গোপাল পাঁঠা : হিন্দুত্বের তাস না কি কলকাতা কাঁপানো মস্তান?
Mastan Gopal Pantha : ১৯৪৬ সালের কুখ্যাত দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সবচেয়ে বেশি। মুসলিম নিধনকারী হিসেবে তাঁর একটা ছবি তুলে ধরা হয়।
দীপাবলির উৎসব শেষ। 'মা' জলে ভাসতেই বাতাসে হিম। চুন-সুরকির প্রাচীন ঘন লাল দেওয়াল বেয়ে ঠান্ডা নামছে। মলঙ্গা লেনের গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি। আর মাঝ বরাবর এঁকেবেঁকে চলা সাপের মতো রাস্তা জুড়ে হালকা কুয়াশা। ভোরভোর উঠে বউবাজারের দিকে পা বাড়ালেন গোপাল পাঁঠা। দোকানে যাওয়ার আগে জবার মালা কিনতে হবে।
আর-সবার কাছে 'মা' বছরে একবার। গোপালের কাছে 'মা' সারা বছরের। 'মা' গৃহ দেবতার আসনে। 'মা' পাঁঠার মাংসের দোকানে। 'মা' দীপাবলির উৎসবের বারোয়ারি অঙ্গনে। গোপালের 'মা' সর্বত্র।
ভানু বোসের জলসায় দেখা উত্তমকুমার এখন গলিতে তাসের আসরে, চায়ের আড্ডায়, অন্দরমহলের গল্পগাছা হয়ে উড়ছেন। সে গল্প এখন অনেক দিন ধরে চলবে। ফাটাকেষ্টর জলসা তো গোটা শহর কাঁপায়। এবারও বিনোদ খান্নাকে দেখে মূর্ছা গিয়েছিল মহিলামহল। কী জৌলুস! সে কী রোশনাই! গোপাল পাঁঠার বারোয়ারির জলসা নেই। রাস্তা আটকে ভিড় সামলানোর আয়োজন নেই। আছে অন্য কিছু। যার টানে দূর-দূরান্তের মানুষ আসেন। এবারও এসেছেন।
এখন উৎসব শেষ। বাজার থেকে জবার মালা কিনে দোকানের সামনে দাঁড়ালেন গোপাল পাঁঠা। টিনের হোর্ডিংয়ে জ্বলজ্বল করছে ভূতপূর্ব রাজবন্দি অনুকূল মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত পাঁঠার মাংসের দোকান। অনুকূল পরে আছেন সাদা ফতুয়া আর ধুতি। মাথার লম্বা চুল পাঞ্জাবিদের মতো করে বাঁধা। মায়ের মূর্তিতে প্রণাম জানালেন গোপাল পাঁঠা। পাঁঠার মাংসের দোকানে শো-কেসে মা কালীর মূর্তি। মায়ের গলায় জবার মালা চড়িয়ে ক্যাশ-বাক্স খুলে বসলেন। কিশোর বয়সে দাড়ি, লম্বা চুল ছিল না গোপাল পাঁঠার। ছেচল্লিশের দাঙ্গার সময় থেকে শিখেদের মতো চেহারা ধারণ করেন গোপাল। কেন এমন বেশ ধরা? আত্মগোপন পর্যায়ে চুল-দাড়ি না কাটার ফল? নাকি শিখেদের মতো দেখতে হওয়ার সচেতন একটা প্রয়াস?
