দুটো বিশ্বযুদ্ধ থেকে কোভিড, সব দেখেছেন নিজে চোখে, চেনেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক এই মানুষকে?

The oldest person in the world : শেষ বয়সে চোখে দেখতে পেতেন না, হাঁটার ক্ষমতা ছিল না, দিন কাটতো হুইল চেয়ারে। অথচ নিজের ভাবনাচিন্তা থেকে সরেননি তিনি। অভিবাবক হয়ে থেকেছেন বিশ্বের সকলের মাথার ওপর

বয়সে তিনি শতাব্দী পার করেছেন অনেক আগেই, এতদিনে মিলল দৈহিক মুক্তি। মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ লুসিল হান্দোঁ। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ১১৮ বছর। এক জীবনে কতকিছুই না দেখেছেন তিনি, বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক করোনা মহামারী। কিছুই টলাতে পারেনি হান্দোঁকে। অবশেষে গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার একটি নার্সিং হোমে তাঁর মৃত্যু হয়।

১৯০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ ফ্রান্সে জন্ম হয়েছিল হান্দোঁর। প্রাথমিকভাবে নাম ছিল লুসিল হান্দোঁ। পরে অবশ্য নিজেই নাম পরিবর্তন করেন তিনি। যৌবনে প্রবেশ করে স্থির করেন খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করবেন। ২৬ বছর বয়সে হান্দোঁ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হিসেবে দীক্ষা নেন। তারপর ৪১ বছর বয়সে সন্ন্যাসী হিসেবে যোগদান করেন ডটারস অব চ্যারিটিতে। তখনই থেকেই নতুন নাম হয় সিস্টার আন্দ্রেঁ।

আরও পড়ুন - বিষাদ নয়, ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এর পুজো জমজমাট বয়স্কদের জীবনের উদযাপনে

আজীবন মানুষের সেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন তিনি। টানা ৩১ বছর সেবা দিয়েছেন ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে। বলতেন, “ঘৃণা করার পরিবর্তে মানুষের উচিত একজন অপরজনকে সাহায্য করা এবং ভালোবাসা। যদি আমরা সাহায্য ও ভালোবাসা বিনিময় করতে পারি তবে সব কিছু আরও ‍অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।”

শেষ বয়সে চোখে দেখতে পেতেন না, হাঁটার ক্ষমতা ছিল না, দিন কাটতো হুইল চেয়ারে। অথচ নিজের ভাবনাচিন্তা থেকে সরেননি তিনি। অভিবাবক হয়ে থেকেছেন বিশ্বের সকলের মাথার ওপর। নিজের বহু সাক্ষাৎকারে বারবার ভাইদের কথা বলেছেন। একে অপরের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। ফ্রান্সের হাসপাতালে ৩১ বছর থাকার পর চলে আসেন ভূমধ্যসাগরের উপকূলসংলগ্ন টুলন এলাকায়। সেখানকার সেন্ট ক্যাথেরিন লেবার নার্সিং হোমে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন তিনি।

ইউরোপে তো বটেই গোটা বিশ্বের বয়স্ক মানুষ ছিল ইনিই। ইউরোপের স্বীকৃতি জুটেছিল অনেক আগেই, অবশেষে গত বছর ১১৯ বছর বয়সে জাপানের কানে তানাকার মৃত্যুর পর সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের স্বীকৃতি পান তিনি। ২০২২ সালের এপ্রিলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে হান্দোঁকে জীবিত থাকা সবচেয়ে বেশি বয়সী মানুষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাই তাঁর মৃত্যুর পর অভিবাবকহীন হয়ে পড়ল গোটা বিশ্ব, বলাই বাহুল্য।

More Articles