বাজেট সম্পর্কে এই চমকপ্রদ তথ্যগুলি অনেকেরই অজানা

প্রতি বছরের মতো এ বছরও আজ ১ ফেব্রুয়ারি  ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। মোদি সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী হিসেবে  ২০১৯, ২০২০, ২০২১ সালের পর এবছর চতুর্থ বারের জন্য পার্লামেন্টে বাজেট উপস্থাপন করবেন সীতারমন। তবে একাধিক রীতিনীতি মেনে একপ্রকার অনুস্থানের পর সংসদে বাজেট উপস্থাপন করে ভারত সরকার। প্রথা মেনে একাধিক কর্মকাণ্ড পালন করা হয় আজও। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিছু পরিবর্তন আসলেও তা পুরোনো প্রথারই অভিযোজিত রূপ। জেনে নেওয়া যাক ভারতীয় বাজেট উপস্থাপনা সংক্রান্ত কিছু চমকপ্রদ কিছু তথ্য -

হালুয়া উৎসব

কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের আগে সংসদের নর্থ ব্লকে অর্থ মন্ত্রকের হেড কোয়ার্টারে প্রতি বছর এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাজেটে তৈরির সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত অর্থদপ্তরের  কর্মচারীদের  টানা ১০ দিন সংসদেই থাকতে হয়। নিজের পরিবার পরিজনদের সাথে দেখাও করতে পারেন না তাঁরা। শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রীই  মন্ত্রকের বাইরে যেতে পারেন। মূলত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্যই লক-ইন অবস্থায় থাকতে হয় কর্মচারীদের। বছরের পর বছর ধরে অর্থমন্ত্রকের সেই সমস্ত কর্মচারীদের পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দিতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। অর্থমন্ত্রী স্বয়ং হালুয়া তৈরিতে অংশ নেন। উপস্থিত থাকেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী-সহ মন্ত্রকের সচিব এবং আধিকারিকরা। তবে এবছর করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বাতিল করা হয়েছে হালুয়া উৎসব।

আরও পড়ুন-এবার আঙুল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দিকে! কেন নতুন করে চাঞ্চল্য পেগাসাস নিয়ে

বহিখাতা

আগে বাজেট সংক্রান্ত নথি আসতো ব্রিফকেস বন্দি হয়ে। কালো ,লাল বা কালচে খয়েরি রঙের চামড়ার ব্যাগ হাতে সংসদে ঢুকতেন অর্থমন্ত্রী। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে চালু ছিল এই পরম্পরা। কিন্তু ২০১৯ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার বদলে দেন এই ধারা। পরিবর্তে আনলেন বহি -খাতা। লাল শালুতে মোড়া থাকে সেই বাহি খাতা। তার উপরে অশোক স্তম্ভ। ভারতে হিসাব রাখার জন্য যে খাতা ব্যবহার করা হয় তাকেই বহিখাতা বলা হয়। তবে ২০২১ সালে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাথে সাযুজ্য রেখে ট্যাবলেট থেকে বাজেট পড়ে শোনান নির্মলা সীতারমন। স্বাধীনতার পর এটিই প্রথম পেপারলেস বাজেট। এবছরও বাজেট হবে ডিজিটাল। পাশাপাশি গত বছর, কেন্দ্রীয় সরকার আইন প্রণেতাদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জন্য 'ইউনিয়ন বাজেট মোবাইল অ্যাপ' চালু করেছে।

অন্যান্য আকর্ষণীয় তথ্য:

• বর্তমানে সকাল ১১ টা থেকে পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশন শুরু হলেও ব্রিটিশ আমলে বিকেল পাঁচটায় বাজেট পেশ করা হতো। ২০০০ সাল পর্যন্তও বিকেল পাঁচটার সময় পেশ হয়েছে বাজেট।

• ভারতে প্রথম বাজেট পেশ হয় ১৮৬০ সালে। স্কটল্যান্ডের অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ জেমস উইলসন পেশ করেছিলেন এই বাজেট।স্বাধীন ভারতে প্রথম বাজেট পেশ করা হয় ১৯৪৭ সালের ২৬ নভেম্বর। এই বাজেট পেশ করেছিলেন আর কে শন্মুখন চেট্টি।

•কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট পেশ হওয়ার আগেই তা ফাঁস হয়ে যায় একবার। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি ভবনেই ছাপা হত বাজেট সংক্রান্ত নথি। সেখান থেকেই  ফাঁস হয়ে যায় বাজেট। এরপর দিল্লির মিন্টো রোডে সরকারি ছাপাখানায় বাজেট সংক্রান্ত বিষয়বস্তু ছাপার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮০ সালে নর্থ ব্লকেই একটি সরকারি ছাপাখানা তৈরি করা হয়।

• ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার শুধুমাত্র ইংরাজিতে বাজেট পেশ করত। এরপর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ও ইংরাজিতে বাজেটের বক্তব্য ছাপার সিদ্ধান্ত নেয়।

• সবচেয়ে দীর্ঘতম বাজেটে বক্তৃতা দেন অরুণ জেটলি। ২০১৪ সালে টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে বাজেট পেশ করে তিনি।

•বাজেট মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটি রাজস্ব বাজেট এবং দ্বিতীয়টি মূলধন বাজেট। রাজস্ব বাজেট সরকার কর্তৃক গৃহীত সমস্ত রাজস্ব প্রাপ্তি এবং ব্যয় হাইলাইট করে। অন্যদিকে, মূলধন বাজেটে ব্যয় এবং প্রাপ্তির কথা বলা হয়। 

বাজেট পেশের একদিন আগে অর্থাৎ ঠিক আগের দিন সংসদে পেশ করা হয় অর্থনৈতিক সমীক্ষা। একে দেশের অর্থনীতির রিপোর্ট কার্ড ও বলা হয়ে থাকে। কৃষি, শিল্প ক্ষেত্রে আগের আর্থিক বর্ষে দেশের লাভ লোকসানের খতিয়ান দেওয়া হয় এই সমীক্ষায়।

More Articles