আরও পড়ুন- ধোঁয়াটে ক্রিক রো-র ঝলমলে জলসা! কলকাতা কাঁপাত মস্তান ভানু বোসের কালীপুজো
কলকাতা শহরের শিখদের ভয় পেত মীনা পেশোয়ারি, বোম্বাইয়ার মতো দুর্বৃত্তরা। চুলদাড়ি রেখে মুখার্জি বাড়ির গোপাল হয়ে উঠলেন মিথ। গোপাল পাঁঠা অফ মলঙ্গা লেন। পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ড। সবাই এ নামেই তো চেনে তাঁকে। গুরুর গুরু তিনি। পুলিসের হিস্ট্রি-শিটে তাঁর সম্পর্কে লেখা থাকে কলকাতা শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের তিনি লিডার 'অফ দ্য লিডার্স'। কলকাতার তলপেট জুড়ে তাঁর অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ। বেতাজ বাদশা। আপাতত বউবাজারের পাঁঠার মাংসের দোকান সামলাচ্ছেন। তার আগে দোকানে প্রতিষ্ঠিত দেবীমন্দিরে মালা দিলেন গোপাল।
এ তো নিছক টাঙানো ছবি নয়। রীতিমতো প্রতিষ্ঠিত আসন। ১৯৩৫ সালে বউবাজারের এই দোকানে রীতি মেনে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাঁচ তীর্থের মাটি এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মায়ের বেদী। প্রতি অমাবস্যায় মায়ের বেদীর সামনে রাখা যূপকাষ্ঠে বলি হয়। নিয়ম মেনে চলে নিশিযাপন। গোপাল পাঁঠার দোকানের ঝটকা পাঁঠার মাংসের কদর করে গেরস্থ। হাজির দোকানের আড়াই প্যাঁচে কাটা খাসির মাংস না, এ হলো বাঙালি হিন্দু পরিবারের অতি পরিচিত পাঁঠাবলির মাংস। গোপালের ভবানীপুরের দোকানেও কালী মন্দির। নিয়ম করে অমাবস্যায় বলি। পূজা, নিশিযাপন, একইভাবে হয়ে চলেছে। তাই উৎসব উদযাপন পার হয়ে শক্তির উপাসনা আরাধনা চলছেই গোপালের ডেরায়।
ভানু বোস, ফাটাকেষ্টরা বাজার মাত করা আয়োজন করে নজর কাড়ছেন। তখন ঠিক তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভানু কেষ্টদের গুরু গোপাল চন্দ্র। সে পূজায় স্বয়ং 'মা' এসে ভোগ খেয়ে যান। একে তো গোপাল পাঁঠা নিজেই একটা রহস্যময় নাম। তার উপর গোপালের কালীপূজা ঘিরেও পরতে পরতে রহস্য। গোপালের বারোয়ারি কালীপূজার বিশেষ আকর্ষণ অস্ত্র-পূজা, অন্নকূট, আর তরবারি মিছিল নিয়ে ভাসান। তাই দেখতে ওয়েলিংটনের মলঙ্গা লেন থেকে ভিড় দাঁড়াত বিডন স্ট্রিট পর্যন্ত। শত শত তলোয়ার উঁচিয়ে যুবকরা প্রদর্শন করছে। হ্যাজাকের আলোয় ঝলসে উঠছে তরবারি। আরেক দল যুবক দেখাচ্ছে লাঠিখেলা। বনবন করে ঘুরছে লাঠি। সাঁই সাঁই শব্দ উঠছে হাওয়ায়। এ পূজা বারোয়ারি হয়েও একটু আলাদা। যেমন আলাদা গোপালের পাঁঠার 'ঝটকা' মাংসের দোকান। মাংসের দোকানে কালী মন্দির।
কালীপূজা গেলেও কালীপূজার গল্প থামে না। গোপাল পাঁঠার কালীপূজা শুরু হয় ১৯৩৭-এ। সেই বছরই মারা যান গোপালের কাকা ভূতপূর্ব রাজবন্দি অনুকূলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। এই অনুকূলচন্দ্র ছিলেন বাংলার বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীর অস্ত্র সরবরাহকারী। রডা কোম্পানি লুঠের অন্যতম কারিগর। বিপ্লবী বিপিনবিহারী গাঙ্গুলির সহযোগী। বুড়িবালামের তীরে মাউজার পিস্তল নিয়ে ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন বাঘাযতীন। সেই মাউজার পিস্তল লুঠের অন্যতম কারিগর এই অনুকূলচন্দ্র।
