রসগোল্লার আগে কেন লেখা হয় ‘স্পঞ্জ’ শব্দটি? কারণ জানলে চমকে যাবেন আপনিও

Sponge Rasgulla : আধুনিক স্পঞ্জ রসগোল্লা এর আবিষ্কার হয় খোদ কলকাতাতেই

সাদা রঙের গোলাকার বোমা। মুখে দিলেই অমৃত! রসগোল্লা, নামটাই যথেষ্ট। উড়িষ্যার সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল বাংলা। এখন আর কারোর জানতে বাকি নেই যে রসগোল্লার জন্মস্থান এই বাংলাই। ঘরোয়া কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্লাইম্যাক্স যে মিষ্টি, তার লম্বা জার্নিতে বাংলার নানা জায়গার ঐতিহ্য নিজেদের মতো করে রসদ জুগিয়ে এসেছে। তবে রসগোল্লা সর্বাগ্রে। এ মিষ্টির জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, বাংলার যে কোনও প্রান্তে মিষ্টির দোকান মানেই থাকবে রসগোল্লা। ময়রা হওয়ার প্রাথমিক শর্ত তাই রসগোল্লার পাক।

দেবশ্রী রায়ের লিপে ‘কলকাতার রসগোল্লা’ যতোই বিখ্যাত হোক না কেন ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, রসগোল্লার আদি বাড়ি নদিয়া। ফুলিয়ার হারাধন ময়রা রসগোল্লার আদি সৃষ্টিকর্তা। যদিও কেউ কেউ মনে করেন, রসগোল্লার আদি উৎপত্তিস্থল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে। আবার উড়িষ্যাও এক সময় দাবি করেছে এ মিষ্টি নাকি তাদের। কিন্তু এসবের বিতর্কের অবসান ঘটেছে ইতিমধ্যে। রসগোল্লার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব এখন বাংলার পকেটস্থ। কিন্তু এ তো গেল নদীয়ার কথা, তবে ককাতের রসগোল্লার সফরটা কেমন? সে কি কেবলই ওই একটি মাত্র গানেই সীমাবদ্ধ নাকি! মোটেই সেরকম নয়।

আরও পড়ুন - বাংলার বিরিয়ানির বিশ্বজয়, যে ভাবে বিশ্বমঞ্চে কিস্তিমাত করল বাঙালির প্রিয় খাবার

আজকের বাজারে অতি পরিচিত রসগোল্লা বলতে আমরা যা বুঝি অর্থাৎ আধুনিক স্পঞ্জ রসগোল্লা এর আবিষ্কার হয় খোদ কলকাতাতেই। ১৮৬৮ সালে কলকাতার নবীনচন্দ্র দাস ময়রা প্রথম ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লায় নিয়ে আসেন নয়া চমক। রস চিপে বের করে নিলেও আগের মতো ফুলে যায়, যেন সত্যিই স্পঞ্জের মতো নরম। মুখে দিদি মিলিয়ে যায়। এতদিন মোটা চিনির রসে ডোবানো হতো ছানার গোল্লা, নবীন ময়রা ঠিক করলেন রোজ হবে একদম পাতলা। হাল্কা রসে ডোবানো রসগোল্লা হল আরও নরম,সেই থেকেই তিনি নাম দিলেন “স্পঞ্জ”। সেই সময় ব্রিটিশ মহলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে বাংলার রসগোল্লার আগে বসা ইংরেজি ‘স্পঞ্জ’ শব্দটি।

তবে কী এমন বিশেষত্ব এই রসগোল্লার?

এমনিতেও কলকাতা বা পার্শ্ববতী শহরের রসগোল্লার সঙ্গে গ্রামের রসগোল্লার স্বাদের একটা তফাৎ লক্ষ্য করাই যায়। এর আসল কারণ হল প্রস্তুতির পদ্ধতি। স্পঞ্জ নামের আসল রহস্য লুকিয়ে ওখানেই। স্পঞ্জ রসগোল্লার তৈরির ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হয়, ছানা কাটার পর গরম অবস্থাতেই গোলাকার অংশ তৈরি করতে হয়৷ ঠান্ডা হয়ে গেলে মোটেই আর স্পঞ্জের স্বাদ হয় না। যদিও এমনি মোটা রসের রসগোল্লার ক্ষেত্রে এরকম কোনো নিয়মই নেই। গরম গরম পাকিয়ে ফুটন্ত হালকা রসে ছেড়ে দেওয়া এটাই আসল। এখানেই স্বাদের মূল তফাৎ। তাই দোকানে গিয়ে স্পঞ্জ রসগোল্লা খোঁজা বাঙালির কাছে এ রহস্য বেশ সুস্বাদু, তা বলাই বাহুল্য।

More Articles