২ টুকরো মাত্র, তাতেই হু হু করে কমছে আয়ু! না জেনেই যেসব খাবার খাচ্ছেন রোজ

Foods Shortening Life Span: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস (দু' টুকরো বেকনের সমতুল্য) খাওয়া আপনার মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪% বাড়িয়ে দিতে পারে।

শরীর ভালো রাখতে কী কী খাবেন, তা এতদিনে নানা লেখা-জোখা, ভিডিওর কল্যাণে কানের ভেতর দিয়ে মরমে ঢুকে পড়ে সচেতনতার শিকে ছিঁড়ে ফেলেছে। কিন্তু কী কী করণীয় তা জানার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কী কী করতে নেই। কী খাব-র থেকে জরুরি তাই, কী খাব না। কোন খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে তা জানা ভীষণই দরকারি তাই। দীর্ঘায়ুর প্রতি লোভ থাকলে, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে চাইলে তাই লোভনীয় খাবার, পছন্দের পানীয় থেকে দূরে থাকতে হতেও পারে৷

অস্বাস্থ্যকর খাবার একেবারে বাদ দিতে হলে চোখ-বুক ফেটে জল আসতেই পারে। খাবারের মোহ-মায়া ত্যাগ কোনওভাবেই চাট্টিখানি ব্যাপার না। তবে জীবনের আসল মন্ত্র হলো, পরিমিতি বোধ! পরিমিতভাবে এই জাতীয় খাবার খেলেও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা যায়। কোন কোন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে তাহলে?

প্রক্রিয়াজাত মাংস

স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যেমন প্রসেসড মিটে পাওয়া যায়, তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য রোগও ডেকে আনে। বেকন বা সসেজ ছাড়া জীবন বৃথা মনে হলে, সপ্তাহে মাত্র একবার এই জাতীয় মাংস খান। নতুন গবেষণা বলছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস আয়ু কমায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস (দু' টুকরো বেকনের সমতুল্য) খাওয়া আপনার মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪% বাড়িয়ে দিতে পারে।

হু বলছে প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রক্রিয়াজাত মাংসকে গ্রুপ ওয়ান কার্সিনোজেন হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। অর্থাৎ এই মাংস যে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তার নিশ্চিত প্রমাণ রয়েছে। এমনই একটি খাবার হল বিফ হট ডগ। মিশিগান স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলছে ৬১ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংসের ফলে ৩৬ মিনিট আয়ু কমে যেতে পারে।

আরও পড়ুন- উচ্চ রক্তচাপ মানেই মৃত্যুর হাতছানি, ভারতে হু হু করে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি

লাল মাংস

হ্যামবার্গার এবং স্টেকের লাল মাংস হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। রেড মিটের বদলে মুরগি বা মাছের মতো স্বাস্থ্যকর প্রোটিন উৎসের উপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।

চিনিযুক্ত পানীয়

সোডা এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত পানীয়গুলিতে প্রচুর পরিমাণে অস্বাস্থ্যকর চিনি এবং ক্যালোরি থাকে। দাঁতের ক্ষয় এবং স্থূলতা বৃদ্ধি করে এই জাতীয় পানীয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে জল বা চা-ই সবথেকে ভালো কারণ এগুলি ক্যালোরি-মুক্ত এবং চিনিযুক্ত পানীয়ের মতো দাঁতের ক্ষতি করে না। পাশাপাশি চা বা জল সারাদিন শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে।
চিনিযুক্ত কোন কোন পানীয় আয়ু কমায়:

সোডা

ফ্রুট জ্যুস

স্পোর্টস ড্রিঙ্ক

মিষ্টি বরফ চা

মিষ্টি কফি

এনার্জি ড্রিঙ্ক

এনার্জি ড্রিঙ্কসে সাধারণত ক্যাফিন সহ উত্তেজক উপাদান থাকে যা শক্তি বৃদ্ধি করে। কিন্তু এটি হার্টের সমস্যা, উদ্বেগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণও হতে পারে। দ্রুত শক্তি বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে ভেষজ চা বা কফি খেতে পারেন।

