লাশের সংখ্যা ১৫,০০০! তিন দিন পরেও কেন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না মানুষদের?

Turkey Earthquake Death: সোমবারের এই ভয়াবহ কম্পনে তুরস্কে ১২,৩৯১ জন এবং সিরিয়ায় কমপক্ষে ২,৯৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রতি সেকেন্ডে মরছে মানুষ। মৃতের তালিকা বাড়তে বাড়তে আতঙ্ক আর শোকের দাঁড়িপাল্লাকে অস্থির করে দিচ্ছে আরও। কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্পে প্রাণ গিয়েছে ১৫ হাজার মানুষের! তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বুধবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের আনুমানিক সংখ্যা জানিয়েছেন। হাজার হাজার ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে বের করে আনা অসাড় দেহের সংখ্যা আরও বাড়লেও আশ্চর্যের কিছু নেই। একে ভূমিকম্প, মানুষের বাঁচার আর্তনাদ, তার উপর হিমশীতল আবহাওয়া! উদ্ধারকার্যে বারে বারে বাধা পড়েছে প্রকৃতির কারণেই। বেঁচে গিয়েছেন যারা, খাবার আর আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে মরছেন তারা। নিজেদেরই আত্মীয়দের দেখছেন চাপা পড়ে থাকতে। আর্তনাদ ফিকে হয়ে আসছে, প্রাণ নিঃসাড়!

দু’দিন পেরিয়ে গিয়েও ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা যায়নি মানুষদের। ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের তিন দিন পরও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের টেনে বের করেছেন উদ্ধারকারীরা। এই শতাব্দীর সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পগুলির মধ্যে অন্যতম তুরস্ক-সিরিয়ার এই ভূমিকম্প। উদ্ধারকার্যে এত সমস্যার জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কাহরামানমারাস পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট, অব্যবস্থার কথা মেনেছেন। মৃত্যু আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে যাবতীয় সমস্যা স্বীকার করেছেন তিনি। এই ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন।

জীবিতদের খুঁজে বের করার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়াতে। তবুও বুধবার, উদ্ধারকারীরা তুরস্কের হাতাই প্রদেশের একটি ধসে পড়া বাড়ির নিচ থেকে ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শুনতে পান। আটকে পড়া শিশুদের সেখান থেকে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা। সোমবারের এই ভয়াবহ কম্পনে তুরস্কে ১২,৩৯১ জন এবং সিরিয়ায় কমপক্ষে ২,৯৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের মোট সংখ্যা এখনই ১৫,৩৮৩ ছাড়িয়েছে যা দ্রুত বাড়তেই থাকবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন- তুরস্কের ভূমিকম্পের তিনদিন আগেই করেছিলেন ভবিষ্যদ্বাণী, কে এই ‘রহস্যময় বিজ্ঞানী’?

তবে উদ্ধারকাজ আরেকটু দ্রুত ও উন্নতমানের হলে এই সংখ্যা কমানো যেত। প্রশাসনের গাফিলতি স্থানীয়দের ক্ষোভও বাড়াচ্ছে। অনেকেই বলছেন, যে বাড়িগুলো ধসে পড়েনি সেগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিটি ধসে পড়া বাড়ির নিচে প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ আটকে পড়ে আছেন। আর উদ্ধারে নেমেছেন মাত্র ১০ জন, তাও কোনও যন্ত্রপাতি ছাড়াই।

সিরিয়া এই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে। এক দশকের গৃহযুদ্ধ এবং সিরিয়া-রাশিয়ান বিমান বোমাবর্ষণে ইতিমধ্যেই সেখানে স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জলের ঘাটতিতে ভোগা সিরিয়া এখন ভূমিকম্পের আঁচড়ে মৃত্যুর মুখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলি সহ অনেক দেশই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশের তরফে অনুসন্ধানকারী দল এবং ত্রাণও ইতিমধ্যে পৌঁছেছে।

তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। ১৯৩৯ সালের পর তুরস্কে হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ছিল সোমবারের ভূমিকম্পটি। ১৯৩০ সালের ওই ভূমিকম্পে পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে ৩৩,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯৯ সালের ৭.৪ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ১৭,০০০-এরও বেশি মানুষ মারা যান।

More Articles