৬০ বছরে এই প্রথম, হু হু করে কমছে চিনের জনসংখ্যা! কেন?

China's Population Shrinks: ২০২২ সালের শেষে চিনের জনসংখ্যা প্রায় ১,৪১১,৭৫০,০০০-এ দাঁড়িয়েছে

জনসংখ্যা কমছে চিনের! সারা বিশ্বের কাছে এর চেয়ে চমকপ্রদ এবং উদ্বেগের খবর আর কীই বা হতে পারে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে এক বছরে অনেকখানিই কমে গিয়েছে জনসংখ্যা। গত ছয় দশকেরও বেশি সময়কালে এই ঘটনা এবার প্রথম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি জনসংখ্যাগত সংকটের মুখোমুখি। ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটিতে জন্মের হার কমতে শুরু করেছে। এই কমতে থাকার হার এতই দ্রুত যে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা পড়তে পারে।

২০২২ সালের শেষে চিনের জনসংখ্যা প্রায় ১,৪১১,৭৫০,০০০-এ দাঁড়িয়েছে, বেইজিংয়ের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (NBS) জানিয়েছে, আগের বছরের শেষের তুলনায় এবার জনসংখ্যা ৮৫০,০০০ কমেছে। এবার চিনে জন্মের সংখ্যা ছিল ৯.৫৬ মিলিয়ন। আর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০.৪১ মিলিয়ন। শেষবার চিনের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল ১৯৬০ সালে। সেবার সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল চিনকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, মাও সেতুংয়ের গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড নামে পরিচিত কৃষি নীতির কারণেই এই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

২০১৬ সালে চিন কঠোর 'এক-সন্তান নীতি' তুলে নেয়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ভয়ের কারণে ১৯৮০-এর দশকে চিনের বাসিন্দাদের উপর এই নীতি আরোপ করা হয়েছিল। ২০২১ সাল থেকে দম্পতিদের তিনটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে জনসংখ্যা বাড়েনি, বরং কমতে শুরু করেছে। অনেকেই বলছেন, জীবনযাত্রার খরচা ক্রমেই বাড়ছে। একইসঙ্গে কর্মশক্তিতে বেশি পরিমাণ মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে এবং বাড়ছে মেয়েদের উচ্চ শিক্ষাও। যার ফলে সন্তান নিতে চাওয়ার অগ্রাধিকার কমছে৷

আরও পড়ুন- ২৫৬ বছরের জীবনে মোট ২৩ বার বিয়ে! চিনের এই ‘রহস্যময়’ বৃদ্ধ আসলে কে!

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক শিউজিয়ান পেং বলছেন, চিনের জনগণ দীর্ঘকাল ধরে চলা এক সন্তান নীতির কারণে ছোট পরিবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফলে জন্মদানকে উৎসাহিত করার জন্য কার্যকর নীতি খুঁজে বের করতে হবে চিনের সরকারকে। নচেৎ জনসংখ্যা আরও কমবে। অনেক স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই দম্পতিদের সন্তান ধারণে উৎসাহিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ করছে৷ দক্ষিণাঞ্চলের মেগাসিটি শেনজেন এখন শিশু জন্মালে বোনাস দেয় এবং সন্তানের তিন বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত ভাতাও দেয়।

দম্পতি, যাদের প্রথম সন্তান রয়েছে তারা ৩,০০০ ইউয়ান পাবেন, যা তাদের তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে ১০,০০০ ইউয়ান অবধি বেড়ে যায়। জিনান শহর ১ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে মাসিক ৬০০ ইউয়ান মাসিক বৃত্তি দিচ্ছে। জনসংখ্যাবিদ হে ইয়াফুও এর বিশ্লেষণ বলছে, সন্তানের জন্ম দিতে পারেন এমন বয়সের মহিলাদের সংখ্যাও কমছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন কমেছে এই জনসংখ্যা। অর্থাৎ চিনে বয়স্ক জনসংখ্যাই বাড়ছে৷ যা মোটেও দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো না। ২০২৩ থেকে শুরু করে ২১০০ সাল পর্যন্ত চিনের অর্থনীতিতে এর গভীর প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।

 

More Articles