বন্ধ হতে চলেছে অ্যামাজন? সংস্থার বিজ্ঞপ্তিতে চিন্তায় লাখ লাখ ভারতীয়

Amazon Shutting down: তথ্যপ্রযুক্তি ও ই-কমার্সের অন্যতম প্রথম সারির সংস্থা অ্যামাজন। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে কারণ কী?

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে নেট দুনিয়ায় ট্রেন্ডিং ইলন মাস্ক। টুইটারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর সিদ্ধান্তের জেরে লাইমলাইটে আমেরিকার এই টেক জায়ান্ট। অফিসিয়াল নীল টিকের পদ্ধতি পরিবর্তনের পর কর্মী ছাঁটাইয়ের জেরে আপাতত রোষানলে তিনি। তারপরই ঘটে বিপদ। টুইটার বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই করার পর একই অবস্থা ঘনিয়ে আসে অন্যান্য বড়ো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে। মেটা, এইচপি, মাইক্রোসফটের মতো সংস্থাগুলিও বিপুল কর্মী ছাঁটাই করেছে বা করার পথে হাঁটছে। সেই তালিকায় নাম উঠে এসেছে অ্যামাজনের। বিশ্বের অন্যতম প্রধান ই-কমার্স সাইট ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা তাদের ১০,০০০ কর্মীকে ছেঁটে ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কাই বারবার শোনা যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি আরও হয়তো খারাপের দিকে যেতে পারে।

আরও পড়ুন : পান থেকে চুন খসলে ইলেকট্রিক শক! বিদেশে চাকরির নামে যেভাবে নয়া দাসত্বের শিকার ভারতীয়রা

সেরকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেল অ্যামাজনের দু’টি সিদ্ধান্তে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, ভারত থেকে আপাতত দু’টি ব্যবসা বন্ধ করার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই দু’টি হল, অ্যামাজনের ফুড ডেলিভারি ব্যবসা এবং অ্যামাজনের স্কুল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। এই খবরেই আপাতত নাভিশ্বাস উঠেছে সংস্থার কর্মীদের। নাভিশ্বাস উঠেছে আম জনতারও। ভবিষ্যতের ছবিটা তাহলে কেমন হতে চলেছে?

সাধারণ মানুষের কাছে অ্যামাজনের পরিচয় ই-কমার্স সংস্থা হিসেবে। ফোন হোক বা ঘড়ি, জামা হোক বা ল্যাপটপ অ্যামাজনে অর্ডার দিলেই চলে আসবে বাড়িতে। বাস্তবে এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নেই অ্যামাজন। এর সবচেয়ে বড়ো ও প্রধানতম অংশটি হল ওয়েব সার্ভিস; যার পোশাকি নাম অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস বা এডব্লিউএস(AWS)। ক্লাউড টেকনোলোজি, ডেটাবেস থেকে মেশিন লার্নিং সবকিছুতে নিজেদের পরিষেবা প্রদান করে এই সংস্থাটি। সেটাই তাদের মূল ব্যবসার জায়গা। পরবর্তীকালে আরও বিভিন্ন দিকে এগোয় অ্যামাজন। যার মধ্যে অন্যতম অংশ হল ফুড ডেলিভারি এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম।

উল্লেখ্য, এই দু’টি ব্যবসাই অ্যামাজন শুরু করেছিল করোনার সময়। আণুবীক্ষণিক এক ভাইরাসের মারণ কামড়ে গোটা পৃথিবী একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ভারতও সেই সমস্যায় জেরবার। দিনের পর দিন টিভির পর্দায় উঠে আসছে মৃতদের পরিবারের কান্না, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার হিসেব। মানুষের জীবনে কালান্তক হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটা শব্দ- ‘লকডাউন’। দোকানপাট, কারখানা, স্কুল-কলেজ সমস্ত কিছুর গেটে টালা পড়ে যায়। ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষজন। সেই সময় এই দু’টি উদ্যোগ সামনে নিয়ে আসে অ্যামাজন। লক্ষ্য করে দেখবেন, লকডাউনের পর ছোটো থেকে বড়ো অনেক নতুন খাবারের দোকান আপনার চোখে পড়েছে। যেহেতু মানুষ বাড়িতেই রয়েছে, তাই খাবার বাড়িতে আনার ফ্রিকোয়েন্সিও বাড়ে।

আরও পড়ুন : মানুষের মস্তিষ্ক খেয়েই বাঁচছে AI! পারমাণবিক বোমার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে রোবটরা?

