তুরস্কের ভূমিকম্পের তিনদিন আগেই করেছিলেন ভবিষ্যদ্বাণী, কে এই 'রহস্যময় বিজ্ঞানী'?
Turkey Earthquake Prediction : যদি আগে থেকে গুরুত্ব দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এত মৃত্যু এড়ানো যেত। এমন ভয়াবহতার ছবি হয়তো দেখতে হতো না।
কাতারে কাতারে মৃতদেহ পড়ে আছে রাস্তায়। চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ, ভেঙে আছে বাড়িঘর। সেখানেই প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছেন বাকিরা। ৬ ফেব্রুয়ারির ভোর থেকে এমন ছবিই ছড়িয়ে রয়েছে তুরস্কে। ইতিমধ্যেই পরপর চারবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দেশটি। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ঠাণ্ডা আর বৃষ্টির জেরে উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা ৪৩০০-র গণ্ডি ছাড়িয়েছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। প্রায় ২০০০ বাড়ি কার্যত ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তুরস্ক, সিরিয়া জুড়ে এখন কেবল কান্নার রোল।
তার মধ্যেই উঠে এল নতুন একটি তথ্য। আর সেই দিকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানেই এক গবেষক নাকি ভূমিকম্পের তিনদিন আগেই তার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন! সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই কথা বলেওছিলেন। এখন ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর সবাই সেই গবেষকের পোস্টে রীতিমতো হামলে পড়েছেন। নেট নাগরিকের একাংশের মতে, যদি আগে থেকে গুরুত্ব দেওয়া হতো, তাহলে হয়তো এত মৃত্যু এড়ানো যেত। এমন ভয়াবহতার ছবি হয়তো দেখতে হতো না।
Sooner or later there will be a ~M 7.5 #earthquake in this region (South-Central Turkey, Jordan, Syria, Lebanon). #deprem pic.twitter.com/6CcSnjJmCV
— Frank Hoogerbeets (@hogrbe) February 3, 2023
শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস (Frank Hoogerbeets) নামের ওই ডাচ গবেষক টুইটারে একটি ছবি দেন। তুরস্কের ম্যাপ দেখা যাচ্ছে সেখানে। সেই পোস্টে ফ্রাঙ্ক বলেন, খুব শীঘ্রই মধ্য-দক্ষিণ তুরস্কের এই অংশে তীব্র ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আনুমানিক ৭.৫ কম্পাঙ্কের তীব্রতা হতে পারে এই ভূমিকম্পের। কেবল তুরস্ক নয়; জর্ডন, লেবানন, সিরিয়াতেও এই ভূকম্পের প্রভাব পড়বে। টুইটারে এই বিশেষ পোস্ট দেওয়ার পর সেভাবে কেউ গা করেনি। কারণ, ছোট থেকেই আমরা জেনে এসেছি, ভূমিকম্প কখন আসবে, কত তীব্রতায় কোথায় ছড়িয়ে পড়বে, সেটা আগাম বলে দেওয়া এখনও সম্ভব নয়। ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের এই ভবিষ্যদ্বাণীও তাই সেভাবে নজরে আনেননি কেউ।
তারপর কেটে গিয়েছে তিনদিন। সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারির ভোররাতে ফ্রাঙ্কের সেই ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ সত্যি বলে প্রমাণিত হল। ৭.৮ তীব্রতার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল তুরস্ক। তারপর আরও তিনটি ভূমিকম্প হয়। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই ভূমিকম্পের রেশ ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়া, লেবানন, গ্রিসে। তারপরই টনক নড়ে সবার। ফ্রাঙ্কের পোস্টের দিকে সবার নজর যায়। তিনি নিজেও এই ভূমিকম্পের খবর পাওয়ার পর পোস্ট করেন।
কিন্তু কে এই ফ্রাঙ্ক হুগারবিটস? তাঁর পরিচয় কী? ফ্রাঙ্ক আসলে ডাচ গবেষক। নেদারল্যান্ডে নিজের জায়গায় একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানও চালান, যার নাম ‘সোলার সিস্টেম জিওমেট্রি সার্ভে’ (Solar System Geometry Survey or SSGS)। ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে এই সংস্থা। ফ্রাঙ্কের বক্তব্য, ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী চাইলেই করা সম্ভব। আমদের পৃথিবী নিজেই একটি মহাজাগতিক বস্তু। তাকে ঘিরে আরও অজস্র মহাজাগতিক বস্তুপিণ্ড রয়েছে। সেখানে যেমন রয়েছে মঙ্গল, শুক্র, বৃহস্পতির মতো গ্রহ, তেমনই রয়েছে সূর্যের মতো নক্ষত্র। রয়েছে চাঁদ এবং অন্যান্য উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ। এই সমস্ত কিছুর প্রভাব পড়ে পৃথিবীতে। সেই বিশেষ জ্যামিতি, অঙ্ক গণনা করে ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব।
ফ্রাঙ্কের এই বক্তব্য নিয়েই এখন দুই ভাগে বিভক্ত নেট দুনিয়া। কারণ, তাঁর এই বক্তব্য নিতান্তই একটি তত্ত্বের পর্যায়ে রয়েছে। কোনও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠিত সূত্র বা নিয়ম নয়। ভূমিকম্পের বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য, এখনও ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো কোনও প্রামাণ্য মডেল আবিষ্কৃত হয়নি। কাকতালীয়ভাবে ফ্রাঙ্ক হুগারবিটসের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে। আবার একাংশের মতে, হয়তো সত্যিই কোনও সূত্র রয়েছে। ফ্রাঙ্ক সেটাই আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু তার বক্তব্যে গুরুত্ব দিলে হয়তো অনেকেই বেঁচে যেত।