রাতের অন্ধকারে সেই পিস্তল পৌঁছে যায় বাঘা যতীন-সহ বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীর কাছে। তাঁরই উদ্যোগে। কাকার সৌজন্যে গোপালদের ৩৯ নম্বর মলঙ্গা লেনের বাড়িতে এসেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, মানবেন্দ্রনাথ রায়। এহেন অনুকূল চন্দ্র মারা গেলে তাঁর স্মৃতিতে 'অনুকূল স্মৃতি সংঘ' গড়ে তুললেন মলঙ্গার অধিবাসীরা। গোপালের নেতৃত্বে। ওই বছর থেকেই শুরু হয় কালী পূজা। অস্ত্রকেই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম অবলম্বন বলে বিশ্বাস করতেন অনুকূল। তাই তাঁর স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত কালীপূজায় অন্যতম উপাদান হয়ে উঠল অস্ত্রপূজা। তলোয়ার, লাঠি, চাকু, রামদা। কী নেই! আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কি? থাকতেই পারে। থাকাটা কোনও অস্বাভাবিক নয়। যাই হোক এ তো গেল একদিক, অন্য দিক হলো অন্নকূট। পোলাও,পাঁচ প্রকার ভাজা, লাবড়া, পায়েস, চাটনি, দই। কী নেই সে অন্নকূটে! সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোলাওয়ের উঁচু করা অন্নকূটের পাহাড়। নির্মাণের কাজে পাড়ায় বালির স্তূপ যে রকম চেহারা নেয়। গোপালের পূজায় অন্নকূটের পাহাড়ও সেই রকম। বেলচা দিয়ে সেই পাহাড় কেটে পোলাও তুলে দেওয়া হতো পরিবেশনের বালতিতে। এই বিপুল আয়োজন আসতো চাঁদায় নয় বরং 'সাহায্যে'। সে সাহায্যের বহরও বিপুল। বিভিন্ন পরিবার থেকে কাঁসার বাসন, পূজার স্বেচ্ছাসেবক, আর আসতো অর্থসাহায্য, দান। কেউ দিল চাল, কেউ ঘি, কেউ আবার এক মণ দুধ। কেউ প্রণামীর অর্থ। সবই মায়ের নামে। সে এক বিপুল আয়োজন।
সেই অন্নকূটে আসতেন অসংখ্য মানুষ। প্রসাদ নিতে। কাকার মৃত্যুর পর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গোপাল শুরু করেছিলেন পূজা। তাঁর অন্নকূট জুড়েও ছিল স্বপ্নের যোগ। একবার অন্নকূটের ভোগ খাওয়ানো হয়ে গিয়েছে। সমস্ত কিছু তদারকি করে খেতে বসবেন গোপাল। হঠাৎ উপস্থিত এক কাঙালি। একটু ভোগ চায় সে। সারাদিন ধরে লোক খেল, তখন আসতে পারলে না মা? কোথাও একটু অন্নও নেই। মুখ ম্লান করে বললেন গোপাল। ফিরিয়ে দেবেন কাঙালিকে? মনে খটকা লাগল গোপালের। কাঙালিকে দাঁড়াতে বলে গোপাল ছুটলেন বাড়ির ভিতরে। স্ত্রী'র কাছ থেকে অন্ন ভোগ চেয়ে এনে বাইরে দেখলেন কাঙালি নেই। মনে একটা খচখচ ভাব নিয়ে সারাদিনের ক্লান্তিতে রাতে ঘুমিয়ে পড়লেন গোপাল। স্বপ্নে 'মা' স্বয়ং এলেন তাঁর কাছে। বললেন, পেসাদ খুব ভালো হয়েছে। তিনি গ্রহণ করেছেন। এই কথা জানতে পেরে সকলে ধন্য ধন্য করলেন গোপালের।