সেখান থেকেই ২০২০ সালের মে মাসে অ্যামাজনের এই ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের যাত্রা শুরু। ‘অ্যামাজন ফুড’ নামের এই সংস্থা যাত্রা শুরু করেছিল ব্যাঙ্গালোর থেকে। এলাকার রেস্তোরাঁগুলির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এই কাজ করছিল তারা। কিন্তু দু’বছর পেরোতে না পেরোতেই সেই দরজায় তালা ঝুলল। সম্প্রতি অ্যামাজন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এই ব্যবসা তাদের জন্য খুব একটা লাভজনক হচ্ছে না। তাই তারা ভারতে এই ব্যবসা বন্ধ করতে চলেছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পাকাপাকিভাবে অ্যামাজন ফুডের দরজায় তালা পড়বে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ততদিন অবধি অ্যামাজনের এই পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবে রেস্তোরাঁগুলি। ব্যবহারকারীরাও নিজেদের অর্ডার দিতে পারবেন। বছর শেষের দু’দিন আগেই সেই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।

এই ঘোষণার একদিন আগে, ২৫ নভেম্বর অ্যামাজন অন্য একটি জয়েন্ট বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে। লকডাউনের সময় স্কুল কলেজ সমস্ত কিছুই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে পড়ে পড়াশোনা। ব্ল্যাকবোর্ডের জায়গায় সেখানে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। সেই সুযোগে বাজার ধরার জন্য প্রায় প্রতিটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই ময়দানে নেমে পড়ে। অ্যামাজনও সেই উদ্দেশ্যেই শুরু করেছিল অ্যামাজন অ্যাকাডেমি। ২০২১ সালে ভারতে এই ব্যবসা শুরু হয়। হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি করিয়ে যাত্রা শুরু করে অ্যামাজনের এই ই-লার্নিং অ্যাপ। অন্যান্য ই-লার্নিং জায়েন্টদের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে লড়াই করছিল এটি। কিন্তু শেষরক্ষা বোধহয় হল না। বিজ্ঞপ্তি জারি করে অ্যামাজন জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই এই ব্যবসাও তারা গুটিয়ে নিতে চলেছে। তবে বর্তমান ব্যবহারকারীরা নিজেদের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত।

আরও পড়ুন : ট্যাটু বলে দেবে আপনার রক্তচাপ! অভাবনীয় আবিষ্কার এবার হাতের মুঠোয়

হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অ্যামাজন? অন্যান্য বড়ো তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি এতো বিপুল হারে কর্মী ছাঁটাইয়ের দিকেই বা হাঁটছে কেন? অ্যামাজন ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছে কয়েক মাসের জন্য কর্মী নিয়োগ বন্ধ করা হচ্ছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। অ্যামাজনেরই এক তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ারের কথা অনুযায়ী, মূল আঘাত এসেছে ওয়েব সার্ভিস পরিষেবায়। এডব্লিউএসে সাময়িক ধাক্কা আসায় অন্যান্য ব্যবসাগুলোতেও স্বাভাবিকভাবেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে এই মুহূর্তে আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। গ্রাহকদের হাতে যে টাকা নেই, তার প্রভাব ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক ব্যবসাতেও। বড়দিন, নববর্ষের মরসুমে অন্যান্য সময় প্রতিটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মুনাফার মুখ দেখে। কিন্তু এবছর পরিস্থিতি একেবারেই উল্টো। অ্যামাজনের শেয়ারের মূল্য এখনও পর্যন্ত ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থায় কোষাগার বাঁচাতে প্রজাদের ওপরই কোপ পড়েছে বরাবরের মতো।

More Articles