ধর্ম বা রাজনীতি দিয়ে কোনও বাংলাদেশির সঙ্গে বৈষম্য হবে না! ইউনূসের আপ্তবাক্য ফলবে?
Muhammad Yunus: ইউনূস বলেছিলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে 'বাড়িয়ে কথা বলা হয়েছে'।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন মহম্মদ ইউনূস। দীর্ঘসময় ধরে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন দেখেছে বাংলাদেশ। কোটা সংস্কারের আন্দোলন ক্রমেই সরকার বিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়। হাসিনা বিরোধী এই বিক্ষোভে বিএনপি এবং জামাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ছাত্রদের আন্দোলন ক্রমেই হাত থেকে বেরিয়ে যায়। মৌলবাদের চাগাড় দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে বাংলাদেশজুড়ে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগপন্থীদের জীবন সংশয়ের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মহম্মদ ইউনূস বলেছেন, ধর্ম বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনও বাংলাদেশির প্রতি কোনওরকমের বৈষম্য করা হবে না।
ইউনূস এই বক্তব্যটি রেখেছেন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উৎসব জন্মাষ্টমীর আগে। বাংলাদেশে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে জাতীয় ছুটির দেওয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে জাতির উদ্দেশে এক টেলিভিশন ভাষণে ইউনূস বলেন, “ভিন্ন ধর্ম অনুসরণ করার কারণে বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতামতের জন্য আমরা কারও সঙ্গে বৈষম্য করব না। আমরা দেশের সকল সদস্যকে একটিই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।"
আরও পড়ুন- বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা, নেপথ্যে যে কারণ
হাসিনা সরকারের পতনকে বাংলাদেশের একাংশ 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ' হিসেবে দেখছে। শুধু তো সরকারের পতন হয়নি। শেখ হাসিনা নিজে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এই আন্দোলন নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করেছেন অনেকেই। মহম্মদ ইউনূসও বলছেন, এই 'নতুন বাংলাদেশে' ধর্মীয় সংখ্যালঘু, উপজাতি এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সকলেই সমান নাগরিক এবং সকলের এখানে সমান অধিকার থাকবে। বাস্তবে কি তেমনটা বাংলাদেশে ঘটবে? কারণ এই আন্দোলনের মাঝে বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে এমন খবর আসতে থাকে যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় চাইতে পারেন কিনা এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে মোদি সরকারের মন্ত্রিসভায়।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন ৫ অগাস্ট। সামরিক বাহিনীর বিমানে তিনি ভারতে অবতরণ করেন। হাসিনার দেশত্যাগের পর গত ৮ অগাস্ট ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস।
গত জুলাই মাসে গোড়াতে শুরু হয়েছিল ছাত্রদের আন্দোলন। সরকারি চাকরির মুক্তিযোদ্ধাদের বিতর্কিত কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। কোটা পদ্ধতিতে সংস্কারও আনে বাংলাদেশের আদালত। তবে এই রায়ের আগেই ছাত্রদের আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করে হাসিনা সরকার। শ'য়ে শ'য়ে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। তাই কোটা আন্দোলনকারীদের স্পক্ষে রায় দিলেও হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয় এই কোটাবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের জেরে আওয়ামী লীগ নেত্রী তথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এই আন্দোলনের মধ্যেই বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসার খবর পাওয়া গেছে। ইউনূস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৯ অগাস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউনূসকে 'হিন্দু এবং অন্যান্য সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা' নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও জানিয়েছিল যে, দিল্লি বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
আরও পড়ুন- আনসার-পড়ুয়া সংঘর্ষে ফের অশান্ত বাংলাদেশ! আনসার বাহিনী কারা? কী-ই বা দাবি তাদের?
মোদি ভারতের স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় বলেছিলেন, ভারতীয়রা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন, বাংলাদেশের হিন্দু এবং সমস্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইউনূস আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে 'বাড়িয়ে কথা বলা হয়েছে'। ইউনূস ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সংখ্যালঘু সুরক্ষার ইস্যুতে রিপোর্ট করার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারের মেয়াদ কতদিনের? বাংলাদেশে কবে নতুন নির্বাচন হবে? ইউনূস বলছেন, যতদিন বাংলাদেশিরা ছাত্র বিক্ষোভকারীদের দুর্নীতিমুক্ত শাসনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় ততক্ষণ অন্তর্বর্তী সরকারই দায়িত্বে থাকবে। ইউনূস বলেন, “আমাদের সরকার কবে যাবে তা জানতে আগ্রহী সবাই। প্রশ্নের উত্তর আপনারই হাতে। আপনারা কখন আমাদের বিদায় জানাতে চান তা আপনাদের ব্যাপার। কখন আমাদের ছেড়ে দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত জনগণকেই নিতে হবে।" ইউনূস বলছে, দেশকে নতুন রূপে দেখতে হলে জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। তাছাড়া, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনুরোধেই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সুতরাং পড়ুয়ারাই "আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা,” মন্তব্য করেছেন ইউনূস।