ছোট্ট ভুলেই মৃত্যু ঐন্দ্রিলার! কেন মারাত্মক এই অভিযোগ মায়ের?

Aindrila Sharma: ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা জানিয়েছেন, "...কিন্তু একজন চিকিৎসক একদম সাহায্য করেননি। এটা কিন্তু আমরা ভুলব না।''

অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুর পর দু'সপ্তাহ কেটেছে। এখনও শোকের আঁচ কমেনি তাঁর পরিবারের। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই এবার বিস্ফোরক দাবি করেছেন ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা। প্রয়াত ঐন্দ্রিলার জন্য আয়োজিত জীবন বীমা নিগম কর্মচারী সংগঠনের তরফে একটি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি। ঐন্দ্রিলার মায়ের দাবি, "ঐন্দ্রিলার জন্য আরও কিছু করা যেত, ওর চিকিৎসায় চেষ্টা করা যেত। সেটা হয়নি। কয়েকজন সাহায্য করলেও একজন ডাক্তারের ইগো সমস্যা বিপদ বাড়িয়েছিল। আমরা চাইনি এটা হোক।'' শিখা শর্মার আরও দাবি, "ওখানের নার্সিং পরিষেবা খুব ভাল। হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে যে চিকিৎসক, ডাক্তার মল্লিক ওর অপারেশন করেন তিনিও খুব ভাল। কিন্তু একজন চিকিৎসক একদম সাহায্য করেননি। এটা কিন্তু আমরা ভুলব না।''

এখানেই শেষ নয়, শোকগ্রস্ত ঐন্দ্রিলার মায়ের দাবি, ''আমরা তো চেয়েছি মেয়েকে বাঁচাতে, বাইরে থেকে কাউকে এনে যদি কিছু করা যায়। বাইরের চিকিৎসক আনিয়ে। কিন্তু ডাক্তারদের ইগো বিপদ বাড়াল আরও। ওর দু'দিন পরেই জ্ঞান আসে। একটু ভালো হচ্ছিল। কিন্তু...''। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তে এমআরআই পরীক্ষা করানো নিয়েও সরব হন ঐন্দ্রিলা শর্মার মা। তিনি জানিয়েছেন, মেয়ের শরীরের যা পরিস্থিতি ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ ধরে এমআরআই করানো হয়। সেটা তাঁরা চাননি। ওই পরীক্ষার পরেই মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় বলে অভিযোগ তাঁর।

চোখের জল মুছতে মুছতে কন্যা হারানো মায়ের আর্তনাদ, "এই চোখের জল আমাদের সারাজীবন থাকবে। আমার মেয়েটা কোনওদিন কাঁদেনি। ভগবানকে বলব, যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে তাহলে ও যেন ফের একটা সুস্থ জীবন পায়। এই জীবনে তো অনেক কষ্ট পেল!'' ঐন্দ্রিলার মা নিজেও স্বাস্থ্যকর্মী। অভিনেত্রীর বাবা চিকিৎসক। দিদিও চিকিৎসক। এসব বলতে বলতেই ওই অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিখা। সব্যসাচী প্রসঙ্গে তিনি জানান, "মন তো খুবই খারাপ। ও নিজের মতোই থাকছে।''

আরও পড়ুন- মৃত্যুতেও অদ্বিতীয়া তিনি, ‘জিয়নকাঠি’র ছোঁয়ায় আবারও পর্দায় ফিরছেন ঐন্দ্রিলা শর্মা

প্রসঙ্গত, ১ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐন্দ্রিলা। অবশ হয় শরীর। আচমকা আচ্ছন্নে যান অভিনেত্রী। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ভর্তি করানো হয় হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? ঐন্দ্রিলার মা জানান, "ঠিকই ছিল। হঠাৎ আমাকে বলল হাত নাড়তে পারছে না। আমিও দেরি করিনি। অন্যদের জানিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি।'' এরপর থেকে প্রায় ২০ দিন জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান অভিনেত্রী। একবার শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতিও হয়। আবার অবনমন ঘটে। এভাবে চলতে চলতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা শর্মা। তারপর ১৮ নভেম্বর তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হয় আরও। অবশেষে ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে মৃত্যু হয় ঐন্দ্রিলার।

ঐন্দ্রিলা এবং সব্যসাচীর প্রেমকথা থেকে শুরু করে অভিনেত্রীর ক্যান্সার জয়, বারবার শিরোনামে এসেছে এই ছবি। ঐন্দ্রিলা হয়ে উঠেছেন অভিনব, অনন্য। তাঁর মৃত্যু মূহ্যমান হয় সোশ্যাল দুনিয়াও। এবার ঐন্দ্রিলার মায়ের এই দাবি ফের বাড়িয়ে দিয়েছে বিতর্ক। অভিনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

