বাংলার বিরিয়ানির বিশ্বজয়, যে ভাবে বিশ্বমঞ্চে কিস্তিমাত করল বাঙালির প্রিয় খাবার
Kolkata : খাবারের স্বাদে বিশ্বসেরা কলকাতা
বাঙালি যে খাদ্যপ্রেমী একথা অবশ্য নতুন করে বলার কিছুই নেই। হাবে ভাবেই বোঝা যায় রসিক সে জন। কলকাতার খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে লম্বা ইতিহাস। কলকাতা শহর হল সংস্কৃতির মিলনস্থল। এই শহরের খাদ্য তালিকায় দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ এবং দেশান্তরিত হওয়ার ফলে অনেক নতুন খাদ্যের সংযোজন হয়েছে। একদিকে যেমন এসেছে চিনা স্বাদের চাউমিন, মোমো, ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন তেমনই আবার মুঘলাই খানার জমাটি আয়োজন। অন্যদিকে, কলকাতা শহরে রয়েছে ব্রিটিশ স্টাইলের বেকারি, যার বয়সও প্রায় প্রাক স্বাধীনতার সমসাময়িক। তাছাড়া নিজস্ব বাঙালি খাবারের স্বাদ ভুললেই বা চলবে কী করে! সেখানেও তো রয়েছে ঐতিহ্যের গন্ধ। খাদ্য রসিক মানুষের কাছে তাই সব মিলিয়ে তিলোত্তমা এনে দেয় স্বর্গীয় আমেজ। সম্প্রতি এ হেন সর্গীয় আমেজেরই নয়াস্বীকৃতি জুটেছে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে। ইটার নামে একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বের সেরা এগারোটি খাদ্য গন্তব্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে প্রাণের শহর কলকাতা। দিল্লী, মুম্বাই, কেরল নয় ২০২৩ সালে বিশ্বসেরা আমাদের বাংলা। বাঙালির হাত যশেই মুগ্ধ গোটা বিশ্ব।
ইটারের তালিকায় আলবুকার্ক (নিউ মেক্সিকো), কেমব্রিজ (ইংল্যান্ড), ডাকার (সেনেগাল), সার্ডিনিয়া (ইতালি), ম্যানিলা (ফিলিপাইন), হো চি মিন সিটি (ভিয়েতনাম), তামাকি সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার সঙ্গে ছিল মাকাউরাউ (নিউজিল্যান্ড), অ্যাশেভিল (উত্তর ক্যারোলিনা), হ্যাল্যান্ড (সুইডেন) এবং গুয়াতেমালা সিটিও (গুয়াতেমালা)। আর এই সবাইকে পিছনে ফেলে সেরার সেরা কলকাতা। ইটার তার অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ঘোষণা করে ফলাফল।
আরও পড়ুন - চিকেন স্টু থেকে মালাই টোস্ট, আজও কলকাতার খাবারের সেরা ঠিকানা এই একচিলতে গলি
ইটারের মতে, “২০২৩ সালের সেরা খাবারের গন্তব্য বাছাই করার সময়, আমরা শুধু যে শহরের সেরা কিছু খাবারের স্বাদকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখেছিলেম তাই নয়, পাশাপাশি সরি খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ইতিহাস, সংস্কৃতি, খাবারকে ঘিরে মানুষের আবেগ, পরিবেশ, পরিস্থিতি সবকিছুকেই গুরুত্ব দিই।” আর এই সব কটি নিরিখেই সেরা হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে কলকাতা। তাও আবার সেরা এগারো খাবারের ঠিকানা হিসেবে।
