এই রেলপথগুলিতে পদে পদে বিস্ময়! ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রইল খোঁজ

রেলযাত্রা কমবেশি সব ভ্রমণপিপাসু মানুষেরই পছন্দের। স্বল্প খরচে প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করার বিকল্প কোনও পন্থা আজ অবধি মানুষ রেল ছাড়া আর কোথাও পেয়েছে বলে তো মনে হয় না। তাই আজ আপনাদের সন্ধান দেব ভারতের এমন কিছু রেলযাত্রার, যা ভ্রমণেচ্ছুদের মনের তৃষ্ণা আরও খানিক বাড়িয়ে দেবে।     

১৷ হিমালয় রানি (কলকা থেকে সিমলা)

সিমলা মানেই পাহাড়ের হাতছানি আর পাহাড় মানেই আমাদের মনে ভেসে আসে আঁকাবাঁকা সরু পথের মধ্য দিয়ে ধীর গতিতে ছুটে চলা আর কালো ধোঁয়া ছাড়া টয় ট্রেন। কলকা থেকে সিমলা যাওয়ার এই পথের দৈর্ঘ্য ৯৬ কিলোমিটার। একবার ভাবুন তো, পাইন, ওক, দেবদারু কিংবা লাল ফুলে ভর্তি রডোড্রেনড্রন গাছের সারির সৌর্ন্দয্যের মধ্য দিয়ে আপনি চলেছেন, মন্থর গতিতে।

কলকা থেকে সিমলার এই রেল পরিষেবা প্রথম চালু হয় ১৯০৩ সালে। যাত্রাপথে রয়েছে ১০২টি টানেল এবং ৮২টি সেতু– পাঁচ ঘণ্টার এই যাত্রা কতখানি সুন্দর হলে তা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজের নাম নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চয়ই বলার অবকাশ রাখে না। ২০০৮ সালে আবার এই যাত্রাকে ইউনেসকো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তকমাও দিয়েছে।

আরও পড়ুন: দিঘা-পুরী-দার্জিলিং নয়, বাঙালির মনে জায়গা পাকা করছে চটকপুর

২৷ দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে (নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং)

বাঙালি মানেই গ্রীষ্মের তাপদাহে প্রায় সেদ্ধ হতে হতে দার্জিলিং মেলের টিকিট হাতড়ানো। এখন ইন্টারনেট আসার সুবাদে হয়তো শীতাতপে বসেই টিকিট কাটার তোড়জোড়। তাই তো বাঙালির হলিডে ডেস্টিনেশনগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে দার্জিলিংয়ের কথা। আর আসবে না-ই বা কেন! মাত্র এক রাতের মধ্যেই যদি গরমের প্যাচপ্যাচানির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়, তবে সেই রেহাই কে না পেতে চায়! শিলিগুড়ি থেকে টয়ট্রেন ধরে রাংটং যাওয়ার পথে কখন যে বাইরের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে করতে হঠাৎ করে আপনার শীত লাগতে শুরু করবে, তা হয়তো আপনি বুঝতেও পারবেন না। বহুদূর বিস্তৃত সবুজ চা বাগান আর গাঢ় নীল পাহাড় দেখতে দেখতে আপনি সমুদ্রতল থেকে তখন বেশটাই ওপরে। টুং, সোনাদা, ঘুম পেরিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে যেতে যেতে, কপাল ভাল থাকলে আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে দার্জিলিং পৌঁছনোর আগেই আপনার সঙ্গে দেখা মিলতে পারে মাথায় বরফ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার। ১৯৯৯ সাল থেকেই এই যাত্রাপথ ইউনেসকো-র ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর মুকুট পরে বসে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হয়ে এখনও যদি এই মনোমুগ্ধকর রেলযাত্রার অভিজ্ঞতা আপনি না করে থাকেন, তবে এইবারের গ্রীষ্মেই আস্বাদন করুন এই অভিজ্ঞতা!

 

৩৷ কোঙ্কন রেলওয়ে (মুম্বই থেকে গোয়া)

মুম্বই এবং গোয়া–  এই দু'টি একেবারেই বিপরীতমুখী শহর হলেও, একটি যোগসূত্রে তারা চিরকাল আবদ্ধ, এবং তা হল সমুদ্র। মুম্বই যেখানে রোজের কর্ম-ব্যস্ততাভরা জীবন অথবা গ্ল্যামারাস জগতে হাতছানির গল্প বলে, সেখানে গোয়া হল দেদার ছুটি কাটানো কিংবা সদ্য-বিবাহিত কপোত-কপোতিদের হনিমুন ডেসটিনেশন। মুম্বই থেকে গোয়া যাওয়ার এই রেলপথ বিশেষ দীর্ঘ না হলেও, সহ্যাদ্রি পাহাড় এবং আরব সাগর সেখানে মিশে একাকার হয়ে গেছে। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে, চলার পথের এই বৈপরীত্য যেন শহরদু'টির কথাই মনে করায়। এই যাত্রাপথে আপনি অতিক্রম করে যাবেন ৯২টি টানেলসহ ২০০০টি সেতু। পাহাড় এবং সাগর ছাড়াও এই পথে আপনি সাক্ষী থাকবেন সারি সারি নারকেল গাছের ছায়ায় থাকা শস্য-শ্যামলা ধানখেতে মোড়া শীতল গ্রামগুলির।  

 

৪৷ মরুভূমির রানি (যোধপুর থেকে জয়সলমির)

আপনি যদি বিলাসবহুল যাত্রার সাক্ষী থাকতে চান, তাহলে যোধপুর থেকে জয়সলমিরের এই রেলপথে ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আপনার চিরদিন মনে থেকে যাবে। নীল শহর ছাড়িয়ে আপনি পাড়ি দেবেন সোনালি শহরের উদ্দেশ্যে, কখন যে আপনার চোখের সামনে প্রকৃতির দৃশ্যপট বদলে যাবে, বুঝতেই পারবেন না। কেবল উপভোগ করতে থাকবেন। আর ঠিক সেই সময় থর মরুভূমির উটেরা হয়তো আপনাকে স্বাগত জানলেও জানাতে পারে। এছাড়াও যাত্রাপথে আপনার নজর কাড়বে মরু অঞ্চলের বন্য পশুরা।

 

৫৷ নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে (মেতুপালয়াম থেকে উটি)

যদিও এই রেলপথটি ১৮৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসার খাতিরেই খোলা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে, ২০০৫ সালে এই রেল পরিষেবা ইউনেসকো দ্বারা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর আওতায় আসে। এছাড়াও এই রেল সফর উটির প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি।

৬৷ কাশ্মীর ভ্যালি রেলওয়ে ( জম্মু থেকে বারামুল্লা)

কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ, যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনাতীত। প্রায় সারা বছর বরফে ঢাকা এই অঞ্চলের রেলযাত্রা যে সবকিছুর থেকে আলাদা হবে, একথা বোঝাই যায়। তবে কেবলমাত্র যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খাতিরেই নয়, অন্য একটি কারণেও এই যাত্রার সাক্ষী হওয়া উচিত‌। এই রেল পরিষেবাটি ভারতীয় রেল ব্যবস্থার অন্যতম বিপজ্জনক একটি পরিষেবা ব্যবস্থা। যাত্রাপথে উঁচু উঁচু পাহাড়চূড়া অতিক্রম করার পাশাপাশি, এই সময় যাত্রীরা অতিক্রম করে যান কুখ্যাত সব ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলিকেও।

 

More Articles