সংসার টিকিয়ে রাখার 'চাবিকাঠি' আসলে আলাদা থাকা! বিয়ের নতুন এই উপায় কতটা কার্যকর?

Separation Marriage Trends Japan : এই যাত্রাই একেকসময় রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে। তবুও কেন এত অনীহা? কেন বিয়ে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম?

বিয়ের মরসুমে রীতিমতো টগবগ করে ফুটছে বাঙালি। নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্ন লেগে আছে তরুণ-তরুণীদের চোখে। সব মিলিয়ে এলাহি আয়োজন। কিন্তু সবাই কি তাই? ‘বিয়ে’ এই শব্দটাই অনেকের গাত্রদাহের কারণ। ছোঁয়াচে রোগের মতো শতহস্ত দূরে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই বিয়ে, সাতপাকের দিকে একেবারেই যেতে চান না। শুধু বাংলা বা ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই এমন ছবি দেখতে পাওয়া যায়। বিয়ে মানে তো মনের মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানো, সঙ্গীর সুখ-দুঃখের ভাগীদার হওয়া। একটা সুন্দর সম্পর্ককে আরও লম্বা পথে নিয়ে যাওয়া। বিয়ের এই যাত্রাই একেকসময় রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে। তবুও কেন এত অনীহা? কেন বিয়ে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম?

আপাতত এনিয়েই গবেষণা করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যারা ফ্যামিলি থেরাপি করেন, তাঁরাও এই অদ্ভুত ‘ট্রেন্ড’ দেখে ভাবিত। তাহলে বিয়ের সংজ্ঞাটা বদলে যাচ্ছে? বিয়ে এখন বোঝা? সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, অনেক তরুণ-তরুণীই ঠিক এই কথাটাই ভাবছে। তাঁরা বিয়ের বন্ধনে জড়িয়ে পড়তে চাইছেন না। গোটা বিশ্বেই এই ভাবনা বাড়ছে। একা থেকে, স্বাধীনভাবে জীবন কাটানোকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা। এমন ট্রেন্ড সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে জাপানে। সেখানকার যুবসমাজ বিয়ে নামক ব্যাপারটা থেকেই শতহস্ত দূরে থাকতে চাইছে। সেখানকার জন্মহার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে এই বিয়ে না করাকে মনে করছে জাপান সরকার। কিন্তু উপায়?

এখানেই নতুন একটি ব্যবস্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পোশাকি নাম ‘উইকএন্ড ম্যারেজ’ বা ‘সেপারেশন ম্যারেজ’। নাম শুনে একটু ঘাবড়ে যেতে বাধ্য আপনি। সেপারেশন বা বিচ্ছেদ এবং বিবাহ – এই দুটো একেবারে বিপরীত মেরুতে চলে। তাহলে এই দু’টি ব্যাপার এক হল কেমন করে? সেপারেশন ম্যারেজ ব্যাপারটাই বা কী? অথচ জাপানে বিগত কয়েক বছরে এই বিশেষ বিয়েই রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সেখানকার যুব সমাজের মধ্যে এই সেপারেশন ম্যারেজ বা বিচ্ছেদ বিবাহ বেশ চর্চিত একটি বিষয়। কিন্তু বিষয়টি ঠিক কী? আর কতটাই বা যুক্তিসঙ্গত?

আরও পড়ুন : সিএএ বিরোধিতায় গিয়ে প্রেম, রাজনীতি-সিনেমাকে যেভাবে জুড়ল স্বরা ভাস্কর, ফাহাদ আহমেদের বিয়ে

এই প্রশ্নের উত্তরে আসার আগে একবার দেখা যাক, কেন বিয়ে করতে অনীহা বাড়ছে। প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার প্রসঙ্গ। বিয়ে মানে দুটি মানুষের মিলন নয়, বরং আরও বেশি দায়িত্ব। দুটো মানুষের মতের মিল নাও হতে পারে, জীবনের প্রতি চাহিদা আলাদা হতে পারে। একটা সময় সিনেমায় হোক বা বাস্তব, মা-ঠাকুমারা বলতেন, ‘একটু মানিয়ে নাও’। এই মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাই এখন অনেকে মেনে নিতে পারেন না। একটা পর্যায় অবধি নিশ্চয়ই মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু সর্বস্ব কী করে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হবে? এই স্বাধীনচেতা ভাবনার জায়গা থেকেই বাড়ছে কলহ, ভাঙছে সম্পর্ক। ডিভোর্সের সংখ্যাও বাড়ছে। আর এমন পরিস্থিতির জন্য বিয়ের দিকে পা বাড়াতে চাইছে না অনেকেই।

সেখানেই এই ‘সেপারেশন ম্যারেজ’-এর ধারণা উঠে এসেছে। ব্যাপারটা কী? দু’জন মানুষ একে অপরকে পছন্দ করবেন, উভয়ের সম্মতিতে বিয়েও করবেন। তারপর দু’জনে আলাদা দুটি বাড়িতে থাকবেন। সেটা কাছাকাছিও হতে পারে, বা দূরেও হতে পারে। সপ্তাহের শেষে শনি আর রবিবার একে অপরের জন্য সময় বের করবেন। শুধু সেই দুটি দিনই পরস্পর একসঙ্গে কাটাবেন। বাকি দিনগুলোয় ফোনালাপ হলেও, একসঙ্গে থাকবেন না স্বামী-স্ত্রী।

এতে কী হবে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রত্যেক মানুষই নিজের স্বাধীনতা চায়। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মতামত আছে, আলাদা আলাদা চিন্তা ভাবনা আছে। তাঁরা নিজেদের শর্তে বাঁচতে চান। একসঙ্গে, এক ছাদের তলায় সংসার করলে সবসময় সেটা নাও হতে পারে। তাই এমন সেপারেশন ম্যারেজের ভাবনা। সুদূরপ্রসারী ফল কী হবে, তা এখনও জানা নেই। তবে সংসারে থেকেও নিজেদের মতো জীবন কাটানো, ক্ষতি কি!

More Articles