বিকিনিতে আটকে চোখ, কাতারের স্টেডিয়ামে ঝড় তোলা এই সুন্দরীকে চেনেন?

FIFA World Cup 2022: কাতারের স্টেডিয়ামে তাঁর উপস্থিতি ইতিমধ্যেই খবরের শিরোনামে। পোশাক ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্কও...

গ্রুপ পর্যায় পেরিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে শেষ ১৬-র। কয়েকদিন পরই শুরু হবে কোয়ার্টার ফাইনালের মহারণ। কাতারের মাটিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের লড়াই চলছে জোরকদমে। বিভিন্ন ছবি, ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসছে। ফুটবল উন্মাদনায় মেতে উঠেছে সাধারণ মানুষ। তার মধ্যেই একটি ‘বিশেষ’ ছবি সবার মুঠো ফোনে কমবেশি ঘোরাফেরা করছে। দৃশ্যটি ১ ডিসেম্বরের। কাতারের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে চলছে ক্রোয়েশিয়া বনাম বেলজিয়ামের ম্যাচ। দিনের শেষে সেই ম্যাচটি ড্র হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামে একজনের উপস্থিতি রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয়। সৌজন্যে ক্রোয়েশিয়ারই এক মহিলা সমর্থক। জাতীয় পতাকার রঙের বিকিনি আর প্যান্ট পরে সুসজ্জিতা। সেই পোশাকেই গ্যালারিতে তাঁর সহাস্য উপস্থিতি। তাঁর সেই রূপই নিজেদের মোবাইলে বন্দি করে রাখছেন কাতারের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁরাও খেলা দেখতেই এসেছিলেন। কিন্তু এই মহিলার উপস্থিতি যেন তাঁদের কাছে ‘বাড়তি পাওনা’…

কে তিনি? তাঁর পরিচয়ই বা কী? ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে স্টেডিয়ামে থাকা সেই তরুণীর ছবি চাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায়। ইন্টারনেটে খোঁজ শুরু করেন নেটিজেনরা। ক্রোয়েশিয়ার এই সুন্দরী সমর্থকের নাম ইভানা নল। সেই স্বল্পপোশাক পরা ছবি তিনি নিজেও শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্রোয়েশিয়ার প্রতিটি ম্যাচেই তিনি স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবারই তাঁর সাজসজ্জা আর পোশাক শিরোনামে এসেছে। শেষ ১৬-র লড়াইয়ে জাপানের বিরুদ্ধে জেতার জন্য তিনি ফের দলকে ‘উদ্বুদ্ধ’ করবেন, এমন আশা করে বসে রয়েছেন ফুটবল ভক্তরা।

Ivana Knoll

ক্রোয়েশিয়া-বেলজিয়াম ম্যাচের এই ছবিই ভাইরাল

৩০ বছর বয়সী ইভানা নল ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে জন্ম তাঁর। ক্রোয়েশিয়ার মডেলিংয়ের জগতে বেশ পরিচিত নাম ইভানা। লুকা মদরিচ, পেরিসিচের দেশের এই তরুণী এক সময় ক্রোয়েশিয়ার সেরা সুন্দরীর খেতাবও জিতেছিলেন। এখন মডেলিংয়ের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার ময়দানেও নিজের ‘জাদু’ ছড়াচ্ছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে এক মিলিয়নের থেকেও বেশি ফলোয়ার তাঁর। এর পাশাপাশি নিজের একটি সংস্থাও খুলেছেন তিনি, নাম ‘নলডল’। মূলত পুরুষ ও মহিলাদের বিকিনি, স্যুইম স্যুট পোশাক তৈরি করা হয় সেখানে। সেই পোশাকেো ছোঁয়া থাকে ক্রোয়েশিয়ার লাল-সাদা চেকবোর্ড স্টাইলের।

আরও পড়ুন : পুরুষদের বিশ্বকাপে ম্যাচ সামলাবেন এই মহিলা, যে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব

সেই ইভানা নলই এই বিশ্বকাপের ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় অন্যতম একটি নাম। এর আগেও ২০১৪-র ব্রাজিল ও ২০১৮-র রাশিয়া বিশ্বকাপের সময় দলকে সমর্থন জানাতে চলে গিয়েছিলেন স্টেডিয়ামে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। ক্রোয়েশিয়া বনাম মরক্কো ম্যাচের সময় তাঁকে প্রথম দেখা যায়। তারপর তিনিই যেন অন্যতম ‘আকর্ষণ’ হয়ে ওঠেন। বেলজিয়াম ম্যাচের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর এখন সমস্ত ক্যামেরা তাঁর দিকেই তাক করা।

তবে কেবল স্টেডিয়াম নয়, বাইরেও তিনি লাইমলাইটে। দোহার রাস্তাঘাটে, সমুদ্র সৈকতেও তাঁর আনাগোনা। ক্যামেরাও সেই দিকেই ঘোরানো। প্রতিটি জায়গায় স্বল্পবসনা পরিহিতা। কাতারের বিচে বিকিনি পরিহিত ছবিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল। প্রতিটি পোশাকের রঙই বুঝিয়ে দেয়, তিনি কত বড়ো ক্রোয়েশিয়ার ভক্ত। অনেকেই বলছেন, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে এই প্রাক্তন মিস ক্রোয়েশিয়াই তাঁর দেশের ‘সেক্সিয়েস্ট অ্যান্ড হটেস্ট ফুটবল ফ্যান’। সেটা যে এক বর্ণও মিথ্যে নয়, প্রতিটা ছবি, সমস্ত ক্যামেরাই তার প্রমাণ।

