কলকাতার বাংলো, লন্ডনের ফ্ল‍্যাট! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পত্তির খতিয়ান চোখ কপালে তুলবেই

Sourav Ganguly: বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে অন্যতম ধনী ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি। আসুন দেখে নেওয়া যাক, তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান।

“তোমার জয়ের উন্মাদনার চেয়েও, আমার হারের আলোচনা বেশি হচ্ছে” - বর্তমানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রজার বিনির অবস্থা খানিকটা এইরকমই। রজার বিনির বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার থেকেও বেশি চর্চা হচ্ছে সৌরভের অপসারণ নিয়ে। বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন মত উঠে আসছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। কেউ বলছেন, সৌরভ রাজনীতির শিকার, তো কেউ বলছেন মাস্টারস্ট্রোক। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বের সবথেকে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৌরভ। সৌরভ দায়িত্ব নিয়েই সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, আগামিদিনে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করবেন। একজন ক্রিকেটার হিসেবে ভারতকে তিনি যে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন, প্রশাসক হিসেবেও তিনি ততটাই সফল হবেন বলে আশা করেছিলেন সকলে। আর সেই কারণেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে তাঁকে সকলেই স্বাগত জানিয়েছিলেন।

তবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে বসে ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক উন্নতিসাধন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিতর্কেও জড়িয়েছেন তিনি। বিশেষত গত এক বছরে বিভিন্ন বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন সৌরভ। বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে বসে কোহলির অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া এবং টিম সিলেকশনে নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি এন শ্রীনিবাসন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘ব্র্যান্ড বিসিসিআই’ থেকে ‘ব্র্যান্ড সৌরভ’-কে বড় করার অভিযোগ এনেছিলেন। এসবের কারণেই সৌরভ শেষ পর্যন্ত বোর্ড সভাপতির কুর্সি খুইয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সৌরভ আইসিসি-তে যাবেন না সিএবি সভাপতি পদে আসীন হবেন, তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলছে দেশজুড়ে। অবশ্য আর কয়েক দিনের মধ্যেই সৌরভের পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে। তবে এটা তো মানতেই হবে যে লর্ডসে সেঞ্চুরি হাঁকানো থেকে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়া, সৌরভের কেরিয়ার চমকপ্রদ বটে।

আরও পড়ুন: ক্ষমতার শীর্ষে, তবু বাঙালির চোখে কেন ‘বঞ্চিত’ সৌরভ?

