেশি, রইল PPF-এ বিনিয়োগের খুঁটিনাটি

আপনি কি চাকরি করেন অথবা ব্যবসা? আপনার পুরো বছরের উপার্জনের ওপর কি সরকারকে প্রচুর কর দিতে হয়? নিজের উপার্জনের যে অংশটা জমানো যেত বা বিনিয়োগ করা যেত নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য তা কি সরকারকে কর দিতে দিতে জমানো হচ্ছে না? বা আপনি কি সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য কোনও ভালো জায়গা খুঁজছেন? তবে এই প্রতিবেদন আপনারই জন্য। আসুন আপনার পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক PPF বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঙ্গে। 

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কী? : 

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) হল কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থিত একটি করমুক্ত সঞ্চয় ব্যবস্থা। পিপিএফ প্রাথমিকভাবে ১৯৬৮ সালে অর্থ মন্ত্রক দ্বারা ভারতীয়দের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এবং বেসরকারি সুরক্ষায় কর্মরত ব্যক্তিদের অবসর জীবনকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য চালু করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডকে অন্যতম সেরা কর সাশ্রয়কারী বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এই আমানতের উপর অর্জিত সুদ করযোগ্য নয়। এছাড়াও, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ স্কিমে জমা আমানতগুলি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অবধি কর ছাড়ের দাবি করতে ব্যবহৃত হতে পারে, ভারতীয় আয়কর আইনের বিভাগ ৮০ সি এর নিয়ম অনুযায়ী। পিপিএফ একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ব্যবস্থা হওয়ার কারণে বহু মানুষ এই ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে দ্বিমত প্রকাশ করেন, কিন্তু বর্তমান দিনে পিপিএফ এর থেকে সুনিশ্চিত, বিপদ মুক্ত, কর সাশ্রয়ী এবং উচ্চ রিটার্ন যুক্ত ফান্ড খুব কমই আছে বিনিয়োগের বাজারে।  

কিন্তু এই ফান্ডে বিনিয়োগের আগে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জেনে রাখা উচিত।  নীচে সেগুলি একে একে বর্ণনা করে দেওয়া হলো -

১. পিপিএফ- বর্তমান সুদের হার :

বর্তমানে ভারতবর্ষে এই ফান্ড থেকে পাওয়া সুদের হার ৭.১০% যা ব্যাংকের বা অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সুদের হারের থেকে বেশি। পিপিএফ-এর সুদ প্রতি মাসে হিসাব করে জমা করা হয় এবং প্রতিবছর চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে। 

২. সুদের হিসেব কী ভাবে রাখা হয়? 

আপনি আপনার পিপিএফ অ্যাকাউন্টে অন্তত ৫০০ থেকে সর্বাধিক ১,৫০,০০০ টাকা অবধি জমা করতে পারেন প্রতি বছরে। প্রতিমাসের ৪ তারিখের মধ্যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দিলে পুরো মাসের সুদ অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যায়। যারা বছরে একবারই বিনিয়োগ করেন তারা প্রতিবছর ৪ এপ্রিল এর আগে বিনিয়োগ এই অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করে দেন এবং পুরো বছরের সুদ আদায় করেন। 

৩. স্কিমের সময়কাল :

পিপিএফ প্রকল্পের মেয়াদ অন্তত ১৫ বছর। অর্থাৎ পিপিএফ অ্যাকাউন্ট এর ম্যাচিউরিটির সময়কাল অন্তত ১৫ বছর। যদিও আপদকালীন সময়ে জমানো অর্থ তুলতে হলে অ্যাকাউন্ট খোলার ৭ বছর পর তোলা যেতে পারে। তার আগে টাকা তুলতে হলে অন্তত ৪ বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক। একে লক ইন পিরিয়ড ও বলা হয়ে থাকে। 

৪. পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম :

একজন মানুষের একটিই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। এই ক্ষেত্রে কারোর নামে কোনও যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না। 

৫. পিপিএফ অ্যাকাউন্টের সর্বনিম্ন এবং সর্বাধিক আমানতের পরিমাণ :

বছরে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অবধি বিনিয়োগ করা যায় এই অ্যাকাউন্টে।

৬. আয়করে ছাড় :

এই অ্যাকাউন্টে বাৎসরিক দেড় লাখ টাকার থেকে বেশি যে কোনও বিনিয়োগ আয়কর বিভাগের ৮০ সি আইন দ্বারা আয়কর মুক্ত হবে না। আয় করে ছাড় পেতে গেলে বাৎসরিক দেড় লাখ টাকাই বিনিয়োগের হিসাব দেখাতে হবে প্রতি বছর নিজের আয় কর জমা দেওয়ার সময়। এবং পিপিএফ থেকে পাওয়া সমস্ত উপার্জন ট্যাক্সের আওতায় পড়ে না। 

৭. পিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধক রেখে লোন :

আপনি আপনার পিপিএফ অ্যাকাউন্ট বন্ধক রেখে প্রয়োজনে লোন নিতে পারেন। তবে তা অন্তত অ্যাকাউন্ট খোলার ৩-৫ বছর পর। 

৮. পিপিএফ অ্যাকাউন্টের সম্প্রসারণ :

পনেরো বছরের মেয়াদ ফুরানোর পর পিপিএফ অ্যাকাউন্ট ৫ বছরের জন্য বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে আবার। এবং আপনি এটা আজন্মকাল অবধি বাড়িয়ে যেতে পারেন প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর। 

আরও পড়ুন-বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছেন? আইপিও সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য জানুন...

৯. কীভাবে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু রাখবেন? 

প্রতিমাসে মাত্র ৫০০ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট চালু থাকে।  যে কোনও কারণে যদি কখনও এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায় তবে প্রতি মাসে ৫০ টাকা জরিমানা কাটা হয় অ্যাকাউন্ট থেকে। 

১০. দেউলিয়া হয়ে গেলে ঋণ মুক্তির ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্টের ভূমিকা :

একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট কখনোই দেউলিয়া ঘোষিত হওয়া ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করার জন্য ব্যবহার করা যায় না। এমন কি কোর্ট ও এই নির্দেশ জারি করতে পারে না। অর্থাৎ আপনার সঞ্চিত অর্থ পিপিএফ অ্যাকাউন্টে একপ্রকার চির সুরক্ষিত।

More Articles