ভানু, কেষ্ট, জগাদের পূজায় উৎসব হয়। মোচ্ছব হয়। আর পূজার মতো পূজা হয় গোপাল পাঁঠার মণ্ডপে। স্বর্গ থেকে মা স্বয়ং আসেন। গভীর রাতে আরও একজন আসেন। তবে স্বর্গ নয়, মর্ত্য থেকে। বলা ভালো পাশের পাড়া থেকে। তিনি আর কেউ নন স্বয়ং বিধানচন্দ্র রায়। আরও আসতেন অনেকে। মাকে প্রণাম করে গুরু গোপাল পাঁঠাকে প্রণাম জানাতেন। চুপচাপ তাঁরা আসতেন। ওরা এ শহরের পাতালবাসী। শহরের পাতালপুরী শাসন করেন ওরা। গুরুর পূজার ঐশী টানে ওরা আসেন। লোকচক্ষুর আড়ালে। পুলিশের চোখ এড়িয়ে। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সব একাকার হয়ে যায় গোপালের মলঙ্গা বারোয়ারির আলো আঁধারিতে ।
তারপর আলো জ্বলে ওঠে। প্রতিমা নিরঞ্জনকে সামনে রেখে রোশনাই ছড়িয়ে পড়ে মলঙ্গায়। শহরের সেরা আকর্ষণ অস্ত্র শোভাযাত্রা শুরু হয়। লাঠি-খেলা, তরবারি প্রদর্শন। তার মাঝখানেই টমটম গাড়িতে একের পর এক আলোকসজ্জা। অস্ত্র খেলা দেখতে লোক জমে রাস্তার দু'ধারে। হ্যাজাকের আলোয় ঝলসে ওঠে তলোয়ার, রামদা, ভোজালি। অস্ত্র আকাশের দিকে তাক করে কসরত দেখায় পেশিবহুল যুবকেরা। কেমন ভয় ভয় করে মত্ত ওই সব যুবাদের দেখলে। শোভাযাত্রার মাঝখানে শাল জড়িয়ে এমন লোকজনও থাকেন যাঁদের কোমরে দু'ধারে গোঁজা থাকে আগ্নেয়াস্ত্র। যাঁরা লক্ষ্য রাখেন সব কিছুর উপর। আর ছিলেন গোপালচন্দ্র মুকুজ্জে। আদি অকৃত্রিম গোপাল পাঁঠা। মা কালী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দেন। রাজনীতির ভগবান তাঁর মাথায় রাখেন অভয় আশ্বাস। আর অন্ধকারের আড়ালে পাতাল থেকে উঠে এসে কারা যেন বলে যান দাদারে, তুই গুরুদেব। গোপালকে তাঁরা সমীহ করে চলে।
গোপাল পাঁঠার জীবন বহুমাত্রিক। সে জীবনের মাত্র কয়েকটি দিক নিয়েই তুমুল প্রচার। গুগল ইঞ্জিন সার্চ করলেই সব চেয়ে বেশি নজরে আসবে গোপালকে হিন্দু বীর হিসেবে তুলে ধরা নানা ভিডিয়োর তথ্য। অন্যদিকে পুলিশের খাতায় গোপাল 'অন্ধকার জগতের বেতাজ বাদশা'। ডনকুলের গুরু স্থানীয় ডন। ১৯৪৬ সালের কুখ্যাত দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সবচেয়ে বেশি। মুসলিম নিধনকারী হিসেবে তাঁর একটা ছবি তুলে ধরা হয়। এই বিষয়টিকে ঘিরে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গোপালকে তাদের পূর্বসুরি হিসেবে তুলে ধরেন। এ সব নিয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে গোপাল মুখার্জি পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের। গোপালের পৌত্র শান্তনু মুখার্জি তাঁর ঠাকুরদাকে ঘিরে নানা অতিরঞ্জিত কাহিনির বিরুদ্ধে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক শিবিরের ব্যবহারের ঘোরতর বিরুদ্ধে। কারণ তাঁরা সারাজীবন ধরে ঠাকুরদার মুখে বিধানচন্দ্র রায়, সুভাষচন্দ্র বসুর কথা শুনেছেন। অন্য রাজনৈতিক শিবিরের কথা (যারা দাবি করে গোপাল তাদের প্রজেক্ট) তাঁরা তা শোনেননি।
সত্যিই কি গোপাল হিন্দুত্ববাদী মুসলিম হত্যাকারী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে তাকাতে হবে সেই ফেলে আসা সময়ের দিকে। তবে একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দেওয়াই যায়, গোপাল পাঁঠা আরএসএস বা হিন্দু মহাসভার সভ্য বা পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না। সেই সময় এই সব সংগঠন খুব জোরালো ছিল সে দাবিও করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা