ভারতের বুকেই এক টুকরো কাতার, যে গ্রামের গল্প চমকে দেবে আপনাকেও

FIFA World Cup 2022: গ্রামে ঢুকলেই কাতারের পতাকা আপনাকে স্বাগত জানাবে। দেওয়ালে দেওয়ালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ছবি, ব্যানার, আঁকা।

মানচিত্রের হিসেবে দেখলে, দোহা আর দিল্লির দূরত্ব মোটামুটি ২৫৫৫ কিলোমিটার। কিন্তু ফুটবল তো সেসব বোঝে না। বোঝে না তার পাগল ভক্তরা। তাই কাতারের মাটিতে ফুটবল বিশ্বকাপের বল গড়ালেও, ভারতে ভুভুজেলা ঠিকই বাজছে। অলিতে গলিতে ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স বনাম পর্তুগাল, স্পেনের মহারণ। মেসি, রোনাল্ডো, এমবাপ্পেদের থেকে অনেকটা দূরে থেকেও প্রবলভাবে উন্মাদনায় ভাসছে এই দেশ। ঠিক যেমন কেত্তুঙ্গল। কেরলের এই ছোট্ট, অখ্যাত গ্রামটিও এবারের বিশ্বকাপের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। ভারতের বুকে এক টুকরো ছোট্ট কাতার হয়ে সেজে রয়েছে কেত্তুঙ্গল। বিশ্বকাপের বাঁশিতে বাজনা ওঠার পর এখানে সবার মনেই উন্মাদনা…

ফিফার তরফেও ভারতের এই গ্রামটির কথা তুলে ধরা হয়েছে। গ্রামে ঢুকলেই কাতারের পতাকা আপনাকে স্বাগত জানাবে। দেওয়ালে দেওয়ালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ছবি, ব্যানার, আঁকা। সেইসঙ্গে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পোস্টারও দেখা যাবে। আরেকটু ভেতরে ঢুকলেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মেসি, রোনাল্ডো, নেইমাররা। জলে ভাসছে এবারের বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল। কাট আউট আর ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলির জাতীয় পতাকায় মোড়া একটা গ্রাম, যা দেখে একটু সময়ের জন্য মনে সন্দেহ আসতে বাধ্য। সত্যিই কি কাতার চলে এল দুয়ারে?

আরও পড়ুন : বিকিনিতে আটকে চোখ, কাতারের স্টেডিয়ামে ঝড় তোলা এই সুন্দরীকে চেনেন?

আসলে কেত্তুঙ্গল গ্রামটির সঙ্গে কাতারের যোগসূত্র তৈরি হয়েছে অদ্ভুতভাবে। ১৯৫২ সালে আব্দুল আজিজ নামের এক গ্রামবাসী প্রথমবার কাতারে যান। উদ্দেশ্য ছিল কোনও একটা কাজ খোঁজার। তার আগে গ্রামটির অবস্থা ততটা ভালো ছিল না। আব্দুল আজিজের পর আরও কয়েকজন কাতারে যান। একটু একটু করে তাঁরা কাজ পেয়ে যান, আর গ্রামেও টাকা আসতে থাকে। ব্যস, সেখান থেকেই সূত্রপাত। ১৯৫২-র পর থেকে বহু মানুষ কেত্তুঙ্গল গ্রাম থেকে কাতারে গিয়েছেন। কাজ করেছেন, উপার্জিত অর্থ পাঠিয়েছেন বাড়িতে। গ্রামের অবস্থাও ধীরে ধীরে ফিরেছে।

এই মুহূর্তে এই গ্রামের অন্তত ৩৫০ জন বাসিন্দা কাতারে কাজের সূত্রে রয়েছেন। অবস্থা এমনই, গ্রামের প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন কাতারে গিয়ে কাজ করছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, পরিকাঠামোর যা উন্নতি হয়েছে, সব ওই মানুষগুলোর জন্যই। ওরা কাতার না গেলে এসব কিছুই হতো না। তখন থেকেই কেত্তুঙ্গলের পরিচিতি ‘ভারতের কাতার গ্রাম’ হিসেবে। ২০২২-র ফুটবল বিশ্বকাপ কাতারে হওয়ার খবরে তাই গ্রামবাসীরা খুবই উৎসাহিত।

আরও পড়ুন : অধ্যাপনা ছেড়ে ফুটবল! বিশ্বকাপ ফুটবলে অনুপ্রেরণার অনন্য নজির এই রেফারি

২০ নভেম্বর, বিশ্বকাপের উদ্বোধনের দিন থেকেই উৎসবের মেজাজ কেরলের এই গ্রামে। ওইদিন গ্রামে বিশাল শোভাযাত্রাও বের করা হয়েছিল। প্রায় ২০০০ মানুষ সাদা-মেরুন রঙে (কাতারের পতাকার রঙ) সজ্জিত হয়েছিলেন। তবে এতকিছুর মধ্যে ফুটবলকে দূরে রাখলে তো হবে না। মেসি, রোনাল্ডোরা তো সর্বক্ষণ জুড়ে আছেন কেত্তুঙ্গলের সঙ্গে। গ্রামে বিশাল বড়ো স্ক্রিন লাগিয়ে চলে খেলা দেখা। প্রতিটা ম্যাচই দেখানো হয়, সঙ্গে চলে লড়াই। মেসি গোল করলে আনন্দে ভেসে ওঠে গোটা কেত্তুঙ্গল, ভারতের এক টুকরো ছোট্ট কাতার।

More Articles