৩ ডিসেম্বরের ওই স্মরণসভায় দাঁড়িয়ে প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মায়ের এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়েছে সোশ্যাল-দুনিয়ায়। মুখ খুলেছেন টলিউডের অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বাংলা ধারাবাহিকের এক পরিচিত মুখের দাবি, "ঐন্দ্রিলার মৃত্যু, ওঁর চিকিৎসা নিয়ে নানা কিছু শুনছিলাম। কিন্তু যেহেতু ওঁর পরিবারের বিষয়, তাঁরা দেখছেন, চিকিৎসক-পরিবার সবাই আছেন, সেখানে আমাদের বন্ধু হলেও কিছু বলা অন্যায়।'' এই বিষয়ে ইনস্ক্রিপ্ট যোগাযোগ করেছিল কলকাতার এক সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনি জানান, "এরকম হতে পারে কিনা জানা নেই! কারণ, আমাদের পেশায় সকলেই শপথ নিই রোগীকে সুস্থ করে তোলার। সেক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ইগোর প্রশ্ন আসেই না। হয়তো অভিনেত্রীর মা, মাতৃত্বের আবেগের জায়গা থেকে এমন দাবি করতে পারেন।'' যদিও এর খানিকটা বিপরীত দাবি করছেন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। তাঁর দাবি, "ইগো কিন্তু থাকে।'' কেন? ওই চিকিৎসকের দাবি, "ধরা যাক, আমি রোগীকে দেখছি। আমার টিম তাঁর চিকিৎসা করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা ব্যর্থ হলেই তো বাইরে থেকে কেউ আসবেন! একই বিভাগের। মানে, যে বিভাগ নেই ওই নির্দিষ্ট হাসপাতালে সেই বিভাগের চিকিৎসক আনানো নয়, আমাদের অর্থাৎ যাঁরা চিকিৎসক হিসেবে রয়েছেন ওই নির্দিষ্ট রোগীর জন্য, তাঁদের একই বিভাগের কাউকে আনানো খানিকটা অসম্মানের! এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ইগো-বিরোধ করবেই না, এটা হতে পারে না! হয়তো সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে অভিনেত্রীর মা এমন দাবি করে থাকতে পারেন। তবে সেটার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে দেখতে হবে।''

আরও পড়ুন- ঐন্দ্রিলাহীন ১৩ দিন, কেমন আছেন সব্যসাচী চৌধুরী?

প্রসঙ্গত, ঐন্দ্রিলা শর্মার চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালের গাফিলতি নিয়ে গুজব রটে একবার। যদিও শর্মা পরিবার এমনকী সব্যসাচীর তরফে এই বিষয়ে কখনও কোনও অভিযোগ করা হয়নি। চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন, বারবার একথাই বলেছেন সব্যসাচী। ৭ নভেম্বর, ১৪ নভেম্বর। সপ্তাহান্তে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আপডেট দিয়েছেন সব্যসাচী। অভিনেত্রীর মৃত্যুর গুজবের বিরুদ্ধেও হাল ধরেছেন তিনি। অবশেষে সমাজমাধ্যমের সমস্ত প্রোফাইল সরিয়ে দিয়েছেন অভিনেতা। এছাড়া ঐন্দ্রিলার চিকিৎসক দিদি বা চিকিৎসক বাবার তরফেও কোনও অভিযোগ করা হয়নি। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ঐন্দ্রিলা শর্মার মা কেন এমন দাবি করলেন, তাহলে কি সত্যিই ইগো বা চিকিৎসকদের গাফিলতি ছিল, এই প্রশ্নেই দু'ভাগ হয়েছে সোশ্যাল দুনিয়া। অভিনেত্রীর ভক্তকুল পাশে দাঁড়িয়েছেন শিখা শর্মার।

ছোট থেকেই নাচকে ধ্যানজ্ঞান করেছিলেন বহরমপুরের বাসিন্দা ঐন্দ্রিলা। পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলেন বরাবর। হাসিখুশি মেয়েটি বিপদের সম্মুখীন হন ২০১৫ সাল নাগাদ। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই হঠাৎ আক্রান্ত হন মারণ রোগ ক্যান্সারে। চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। অবশেষে লড়াই জেতেনও। মাঝপথে পড়াশোনায় বিরতি দিলেও স্বপ্নপূরণ হয় নায়িকার। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নে মশগুল ঐন্দ্রিলা সুযোগ পান 'ঝুমুর' ধারাবাহিকে। সেখানেই পরিচয় হয় সহঅভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর সঙ্গে। চলতে থাকে অভিনয়। ছোট পর্দার পরিচিত মুখ ঐন্দ্রিলার বিপদ বাড়ে ফের। আবারও ফিরে আসে ঘাতক। ফের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। সেই লড়াইও জিততে শুরু করেন অভিনেত্রী। আবারও ফেরেন অভিনয়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এবার ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ! মাত্র ১৯ দিনের লড়াই শেষে মৃত্যু হয় তাঁর।

More Articles