গরম থেকে মুক্তি দেবে সোলার এসি, বেঁচে যাবে ইলেকট্রিক বিলের খরচ, জেনে নিন কীভাবে

শুধুমাত্র খরচই কম নয়, সোলার এসি ব্যবহার করাও অনেকাংশে সহজ। তবে এটির ব্যবহার আমাদের দেশের বুকে একপ্রকার হয় না বললেই চলে।

গ্রীষ্মকাল পড়লেই গুমট আবহাওয়া এবং অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে দুর্ভোগের শিকার হয় দেশবাসী। আমাদের দেশের একাধিক প্রান্তে বছরের প্রায় সাত থেকে আট মাস তীব্র গরমের মধ্যে নাজেহাল হতে হয় মানুষকে। এই সময়কালে একপ্রকার নাভিশ্বাস পর্যন্ত বেরিয়ে যায় তাদের। সারাদিন রোদের মধ্যে অফিস, স্কুল কিংবা কলেজ করে বাড়িতে এসেও পাই না শান্তি। প্রচণ্ড গরম মাঝে কেবল সিলিং ফ্যানে মেলে না স্বস্তি। এমনকি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সময়কালে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর খবর পর্যন্ত সামনে আসে। হিট স্ট্রোকে কিংবা গরম সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয় তাদের। অবশ্য বর্তমানে করোনার পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কিংবা অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে দেশবাসীর। তবে এক্ষেত্রে রয়েছে আরেক সমস্যা!

গুমট ভাব কাটানোর জন্য এক্ষেত্রে মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এয়ার কন্ডিশনার বা এসি। গরমের হাত থেকে স্বস্তির খোঁজে এই যন্ত্রটি মানুষের এক এবং অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে। কিছু সময়ের মধ্যে এটি আপনাকে এক টুকরো দার্জিলিং কিংবা কাশ্মীরের ছোঁয়া দিতে পারে; তবে এক্ষেত্রে রয়ে গিয়েছে বিশাল খরচের হাতছানি, যা বর্তমানে মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার ভাবুন, আপনি সারা বছরে সাশ্রয় করে একটি এয়ার কন্ডিশনার মেশিন কিনেও নিলেন, কিন্তু শুধু তাতেই শেষ নয়! বছরের ৩৬৫ দিন এর পিছনে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হবে অনেকটাই। আবার তার সঙ্গে রয়েছে ইলেকট্রিক বিলের চড়া দাম, যা প্রতিটি মধ্যবিত্ত মানুষের পকেটে টান ফেলতে বাধ্য। এমনকী, বেশ কিছু বাড়িতে শুধুমাত্র এসি বাবদ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ইলেকট্রিক বিল এসে চলেছে, যা বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বহন করে চলা এক প্রকার অসম্ভব। তবে আজ আপনাদের যে যন্ত্রটি সম্পর্কে বিবরণ দিতে চলেছি, তা কেবলমাত্র আপনাকে তীব্র গরমের হাত থেকে মুক্তিই দেবে না, সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ হবে খরচ। এর মাধ্যমে বাইরে তীব্র রোদের মাঝে ঘরের ভেতর শীতের ছোঁয়া পাবেন, ঠিক তেমনভাবেই এই সবকিছুই সম্ভব হবে এক প্রকার বিনা খরচে!

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য কোনওরকম বিদ্যুতের খরচ আপনাকে করতে হবে না। এই যন্ত্রটি হল সোলার এসি।

আরও পড়ুন: নামমাত্র বিনিয়োগ, মুক্তো চাষে তিন লক্ষ আয় নিশ্চিত, জানুন কীভাবে শুরু করবেন

সোলার এসি নামক যন্ত্রটি প্রধানত সোলার পাওয়ার দ্বারা চালিত হয়ে থাকে এবং এটি কেনার সময় বেশ কিছুটা টাকা লাগলেও পরবর্তীকালে এই যন্ত্রের পিছনে মাসিক কিংবা বাৎসরিক আপনাকে এক পয়সাও খরচ করতে হবে না। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এটিকে বিদ্যুৎ ছাড়া তবে কীভাবে ব্যবহার করা যায়? তবে আপনাকে বলে রাখি, একটি সাধারণ এসি যেখানে শুধুমাত্র ইলেকট্রিকের সাহায্যে চলে, সেখানে এই যন্ত্রটিকে আপনি তিনটি উপায়ে ঘরের চার দেওয়ালের ভেতর ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রথমটি হলো সোলার পাওয়ার; এই শক্তির মাধ্যমে আপনি ঘর কিংবা অফিসের মধ্যে খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন যন্ত্রটি এবং আপনাকে দিতে হবে না কোনও টাকা। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো, সোলার ব্যাটারি ব্যাঙ্ক এবং তৃতীয় বা সর্বশেষ পদ্ধতিটি হলো ইলেকট্রিসিটি গ্রিড; আপনাকে বলে রাখি, সর্বশেষ পদ্ধতিটি হলো খুব সহজ একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনওরকম মুশকিল ছাড়াই বিনা খরচে আপনি পাবেন গরমের হাত থেকে মুক্তি।

তবে শুধুমাত্র খরচই কম নয়, সোলার এসি ব্যবহার করাও অনেকাংশে সহজ। তবে এটির ব্যবহার আমাদের দেশের বুকে একপ্রকার হয় না বললেই চলে। কয়েকটি স্থানে ব্যবহার করা ছাড়া এটির প্রসঙ্গে খুব একটা আলোচনা হয় না; কারণ অবশ্যই প্রথমত, এ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান খুব কম এবং দ্বিতীয়ত, একটি সাধারণ এসির তুলনায় এই যন্ত্রগুলির ক্রয়মূল্য কিছুটা বেশি হয়। যেখানে একটি সাধারণ এসি কিনতে গেলে আপনি ৪০ থেকে ৫০,০০০ টাকায় ভাল যন্ত্র পেয়ে যেতে পারেন, সেখানে একটি সোলার এসি-র পিছনে আপনার ন্যূনতম এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি খরচ হতে পারে। ফলে এই দাম শুনে অনেকেই পিছিয়ে আসেন। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ক্রয় মূল্য বাবদ বেশ কিছু টাকাও খরচ হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে ইলেকট্রিক বিল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাবদ আপনাকে একটি টাকাও নষ্ট করতে হবে না। সারাজীবন আপনি এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন।

এখন জেনে নেওয়া যাক, এই সোলার এসির দাম কীসের ওপর নির্ভর করে। বলে রাখা ভালো, এর মূল্য একটি সাধারণ এয়ারকন্ডিশনারের মতোই হয়ে থাকে। অর্থাৎ, একটি এসির ক্ষেত্রে যেমন তার কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভর করে মেশিনের মূল্য, ঠিক সেরকমভাবে সোলার এসির ক্ষেত্রেও যত বেশি কার্যক্ষমতা হয়, ততই বৃদ্ধি পায় দাম।

এক টন সোলার এসির দাম বর্তমানে ৯৯,০০০ টাকা, আপনি যদি দেড় টনের এসি কিনতে চান, তাহলে তার দাম পড়বে দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে এটি শুধুমাত্র এককালীন খরচ, পরবর্তীকালে তা আপনি নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন। ফলে বলাই যায়, বর্তমানে গরমের হাত থেকে বাঁচা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ইলেকট্রিক বিলের খরচ বাঁচানো যদি আপনার মূল লক্ষ্য হয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ বাড়িতে নিয়ে আসুন সোলার এসি।

More Articles