দার্জিলিং নয়, চা-বাগানে ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রাম থেকেই দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্রেষ্ঠ রূপ

এখানে আসার শ্রেষ্ঠ সময় হল নভেম্বর থেকে মার্চ মাস। বিশেষ করে আপনি যদি কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দর্শন করতে চান। তবে সারা বছরই এখানে আসা যায়।

যতদিন যাচ্ছে, তত দেখা যাচ্ছে যে গ্রীষ্মের প্রকোপ যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব টের পেতে আর অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের সমতলের মানুষ, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের, তাদের জন্য উত্তাপের সঙ্গে জুড়ে যায় ভীষণ আর্দ্রতা। সব মিলিয়ে বাঙালি একেবারে নাজেহাল, এবং হাতে যেটুকুই ছুটি থাক না কেন, সকলের গন্তব্য সেই পাহাড়।

কিন্তু এক জায়গায় বেশি বার যাওয়াও বিশেষ পছন্দ নয় বাঙালির। তাই তাদের কাছে এখন আর পাহাড় মানেই দার্জিলিং, গ্যাংটক, কালিম্পং নয়। এখন সবাই যান চটকপুর, সিটং-আহালদারা, রাবাংলার মতো অফবিট জায়গায়, যেখানে তুলনামূলকভাবে মানুষের ভিড় কম। যেখানে পাহাড়ি গ্রামের স্বাদ পাওয়া যায়, যেখানে হোম স্টে-র জানলা দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাওয়া যায়, যেখানে চোখকে আরাম দেয় হাজার হাজার পাহাড়ি গাছের সবুজ রং। যেখানে আশপাশের জায়গা ঘুরে দেখা যায় পায়ে হেঁটেই।

এমনই আরও এক জায়গার সন্ধান দেব আজ। যেখানে চারদিকে অপূর্ব সুন্দরী সব সবুজ পাহাড়, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ঝরনা, একাধিক নদী, বন্য পশু, রংবেরঙের পাখি, ট্রেকিং-সহ বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সুবিধা, সাজানো পরিচ্ছন্ন সুন্দর গ্রাম, দুর্ধর্ষ সব হোম স্টে, এবং রাতে সেই গ্রাম থেকে দার্জিলিং শহরের ভিউ- এই সবকিছুই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: দিঘা-পুরী-দার্জিলিং নয়, বাঙালির মনে জায়গা পাকা করছে চটকপুর

টাইগার হিলের নিচে চা বাগানে ঘেরা ছোট্ট এই গ্রামটির নাম হল রঙ্গারুন। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব মাত্র ১৬ কিলোমিটার।

প্রবেশ করতেই এই গ্রাম আপনাকে স্বাগত জানাবে রাস্তার ধারে ফুলে ঘেরা বসার জায়গা দিয়ে। ১৭৭৬ সালে ব্রিটিশদের তৈরি চা বাগান এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। নাম, রঙ্গারুন টি এস্টেট। চা বাগানের শেষে নদী, এবং সেই নদীর ওপারেই বাঙালির প্রিয় দার্জিলিং। এই পুরো গ্রামটি একেবারে সেনচাল অভয়ারণ‍্যর বুকে অবস্থিত।

গ্রামে ঢোকার আগে আপনি পাবেন ঘন জঙ্গল, যেখানে বন্যপ্রাণীদের দেখা পাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। যে জীবজন্তুরা প্রায়ই গ্রামের ভেতর চলে আসে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও মানুষের ক্ষতি করেনি। হ্যাঁ, তাদের বাসস্থান মানুষে কেড়ে নেওয়া সত্ত্বেও।

তারপর গ্রামে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই আপনি আবিষ্কার করবেন বেশ কিছু ঝরনা, যা রঙ্গারুনের বুক চিরে গিয়ে মিশেছে নদীতে। সেই ঝরনাগুলিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে রডোডেনড্রন এবং ম্যাগনোলিয়া গাছ।

রঙ্গারুন টি এস্টেটে একটি ব্রিটিশ আমলের চা কারখানা আছে। যা এখন মিউজিয়াম। আপনার সৌভাগ্য হলে টি এস্টেটের কোনও কর্মী আপনাকে পুরো জায়গাটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবেন। যেখানে আপনি ব্রিটেন থেকে আনা ব্রিটিশদের ব্যবহৃত সমস্ত যন্ত্রপাতি পাবেন।

তার পর আপনি ঘুরে দেখতে পারেন পুরনো বাংলো, যা ১৮৬০-'৭০ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছিল, এখন তা আছে ব্যক্তিগত মালিকানায়। ভেতরে ঢুকলে আপনি খুব সুন্দর এক বাগান পাবেন, সেই সঙ্গে অনেক পুরনো কিছু পেন্টিং এবং প্রাচীন ও বহুমূল্যবান আসবাবপত্র। সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন গ্রামের একমাত্র মন্দিরে।

এই গ্রাম থেকে আপনি চাইলে ট্রেক করে যেতে পারেন টাইগার হিলে, বা নদীবক্ষে। তবে যদি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ট্রেক করে টাইগার হিল যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবহাওয়া ভালো থাকলে রঙ্গারুনই আপনাকে স্লিপিং বুদ্ধর যা রুপ দেখাবে, তাতে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেনই। সেই সঙ্গে চোখে পড়বে দার্জিলিং শহর। আপনার প্রাণের দার্জিলিংকে একেবারে অন্য রূপে দেখবেন, ১৬ কিলোমিটার দূরে বসে।

এখানকার হোম স্টে-গুলোরও খুব সুখ্যাতি আছে অতিথিপরায়ণতার জন্য। তারা যেভাবে তাদের অতিথিদের যত্ন করেন, তা খুবই প্রশংসনীয়।

রঙ্গারুন থেকে কাছেই আরও কিছু ঘুরে দেখার মতো জায়গা রয়েছে। যেমন দাওয়াইপানি, তিনচুলে, চটকপুর, চিত্রে, চোটামাংয়ার মতো আরও সব সুন্দর জায়গা।

এখানে আসার শ্রেষ্ঠ সময় হল নভেম্বর থেকে মার্চ মাস। বিশেষ করে আপনি যদি কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দর্শন করতে চান। তবে সারা বছরই এখানে আসা যায়। একেক ঋতুতে এই গ্রাম একেক রূপে ধরা দেয়।

তাহলে আর দেরি কীসের? তাপপ্রবাহ, শহরের দ্রুত, ব্যস্ত জীবন, চূড়ান্ত দূষণ ইত্যাদি ক'দিনের জন্য দূরে ঠেলে বেরিয়ে পড়ুন, রঙ্গারুনে গিয়ে বুক ভরে তাজা বাতাস গ্রহণ করে আসুন।

More Articles