ভাজা খাবার

বেশি ভাজা খাবারে অস্বাস্থ্যকর চর্বি এবং কোলেস্টেরল থাকে। এই খাবারগুলি হৃদরোগ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। খাবার ভাজা এড়িয়ে চলুন এবং এয়ার ফ্রাইং, বেকিং বা গ্রিলিংয়ের মতো স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে রান্না করে দেখুন।
ভাজা খাবারের বিকল্প হতে পারে কোন কোন খাবার:

বেকড চিকেন বা মাছ

গ্রিলড সবজি

স্টিমড ব্রকোলি বা ফুলকপি

পোচ করা ডিম

আলুভাজা বা সাদা ভাতের পরিবর্তে কুইনোয়া বা ব্রাউন রাইস

যেসব খাবারে চিনি বেশি থাকে

অ্যাডেড সুগার স্থূলতা, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেসব খাবারে শর্করা বেশি থাকে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

সোডা এবং অন্যান্য চিনিযুক্ত পানীয়

অ্যাডেড সুগারের ফ্রুট জ্যুস

ক্যান্ডি বার এবং অন্যান্য মিষ্টি

আইসক্রিম এবং অন্যান্য ডেজার্ট

চিনিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে তাজা ফল, বাদাম, বীজ বা গোটা দানার শস্য বেছে নিন। খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হলে খুব সামান্য খান আর বাকিটা পরে খাওয়ার জন্য রাখুন।

রিফাইনড গ্রেইনস

সাদা পাউরুটি এবং পাস্তা ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। রিফাইনড গ্রেইনসের বদলে খেতে পারেন:

কুইনোয়া

ব্রাউন রাইস

যব

মিলেট

ওটস

আরও পড়ুন- বিশ্বে আর কোনও প্রাণীই ভালোবাসে না, একমাত্র কেন মানুষের পছন্দ ঝাল খাবার?

প্রসেসড ফুড

অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ক্যানড স্যুপ, প্রি-প্যাকেজড স্ন্যাকসে বেশি পরিমাণে নুন আর চিনি থাকে। এতে এমন অনেক রাসায়নিক থাকে যা শরীরের জন্য ভালো নয়। এই রাসায়নিকগুলি ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলির মধ্যে রয়েছে:

প্রিজারভেটিভস: সোডিয়াম বেনজয়েট, বিএইচএ এবং বিএইচটি- এই রাসায়নিকগুলি খাবারকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। কিন্তু এগুলো ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের কারণ হতে পারে।

কৃত্রিম স্বাদ: আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভারের মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক যেমন পেট্রোলিয়াম বা কয়লার আলকাতরাও থাকে।

খাবারের রঙ: কৃত্রিমভাবে রঙ করা খাবারে প্রায়ই আর্সেনিক এবং সীসার মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে।

সোডিয়াম নাইট্রাইট: এই রাসায়নিকটি প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন বেকন, হ্যাম এবং হট ডগ নষ্ট এবং বিবর্ণ হওয়া রোধ করতে ব্যবহার করা হয়। এই পদার্থ থেকে ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগ হতে পারে প্রমাণ আছে.

কৃত্রিম মিষ্টি

ডায়েট সোডা এবং দইয়ের মতো অনেক খাবার এবং পানীয়তে কৃত্রিম মিষ্টির জন্য অ্যাসপার্টাম, স্যাকারিন এবং সুক্রলোজ ব্যবহৃত হয়।

দুগ্ধজাত পণ্য

দুগ্ধজাত খাবারে কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। এই খাবার অ্যালার্জি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। সয়া মিল্ক বা বাদাম দুধের এক্ষেত্রে বিকল্প দিহতে পারে।

মদ

অত্যধিক অ্যালকোহল লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির ক্ষতি করতে পারে। অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণ প্রতিদিন এক পেগের মধ্যেই রাখুন।

সোডিয়াম

উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই খাবারগুলোর মধ্যে কম সোডিয়াম থাকে।

 

More Articles