Gold Investment || জমানো টাকায় সোনা কিনছেন? বিনিয়োগ নাকি বড় ভুল হচ্ছে...

ইনভেস্টমেন্ট কারিগররা মনে করেন সোনা কখনই বিনিয়োগের সঠিক পথ নয়। এর থেকে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করা ভালো।

বাড়ির বড়দের অনেককেই বলতে শুনবেন, সোনা কিনে রাখো। খুব ভালো ইনভেস্টমেন্ট। আমাদের দেশের অনেক মানুষই এই ধারণাতে বিশ্বাসী। মেয়ের বিয়ে হোক বা ধনতেরাস বাঙালির সোনা কেনার হুজুগ পড়ে যায়। আর হবে নাই বা কেন? শেষ ২০ বছরে যে হারে বেড়েছে সোনার দাম তাতে আপাত দৃষ্টিতে এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তথ্য বলছে ২০০৭ সালেও প্রতি দশ গ্রাম সোনার দাম ছিল আট হাজার টাকার আশেপাশে। আজ ১৫ বছর পর সেই দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার টাকার ওপর। অন্যদিকে ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদের হার কমেছে বছর বছর। তবে সোনা কেন নয়!

 

কিন্তু জেনে রাখুন ইনভেস্টমেন্ট কারিগররা মনে করেন সোনা কখনই বিনিয়োগের সঠিক পথ নয়। এর থেকে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করা ভালো। আচ্ছা আপনি কখনও ভেবে দেখেছেন পৃথিবীর বড় শিল্পপতিরা কেন সোনা ছেড়ে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করেন? আজ জেনে নেওয়া যাক সোনায় বিনিয়োগ করা সঠিক নাকি সবটাই ভ্রান্ত ধারণা। তবে তার আগে দেখা যাক সোনা কবে থেকে সম্পদ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।

 

সোনার এল কী ভাবে

সোনার তাৎপর্য বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে যীশুর জন্মের বহু বছর আগে। ইজিপ্টের সভ্যতার থেকেও পুরনো সোনার ইতিহাস। সোনার মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয় ৫৬০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দ থেকে। সে সময় বণিকরা ব্যবসার কাজে সহজ মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন লক্ষ্যে এই ধাতুর ব্যবহার করতে শুরু করেন। ততদিনে বিশ্বের নানা প্রান্তে সোনার তৈরি গয়না যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। গয়নার থেকে মুদ্রাকে আলাদা করতে সরকারি স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হত। মুদ্রায় এই ধাতুর ব্যবহারের কারণেই পরবর্তীকালে ইউরোপ ও ইংল্যান্ডে জুড়ে এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ৭৭৫ সালে গ্রেট ব্রিটেন ধাতুর তৈরি মুদ্রা চালু করে। পাউন্ড, সিলিং, পেনস সবধরনের মুদ্রারই মূল ভিত্তি ছিল সোনা। পরবর্তীকালে সোনা ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকা জুড়ে সম্পদের প্রতীক হয়ে ওঠে। ভারতেও বিভিন্ন রাজার আমুলে চালু ছিল স্বর্ণমুদ্রা।সেই ধরনা থেকেই সোনা আজও সম্পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়।

 

সোনায় বিনিয়োগের অসুবিধা

সোনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সকলেই যে ভুল করেন তা হল এক্ষেত্রে বিনিয়োগে তেমন লাভের মুখ দেখা যায়না। একটু তলিয়ে ভাবলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আপনি যদি ভাল অঙ্কের লাভ আশা করেন এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ তৈরীর কথা ভাবেন তবে সোনা কখনই সঠিক বিনিয়োগ নয়। কারণ আজ আপনি যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সোনা কিনছেন তা বছর কুড়ি পরে বাজারে বিক্রি করতে গেলে বেশি টাকা পাবেন ঠিকই তবে সেটা আজকের নিরিখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২০ বছরে যে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে সেই অঙ্ক হিসাবেই ধরা হয় না। বিলিয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারীদের অন্যতম সম্ভবত এটি বোঝেন তাই তিনি যেকোনো অবস্থাতেই তিনি সোনায় বিনিয়োগের বিরুদ্ধে। অপরদিকে ভেবে দেখুন, যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সোনা কিনছেন তা কোনো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খাটাতে পারলে কুড়ি বছর পরে তা স্বভাবতই অনেক বড় আকার নেবে। লাভের পরিমাণ মিলবে যথেষ্ট।কিন্তু সোনার কয়েন বা বার কুড়ি বছরে কখনই পরিমাণে বেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ইনভেস্টমেন্ট কারিগরদের অনেকেই বলেন সোনায় বিনিয়োগ আদতে বোকামি। সাথে সোনা কতখানি খাঁটি সে নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়। পাশাপশি সোনার গয়না, কয়েন বা বার বাড়িতে থাকলে তার জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই অনেকেই যাঁরা আধুনিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানিং সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁরা সোনায় বিনিয়োগ করেন না।

 

আরও পড়ুন-ভালোবাসা বলতে সোনা রুপোর গয়নার আর ডুয়ার্স, এক অজানা বাপ্পি লাহিড়ির খোঁজে…

 

তবে যাঁদের সে সুযোগ নেই যেমন গৃহবধূদের ক্ষেত্রে সোনা ছাড়া উপায়ও নেই অন্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের। ডিমনিটাইজেশনের কথা মাথায় এলে নিশ্চয় মনে আসবে যে সব মহিলারা দীর্ঘদিন ধরে অল্প টাকা জুড়ে জুড়ে সঞ্চয় করেছিলেন, এক রাতেই সেসব টাকা বাতিল। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিকল্প এবং সবথেকে ভালো উপায় সোনা।অনেকে সোনায় বিনিয়োগ করার কথা ভাবেন কর ছাড়ের কথা ভেবে।আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কথা ভাবলে সোনা কেনার কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে 'পেপার গোল্ড' ধারণাটি সোনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া কিছু গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে। এই সংস্থাগুলি সোনার বাজারদর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগে করতে না চান তবে সরকারের গোল্ড বন্ডে টাকা রাখতে পারেন । এক্ষেত্রে সোনার দামের সাথেই বন্ডের দামও বাড়তে থাকে। সাথে প্রতিবছর ২.৫ % হারে সুদও পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থায় কর ছাড়ের সুবিধাও রয়েছে। আজকাল অনেকে সোনার খনির শেয়ারও কেনেন। এক্ষেত্রে আপনার কেনা শেয়ার স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের অনুরূপ।তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শেয়ারগুলি সোনার খনির সাথে সম্পর্কিত এবং সোনার দর দ্বারাই কমবেশি নিয়ন্ত্রিত হয় এগুলি।

 

অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না যে আজকের সময়ে সোনা কখনই সঠিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র নয়। হাজার হাজার বছরের মানসভ্যতার ইতিহাসে সোনা সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে ।কিন্তু বর্তমান বাজারে যখন মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেষ্টা করেন তখন পুরোনো এই চিন্তা যে ঠিক নয় তা জেনে রাখাই ভালো।

More Articles