কলকাতা চিরকেলে স্মৃতির শহর। এখানে এসেই মিলে মিশে যায় সংস্কৃতি, আবেগ। আর খাবারের প্রতি যে প্রেম সেও এক্কেবারে খাঁটি স্বাদের। একমাত্র এটাকেই বোধ হয় এখনও গিলতে পারেনি রাজনৈতিক দখল। কর্পোরেট এসেছে ঠিকই তবে এ শহরে আজও কদর করে ঘরে তৈরি সুস্বাদু খাবার। কদর করে রাস্তার ধারের ছোট ছোট পাইস হোটেলগুলিকে। ক্যাফে, রেস্তোরাঁর ভিড়ে সে স্বাদ আজও অমলিন। এছাড়াও রয়েছে ইউনিক স্বাদের নানা খাবার আর সেই সব মিলিয়ে উঠে এসেছে এগারো খাবারের তালিকা। বাদ যায়নি রাস্তার ধারে ঘুমটি দোকানের খবারগুলিও।
খাবারের তালিকায় সবার প্রথমেই আসে কলকাতার বিরিয়ানির নাম। বিফ, মাটন অথবা চিকেন, অবশ্যই আলু দিয়ে। লাল কাপড়ে মোড়া হাঁড়ি এখন পাড়ার মোড়ে মোড়ে। জনপ্রিয়তা বোঝানোর জন্য এই বা কম কি! এছাড়াও রয়েছে ফুচকা, হিংয়ের কচুরি কিংবা হাতে গরম তেলেভাজা। বাদ যায় না শহরের মিষ্টির ইতিহাসও। বাহারি স্বাদের সন্দেশ থেকে শুরু করে কলকাতার বিখ্যাত রসগোল্লা, সবই যেন অমৃত। এছাড়াও রয়েছে মা ঠাকুমার হাতে তৈরি সুস্বাদু মাছের ঝোল অথবা কষা মাংসের স্বাদ। e শহরের মাছ প্রেমের ইতিহাসও অনেক অনেক লম্বা।
কলকাতা এমন একটা শহর যেখানে শ্রেণী বিভাজন অথবা অর্থনৈতিক বাধার ঊর্ধ্বে খাদ্যপ্রেমের সংস্কৃতি। ইটার উল্লেখ করেছে, এ শহরের খাদ্য শিল্পের শিকড়গুলির কথা। সেখানেই উঠে এসেছে পাইস হোটেলের প্রসঙ্গ। যেখানে ভোজনশালাগুলিতে সস্তায় মেলে পেটচুক্তি আহার।এ থেকেই বোঝা যায়, শহরে খাদ্য শিল্পের শিকড় অনেক গভীরে।
আরও পড়ুন - চিনে খাবারের স্বর্গরাজ্য, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে কলকাতার এই এলাকা
সব কিছুতেই সেই খাবার। ছোট বড় উৎসব থেকে শুরু করে গম্ভীর রাজনৈতিক আলোচনা সম্পূর্ণ করে খাবারই। ছোট মাটির ভাঁড়ে এক কাপ চা না হলে জনে না বিতর্ক। খাবারের স্বাদে এবং গন্ধে আলোচনাও হয়ে ওঠে সুস্বাদু।
সকালের শুরুতে গরম গরম হিংয়ের কচুরি আর আলুর তরকারি, দুপুরে জমিয়ে মাছ ভাত, বিকেলে মাটির ভাঁড়ে দুধ চা। এর সঙ্গে সন্ধেবেলা একটু ফুচকা অথবা চাইনিজ হোল্ড অবশ্য মন্দ হয় না। তারপর রাতে আবার জমাটি খাবার। বিরিয়ানি,মোগলাই অথবা নুদেন পক্ষে রুটি তরকা, সবই আহা! তাই ইটার সংস্থাকে কলকাতার সম্পাদক অনুরোধ করেছিলেন, ‘সিটি অফ জয়’স ফুচকা, কলকাতার বিরিয়ানি, দেশি চাইনিজ, কাটি রোলস, তেলে ভাজা এবং মিষ্টি খেয়ে দেখতে। আর শেষ পারে অবশ্যই লাল মিষ্টি দই। ব্যাস এটাই বাজিমাত। স্বাদের বহরে কলকাতার মাথায় সেরার শিরোপা।