ছেচল্লিশের দাঙ্গায় হিন্দু মহাসভা আদৌ অংশ নেয়নি। কারণ ভূমিকা নেওয়ার মতো সংগঠনের জোর তাদের ছিলই না। ১৯৩৯ সালে দেশবন্ধু পার্কে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি হিন্দু মহাসভায় যোগদান করছেন। ওই সভায় সাভারকারও উপস্থিত। কিন্তু সাত বছরেই সাভারকারের সঙ্গে নানা প্রশ্ন ঘিরে শ্যামাপ্রসাদের মতানৈক্য চরমে উঠছে। ছেচল্লিশ সালের দাঙ্গায় বাংলায় হিন্দু মহাসভার সংগঠন দুর্বল। ব্যক্তি
শ্যামাপ্রসাদের কিছু ভূমিকা আছে। বুদ্ধিজীবী, বিধায়ক, সুবক্তা হিসেবে। হিন্দু স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবেও তিনি নিজেকে তুলে ধরছেন। দাঙ্গায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন অংশ নিচ্ছে। ব্যায়ামাগারগুলিকে সরঞ্জাম কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু গোপালের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তাঁর ছিল না বলেই দাবি গোপালের পরিবারের। এক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে গোপাল পাঁঠার একটি ছবি ইদানীং অন্তর্জালে ঘুরছে। এই ছবিটির সত্যতা বা উক্ত ব্যক্তি আদৌ গোপাল পাঁঠা কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার।
এই কথাগুলো বলে নেওয়া এই জায়গা থেকে জরুরি যে, গোপাল এই শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যে দাবি ইদানীং করা হচ্ছে। বরং সেই সময়ের সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি বিচার করলে স্পষ্ট বোঝা যাবে গোপালচন্দ্র মুখার্জি ওরফে গোপাল পাঁঠা এক স্বপ্নভঙ্গ বিভ্রান্ত যুবক। যিনি প্রথম জীবনে সুভাষ বসুর বাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন স্থানীয় ডাকাবুকো যুবকদের একজোট করে। ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষে ত্রাণের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। সেই আন্দোলনে অস্ত্র হাতেই রাস্তায় নেমেছিলেন গোপাল পাঁঠাও। যে অস্ত্র পারিবারিক রাজনীতির ধারায় গোপাল পেয়েছিলেন দেশ স্বাধীন করার চরমপন্থী ব্রত অবলম্বন করে। সে অস্ত্রেই লেগে গেল দাঙ্গার রক্ত। সে অস্ত্রের সৌজন্যেই গোপাল মুকুজ্জে হয়ে উঠলেন কলকাতা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের গোপাল পাঁঠা।
আরও পড়ুন- কালীপুজোই ছিল কলকাতার মস্তানদের ক্ষমতা দেখানোর রঙিন মঞ্চ
ফিরে দেখা যাক সেই সময়ের সমাজ আর রাজনীতিকে। তখন ধীরে ধীরে বদলাছিল বাংলার রাজনীতির চরিত্র । ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে বাংলা ও আপামর বাঙালির এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর নির্বাপিত হয়। স্বরাজ্য পার্টির সার্বিক আবেদনের বদলে মাথাচাড়া দেয় মুসলিম পরিচয়বাদী রাজনীতি। সমাজে হিন্দু পরিচয়বাদও মাথা তোলে। এরপর সারা বাংলার অবিসংবাদী নেতা শের-এ-বঙ্গাল ফজলুল হকের নির্বাচনী বিপর্যয়। কৃষক প্রজা পার্টির বদলে ঢেউ ওঠে মুসলিম লিগের ব্যানারে। উঠে আসেন শোহরাবর্দি, খাজা নাজিমুদ্দিন বা আকরম খাঁ-এর