এই শতাব্দীর শুরুর ভাগে বেটিং কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ছিল ভারতীয় ক্রিকেট। ফের অধিনায়কত্ব নিতে অস্বীকার করে দিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেটকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘মহারাজ’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতকে সেই কলঙ্কের অন্ধকার থেকে বের করে নিজ দায়িত্বে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের মর্যাদার আসন পুনরায় দখল করে নেন। সম্প্রতি উইজডেন প্রকাশিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ছয় নম্বরে রয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের ‘গড অফ দ্য অফসাইড’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অধিনায়ক থাকাকালীন ২১টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৭৬টি ওডিআই জিতিয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালের স্টিভ ওয়া-র অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়াকে ইডেন গার্ডেন্সে হারানো, ইংল্যান্ডে ২০০২ সালের বিখ্যাত ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ জয় এবং সেই বছরই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা, ঐতিহাসিক মুহূর্ত সমর্থকদের উপহার দিয়েছেন সৌরভ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের জার্সিতে চারশোর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মোট ১৮ হাজারের বেশি রান করেছেন দাদা, সেঞ্চুরি করেছেন ৩৮টি। ভারতীয় দলের অধিনায়ক এবং ক্রিকেটার থাকার সময় অনেক এনডোর্সমেন্টের মুখ ছিলেন সৌরভ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে অবসর নেওয়ার পর সেই এনডোর্সমেন্ট আরও বেড়ে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে অন্যতম ধনী ভারতীয় ক্রিকেটার তিনি। আসুন দেখে নেওয়া যাক, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পত্তির খতিয়ান।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বেহালার এক বিত্তবান পরিবারে জন্মেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন চন্ডীদাস গঙ্গোপাধ্যায়। সফল ছাপাখানার ব্যবসা ছিল তাঁদের। কাজেই অর্থের অভাব কোনও দিনই ছিল না সৌরভের। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া-র হয়ে খেলেছেন সৌরভ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো সঞ্চালনা করেছেন তিনি। এছাড়াও সিএবি প্রেসিডেন্ট এবং বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট পদে থাকাকালীন যথেষ্ট মোটা অঙ্কের বেতন পেয়েছেন সৌরভ। ২০১৫ থেকে ২০১৯-এর অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে তিনি বিসিসিআই-এর সভাপতি হন এবং তখন থেকে এই পদে রয়েছেন। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বার্ষিক দু'কোটি টাকা আয় করতেন সৌরভ। এছাড়াও অজন্তা, মিশো, লয়েড, ফরচুন, My11Circle, ক্যাপ্টেন টিএমটি বার-এর মতো বড় ব্র্যান্ড থেকে তাঁর ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট ফি-বাবদ প্রতি বছর ১ কোটির বেশি টাকা তিনি পেয়ে থাকেন। একই সঙ্গে জি বাংলার ‘দাদাগিরি’ রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালনা করেও তাঁর বড় অঙ্কের আয় হয়। সৌরভের বিলাসবহুল জীবন, বিদেশে ভ্যাকেশন, দামি দামি গাড়ির বহর, এইসবই ইঙ্গিত দেয়, তাঁর মোটা ব্যাঙ্কব্যালেন্সের। সব মিলিয়ে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক এবং বিসিসিআই সভাপতির আনুমানিক সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি ডলার বা ৬৩৪ কোটি টাকা!

এই বিলাসবহুল যাপনের পাশাপাশি কিন্তু বিভিন্ন স্টার্ট আপেও বিনিয়োগ করেছেন ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্লিকস্ত্রী (Flickstree) নামক একটি ই-কমার্স সাইট এবং ক্লাস প্লাস (Class Plus) নামক একটি এডুটেক সংস্থাতে বিনিয়োগ করেছেন সৌরভ। অনেকেই হয়তো জানেন না খেলোয়াড় থাকাকালীন ২০০৪ সালে কোলকাতার পার্ক স্ট্রিটে একটি রেস্টুরেন্ট খুলেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেটি দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন সৌরভের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু পাঁচ তলা সেই রেস্টুরেন্টটি ভালো ব্যবসা না করায়, খোলার মাত্র সাত বছরের মধ্যেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন দুই ভাই। অবশেষে ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যায় সৌরভের সাধের রেস্টুরেন্ট ‘Sourav's: The Food Pavilion’।

তবে বিভিন্ন কোম্পানি এবং রেস্টুরেন্ট ছাড়াও রিয়েল এস্টেটে প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন সৌরভ। বেহালার বীরেন রায় রোডের প্রাসাদোপম পৈর্তৃক বাড়ি (যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা) ছাড়াও সম্প্রতি লোয়ার রডন স্ট্রিটে একটি একটি বাংলো কিনেছেন তিনি। শোনা যায়, প্রায় ৪০ কোটি টাকা দিয়ে বাংলোটি কিনেছেন সৌরভ এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি। এছাড়াও লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। ২০০৮ সালে সেটি কিনেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের ফুটবল ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের অন্ধ ভক্ত সৌরভ। ফলত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হোম স্টেডিয়াম অর্থাৎ ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম থেকে মাত্র আধঘণ্টার দূরত্বে এই ফ্ল্যাটটি কেনেন সৌরভ। লন্ডনে ছুটি কাটাতে গেলে সাধারণত সপরিবার সেই ফ্ল্যাটেই থাকেন তিনি। এছাড়াও সৌরভের গ্যারেজের শোভা বাড়াচ্ছে মার্সিডিজ সিএলকে ২৩০, অডি কিউ ৫, বিএমডব্লিউ ৭ সিরিজ-সহ একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি‌।

More Articles