আরও পড়ুন : উটে উঠলেই বিপদ! বিশ্বকাপে হু হু করে যে রোগ ছড়াচ্ছে কাতারে

ফুটবল বিশ্বকাপ যারা দেখেন, তাঁরা জানেন স্টেডিয়ামে এই দৃশ্য খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। এর আগে যতগুলো বিশ্বকাপ হয়েছে, সুন্দরী, স্বল্পবসনা রমণীদের দেখা যেত স্টেডিয়ামে। ক্যামেরাও ম্যাচের মাঝে তাঁদের ঠিক খুঁজে নিত। বেশ কয়েক বছর ধরে এই ছবিটাও বিশ্বকাপের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। সমস্তভাবে একটা গ্র্যান্ড ফেস্টিভালের গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন। তাহলে এই বিশ্বকাপে কেন কেবল ইভানা নল-কে নিয়েই কথা হচ্ছে? কেন বারবার শিরোনামে উঠে আসছে এই খবর?

কারণ ইতিমধ্যেই ইভানার পোশাক নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের উদ্যোক্তা দেশ কাতার আগেভাগেই এই ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। স্বল্প পোশাক পরে স্টেডিয়ামে আসা, সেই পোশাকে সমুদ্র সৈকতে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো – এসব সেই দেশে ‘অপরাধ’। প্রতিটা স্টেডিয়ামেই রয়েছে পোশাক নিয়ে নানা বিধি নিষেধ। কাঁধ, বুক ঢাকা পোশাক যেন হাঁটুর ওপরে না ওঠে – এমন বার্তাই বারবার দেওয়া হয়েছে। না মানলে শাস্তি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সেখানেই ইভানা নলের এমন খোলামেলা পোশাক পরার ঘটনা বিস্মিত করেছে অনেক মানুষকে।

কেবল বেলজিয়াম ম্যাচেই নয়, শুরুর দিন থেকে এমন পোশাক পরার জন্য লাইমলাইটে তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি পোস্ট করার পর অনেকে বিষোদগারও করেছেন। সেই নেটিজেনদের বক্তব্য, ‘অন্যের দেশের সংস্কৃতিকে সম্মান করুন। এমন পোশাকে ঘুরবেন না।’ খোলামেলা পোশাক পরার জন্য ইভানাকে গ্রেফতার করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনার কথাও বারবার বলা হচ্ছে। কাতার প্রশাসনও এই বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না, এমনটাই জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : কোন চালে মাত জার্মানি থেকে আর্জেন্টিনা? আশার আলো দেখাচ্ছে এশীয় ফুটবল

কিন্তু যাকে নিয়ে এত বিতর্ক, ক্রোয়েশিয়ার সেই ‘সেক্সিয়েস্ট চিয়ারলিডার’ ইভানার বক্তব্য কী? ৩০ বছর বয়সী এই তরুণী অবশ্য বিতর্ককে পাত্তা দিতে নারাজ। তিনি রয়েছেন নিজের দুনিয়ায়। তাঁর বক্তব্য, তিনি যেখানেই গিয়েছেন, কোনও অসুবিধা হয়নি। স্থানীয় মানুষরাও কিছু বলেনি তাঁকে। সেখানে তো কোনও সমস্যা নেই। তাহলে এতো বিতর্ক কীসের? পিএ নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে নানা দেশ থেকে সমর্থকরা আয়োজক দেশে আসেন। তাঁদের বিভিন্ন সংস্কৃতি, বিভিন্ন পোশাক, রীতিনীতিও আলাদা। সমস্ত কিছুকে সম্মান জানিয়ে সাদরে আপ্যায়ন করাটাই তো আয়োজক দেশের কাজ। তাহলে এখানে সমস্যা কোথায়…

এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ইভানা জানিয়েছেন, কাতারে আসার আগে এখানকার নিয়ম, নির্দেশ, ‘ড্রেস কোড’ দেখে তিনি চমকে গিয়েছিলেন। রেগেও গিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ক্রোয়েশিয়া সহ ইউরোপের অনেক জায়গায় হিজাব, নিকাবকে সম্মান দেওয়া হয়। যারা হিজাব পরে, সেটা তাঁদের স্বাধীনতা। তাকে অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত। তাহলে যখন বিকিনি পরা হচ্ছে সেটাকেও সম্মান জানানো উচিত। ফতোয়া জারি করা উচিত নয়। ইভানার বক্তব্য, এখানে আসার পর সেরকম সমস্যা হয়নি। যদি গ্রেফতার করা হয়? সেখানেও ইভানা নলের সপাট উত্তর, ‘আমি তাতে ভয় পাই না’।      

More Articles