"নবীরও ৪ টে দাঁত ভেঙেছিল", ঈশ্বর বিশ্বাসীদের কি অসুখ হয় না? তসলিমার যে প্রশ্নে তোলপাড় বিশ্ব...

Taslima Nasreen: "খোদ নবীর ৪ টি দাঁত খোয়া গিয়েছিল, তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং বেদনাদায়ক মৃত্যু হয়েছিল তাঁর," লিখেছেন তসলিমা।

ইসলাম বিরোধী কথা বলেন তসলিমা নাসরিন। উগ্র মৌলবাদীদের মতে তসলিমার মতো লেখিকা 'যোগ্য শাস্তি' পেয়েছেন নিজের কৃতকর্মের। ধর্মের বিরুদ্ধে, নারীর যৌনতা ও স্বাধীনতা নিয়ে রক্ষণশীলতার বেড়া ভেঙে বহুকাল থেকেই গোঁড়া ধর্মান্ধদের আগ্রাসনের মুখে রয়েছেন লেখিকা। সম্প্রতি নিজের অসুস্থতার খবরে এত মানুষ যে তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন, তা সেই ঘৃণারই প্রতিফলন। যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন, ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করলে ঈশ্বর তাঁদের শাস্তি দেন- বিশ্বাসীদের যুক্তি অকাট্য। কিন্তু যারা ঈশ্বরে প্রবল আস্থাবান, তারাও কি অসুখে ভোগেন না? ঈশ্বর বিশ্বাসীদের কি দুর্ঘটনা ঘটে না? তাহলে কেন মানুষের অসুস্থতাকে ঈশ্বর বা ধর্মের প্রতি বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সঙ্গে জোড়া হবে? এই প্রশ্নই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তসলিমাকে।

তসলিমা নিজে ডাক্তার হয়েও ভুল চিকিৎসার কবলে পড়ে আজীবনের মতো 'পঙ্গু' হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। বারেবারে নিজের সেই অসুস্থতা এবং চিকিৎসার গাফিলতির কথা সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন তিনি। মৌলবাদীদের আক্রমণ আর নিজস্ব শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে কেন ধর্মবিশ্বাস ঢুকে পড়েছে সেই উত্তরই খুঁজেছেন। উত্তরের সপক্ষে সেই ঈশ্বরকেই খাড়া করেছেন তসলিমা। তসলিমা নিজের টুইটে লিখেছেন, "সম্প্রতি আমি চিকিৎসা সংক্রান্ত গাফিলতির ফাঁদে পড়েছিলাম এবং আমি আমার সুস্থ শরীরের অঙ্গ খোয়া গিয়েছে। কিন্তু জিহাদিরা নিশ্চিত যে ইসলামের সমালোচনা করার জন্য আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। তারা কি মনে করেন বিশ্বাসীরা কষ্ট পান না এবং মরেন না? খোদ নবীর ৪ টি দাঁত খোয়া গিয়েছিল, তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল এবং বেদনাদায়ক মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।"

তসলিমার সেই ট্যুইট-

তসলিমা বাড়িতে পড়ে গিয়ে চোট পান। সেই চোট সারাতে গিয়ে হাসপাতেলে ভর্তি হওয়ার পরে 'বাংলাদেশি মুসলিম রোগী'র মতো তাঁর সঙ্গে আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ লেখিকার। বিখ্যাত ও বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নিজে চিকিৎসক হয়ে কী করে এমন মারাত্মক ভুল চিকিৎসার ফাঁপরে পড়লেন সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যায়! লেখিকার অভিযোগ, তাঁকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম ফ্র্যাকচার ছাড়াই তাঁর হিপ জয়েন্ট, ফিমার কেটে অথর্ব করে দেওয়া হয়েছে!

আরও পড়ুন- কোনও চিড় নেই এক্স রে রিপোর্টে! কীভাবে ভুল চিকিৎসায় আজীবনের মতো পঙ্গু হলেন তসলিমা?

ঘরে বড় সাইজের পাজামা পরে হাঁটতে গিয়ে নিজেরই চপ্পলে আটকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। হাঁটুতে ব্যথা হয়, বরফ দেন, ভলিনিও। তাতেও ব্যথা না কমায় তাঁর আশঙ্কা হয়, হাঁটুর লিগামেন্টে হয়তো লেগেছে। বিশদে জানতে হাসপাতালে যান। এক্সরে আর সিটিস্ক্যান করে হাড়ের ডাক্তার তাঁকে জানান, পায়ের ফিমার নামের হাড়টির গলায় একখানা চিড় ধরেছে। চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসক জানান, ইন্টারনাল ফিক্সেশান, মানে চিড়ের জায়গায় স্ক্রু লাগিয়ে বসিয়ে দেওয়া আর দ্বিতীয়টা হিপ রিপ্লেসমেন্ট। হিপ কেটে প্লাস্টিক মেটাল দিয়ে একটা নকল হিপ বানিয়ে বসিয়ে দেওয়া।

পরে নিজের এক্স রে রিপোর্ট দেখে তসলিমা মারাত্মক এক বোমা ফাটান! তিনি জানান, তাঁর কোথাও কোনও ফ্র্যাকচার হয়নি সেদিন। ফ্র্যাকচার হয়নি বলেই তাঁর হিপ জয়েন্টে কোনও ব্যথা ছিল না, কোনও সুয়েলিং ছিল না। অথচ তাঁকে মিথ্যে কথা বলে, ফিমার ফ্র্যাকচারের ট্রিটমেন্টের নামে হিপ জয়েন্ট কেটে, ফিমার কেটে ফেলে দিয়ে লেখিকাকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।

বিদেশে চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশি মুসলিম রোগী হিসেবেই দেখা হয়েছে তাঁকে, যার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে অপারেশন করা হবে, অভিযোগ ছিল তসলিমার। তাঁর চিকিৎসার সমস্ত পোস্টে 'হা-হা' রিয়্যাকশন প্রমাণ করে ঘৃণার চাষ করতে আর বিরুদ্ধাচারণ করার শাস্তি দিতে মানুষ কতখানি উদগ্রীব। ইসলাম হোক, অন্য ধর্ম হোক, বিরুদ্ধে গেলে শাপ! বিরুদ্ধে গেলেই বিপদ! প্রবল ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ কোনও দিন কি কোনও শারীরিক যন্ত্রণায় ভোগেন না? মাসের পর মাস উপোস-ব্রত করা মহিলাদের কি ক্যান্সার হয় না? আজীবন ইসলামের ফতোয়া মেনে কাটিয়ে দেওয়া পুরুষরাও কি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান না, ভুল চিকিৎসায় জীবন হারান না? তাহলে কেন তসলিমার ধর্মের বিরুদ্ধাচারণকে মিলিয়ে দেওয়া হবে ঈশ্বরের শাস্তির সঙ্গে? উত্তর, আশা করাই যায়, শুভচিন্তকদের কাছে আছে।

More Articles