হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি কখনও, কোন রহস্য লুকিয়ে ১১৫ বছর বয়সি মোরেরার জীবনে

World oldest woman Maria Branyas : বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ এখন বানিয়াস মোরেরা, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠল তাঁর নাম

রূপকথার কোনও গল্প নয়, বাস্তবের মাটিতেই রয়েছে দীর্ঘায়ুর রহস্য। সম্প্রতি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বছর বয়সী হিসেবে নাম তুলেছেন স্পেনের ব্রানিয়াস মোরেরা নামের এক মহিলা। বর্তমান বয়স ১১৫ বছর। এর আগে এই স্থানটি দখলে ছিল ফ্রান্সের ১১৮ বছর বয়সী লুসিল র্যান্ডনের। তবে মৃত্যুর পর নতুন করে চালানো হয় সমীক্ষা, আর তাতেই প্রকাশ্যে আসে স্পেনের এই মহিলার নাম এই বয়সেও যিনি সুস্থ এবং সবলভাবে বেঁচে আছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক জীবিত মহিলা তো বটেই পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি বয়সের মানুষ হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন মোরেরা। সম্প্রতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস (GWR) তাঁর সম্পর্কে ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট শেয়ার করেছে। আর তার পর থেকেই চর্চায় এসেছেন মোরেরা।

হার্ট, ফুসফুস, যকৃৎ, কিডনি থেকে আর্থরাইটিস, স্পন্ডেলাইটিস অথবা ত্বক, দাঁত, চোখ হাজার একটা সমস্যায় জর্জরিত বর্তমান সময়। কম বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা এখন বেড়েই চলেছে। ৫০ এর গণ্ডি পার করেই মৃত্যুর সঙ্গে সমঝোতা চলছে যে সময়ে সেই সময়েই কিনা ১১৫ বছর বয়সেও সুস্থ সবলভাবে বেঁচে রয়েছেন মোরেরা। অবাক করা হলেও বিষয়টা সত্যিই। কী এমন রহস্য লুকিয়ে এই জীবনচর্চায়?
 
আরও পড়ুন - কার্ড নাকি ইয়োগার্ট, কোনটা সঠিক শব্দ? জানেন কি দইয়ের ইংরেজি প্রতিশব্দ নিয়েও রয়েছে রহস্য
 
১১৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯০৭ সালে জন্ম হয় মোরেরার। তারিখটা ছিল ৪ মার্চ। জন্মস্থান ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে হলেও জন্মের কিছুদিন পরেই তিনি ফিরে আসেন স্পেনে। স্পেনের কাতালোনিয়াতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। আর তখন থেকেই এই স্থানটিকে 'হোম' বলে জানেন মোরেরা। রেকর্ড সাইটে বলা হয়েছে যে তিনি বিগত ২২ বছর ধরে নার্সিংহোম - রেসিডেনসিয়া সান্তা মারিয়া দেল তুরাতে বসবাস করছেন মোরেরা।
 
দুই বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধ, স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী এবং হাল আমলের করোনা মহামারী সবই প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। এমনকী জানা গিয়েছে ২০২০ সালে তাঁর ১১৩ তম জন্মদিন উদযাপনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই করোনার প্রকোপে সরাসরি আক্রান্ত হন মোরেরা। অবশ্য সেই লড়াইয়েও জয় সুনিশ্চিত করেছিলেন তিনি। কম দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। শুধু তাই নয়, এর জেরেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি তাঁকে।
 
আরও পড়ুন - খেলা, মোক্ষলাভ নাকি কর্মফল? সাপ লুডোর যে ইতিহাস চমকে দেবে
 
জানা গিয়েছে, ১৯৩১ সালে ২৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। তিন সিন্টার এবং বংশ পরম্পরা মেনে ১১ জন নাতি-নাতনি এবং ১৩ জন পরনাতি-পরনাতনি রয়েছে মোরেরার। মোরেরার মতে “শৃংখলা, শান্তি, পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে ভাল সংযোগ, প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ, মানসিক স্থিতিশীলতা, কোন উদ্বেগ , অনুশোচনা না থকা , প্রচুর পজিটিভিটি এবং বিষাক্ত মানুষ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এইসব তার দীর্ঘায়ুর জন্য দায়ী।” তিনি আরও বলেছেন “আমি মনে করি দীর্ঘায়ুও সৌভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্য এবং ভালো জেনেটিক্স।”
 
এই বয়সেও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ। নিজের কাজ নিজেই করতে পারেন। শুধু তাই নয় এই বয়সেও সক্রিয়ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ থাকেন মোরেরা। তাই যান্ত্রিক সময় অথবা অবক্ষয়ের বিপরীতে ধরিয়ে এঁর মতো মানুষেরা উদাহরণ। কীভাবে শরীরকে সুস্থ রাখা যায়, কীভাবে প্রকৃতই জীবনকে বাঁচা যায় তা শেখাতে পারেন মোরেরাই। বয়সের ভারই যাঁকে গোটা বিশ্বের অভিবাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। 

More Articles