মতো নেতারা। ফজলুল হকের মতো হিন্দু মুসলিম সকলকে নিয়ে চলার ধারণ ক্ষমতা সোহরাবর্দির ছিল না। কখনই ছিল না। একদিকে মুসলিম পরিচয়বাদী রাজনীতি প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিচ্ছিল। হিন্দু আধিপত্যবাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল শিক্ষিত মুসলিম সমাজ। অন্যদিকে মুসলিম ব্যবসায়ী আর মুসলিম শিল্পপতিদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য দখলের উচ্চাকাঙ্খা দেশভাগের সম্ভাব্য পরিণতির বাস্তবতা তৈরি করছিল। হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছিল সময়ের ধারা। বাংলার মুসলিম প্রধানমন্ত্রীর শাসনে হিন্দু আধিপত্যে হাত পড়ছিল। কলকাতা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর জল্পনা সেই আগুনে ঘি ঢালে। দাঙ্গার দিন অর্থাৎ 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে' সোহরাবর্দির চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলেই মনে করেন বেশিরভাগ ইতিহাস গবেষক। জ্যোতি বসু একবার বলেছিলেন, সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। সরকার পুলিশ সব 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে'র দিন ছিল নিষ্ক্রিয়।
সোহরাবর্দি বসে রইলেন লালবাজারে। সে দিনের ছাত্র লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পার্ক স্ট্রিটে সোহরাবর্দির বাড়িতে বারেবারে দেখা করতে গেলেন। দেখা পেলেন না। তার শহিদ সাহেব লালবাজারে। মুসলিম লিগের আশ্রয়ে থাকা মীনা পেশোয়ারি, বা বোম্বাইয়ার মতো দাঙ্গাবাজ ভাড়াটে গুন্ডারা দাপাতে লাগল শহর জুড়ে। হিন্দুরাও আক্রমণে নামলেন। মুসলমানদের মিছিলে হিন্দু বাড়ির ছাদ থেকে গরম জল ঢালার ঘটনা, ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা সকাল থেকেই চলছিল। অন্যদিকে মুসলিম লিগ সমর্থকদের হাতে হিন্দু গোয়ালা খুনের ঘটনা সকাল থেকে ঘটছিল। কুখ্যাত দাঙ্গার দিন। গোটা সমাজ যেন গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল। নির্দিষ্ট দিনে তা ফেটে পড়ল। মুচকি হাসল ব্রিটিশরাজ। দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতা আর ফিরিঙ্গি পাড়ায় বাজতে লাগল লং প্লেয়িং রেকর্ড।
এই প্রেক্ষাপটে তদানীন্তন মুসলিম আধিপত্য ও শাসকের আশ্রয়ে থাকা ভাড়াটে বাহিনীর বিরুদ্ধে নামলেন গোপালের মতো অসংখ্য যুবক। গোপাল ছাড়াও আরও প্রতিরোধ বাহিনী অনেকেই গড়ে তুলেছিলেন। যতটা না ধর্ম-সংস্কৃতি বাঁচানোর লড়াই, এই লড়াই তার চেয়ে বেশি ছিল কলকাতাকে পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত না করার মরিয়া তাগিদ। জোরালো প্রতিরোধ গড়ে তুললেন গোপালরা। বহু সাধারণ হিন্দু ও মুসলিমের প্রাণ গেল দাঙ্গায়। বউবাজারের পাশে একটা গলির নাম হয়ে গেল 'গলাকাটা গলি'। সৌজন্যে গোপাল গ্যাং। শহর জুড়ে লাশের স্তূপ। আকাশে শকুন। বহু নিচু শ্রেণির হিন্দু-গোয়ালা-মুটে, ওড়িয়া বস্তির মানুষজন প্রাণ হারালেন মুসলিম ঘাতকবাহিনীর হাতে। হিন্দু মুসলিম শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে যুব সমাজের হাতে হাতে ঘুরতে লাগল আগ্নেয়াস্ত্র। এই চিত্রনাট্যে গোপাল পাঁঠাও এক কুশীলব। সক্রিয় অংশগ্রহণকারী।
দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো ১৯৪৫ সালে। যুদ্ধ, দাঙ্গা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় কম্পমান একটা সমাজ। অস্ত্র হয়ে দাঁড়াল সহজলভ্য। মার্কিন সেনাদের কাছ থেকে দেড় দু'শো টাকায় মিলতে থাকল আগ্নেয়াস্ত্র। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্ত্রের সহজ যোগান বহু যুবককেই সে সময় বিপথগামী করে তুলেছিল। রংবাজ ছেলেপুলের সংখ্যা বাড়ছিল । এক সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জোটানো অস্ত্র নিয়ে শরীর মন গড়ার ব্যায়ামাগারগুলো থেকে পেশি ঝলসানো যুবকরা বের হলেন অস্ত্র হাতে। সমাজকে চমকাচ্ছেন ওরা। ইংরেজের বিরুদ্ধে নয়। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই অস্ত্র ধরলেন। হাত দাঙ্গার কলঙ্কে রাঙালো। গোপাল পাঁঠাও তাঁদের একজন। পরিস্থিতির শিকার।
গোপালের পরিবার তথ্য তুলে ধরে দাবি করে মুসলিম দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে লড়লেও গোপাল 'মুসলিম হেটার' কোনও কালেই ছিলেন না । মলঙ্গা লেনের মুখে একটা বহুতল দেখিয়ে গোপালবাবুর নাতি শান্তনু আর নাতনি নীতা মুখার্জি বলেন, "এই বাড়ি ভর্তি মুসলিম পরিবার থাকত। যে সব পরিবারকে দাঙ্গার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন আমাদের ঠাকুরদা, তিনি মুসলিমবিদ্বেষী হলে ওই পরিবারগুলো বাঁচত না। এই গোটা বাড়িটাও আমাদেরই হয়ে যেত।" যে দাঙ্গা তাঁর জীবনের কলঙ্ক, সেই অগ্নিগর্ভ সময়েও মলঙ্গা এবং তার আশপাশের বহু মুসলিম পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন। রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। এসব কথা রাজনীতির ন্যারেটিভ নির্মাণকারীরা সচরাচর বলেন না। গোপালরা থেকে যান আলো আঁধারিতে। তার মানে এই না যে গোপালদের হাতে মুসলিম হত্যা হয়নি। হয়েছে। কিন্তু গোপাল পাঁঠার বিরাট আর বহুমাত্রিক জীবনে এটি একটা পর্ব মাত্র। একমাত্র আখ্যান নয়। পরে যেহেতু তাঁর পরিচয়ের সঙ্গে অন্ধকার জগতের যোগ তৈরি হয়। বিতর্কিত এই চরিত্রটি নিয়ে কেউ সঠিক মূল্যায়নের প্রয়োজন বোধ করেননি।
দেশভাগের হাত ধরে এল স্বাধীনতা। বিধ্বস্ত অর্থনীতি। দিশাহীন যুবসমাজ। পেটে খিদে আর হাতে হাতে ঘুরছে আগ্নেয়াস্ত্র। দাঙ্গার সময় বহু হিন্দু ব্যবসায়ী, বনেদি পরিবার গোপালবাহিনীকে অর্থসাহায্য করতেন। দাঙ্গা দেশভাগ পর্ব চলে যেতে তাঁরাও অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিলেন। '৪২ সালে যে বড় স্বপ্ন নিয়ে ভারত জাতীয় বাহিনী নির্মাণ করেছিলেন গোপাল, তার গায়ে লাগল দাঙ্গার কলঙ্ক। গোপালের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছিলেন যাঁরা হঠাৎ উদ্ভুত দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে, তাঁরা আর অস্ত্র ফিরিয়ে দিলেন না। বাংলা জুড়ে দিকে দিকে তখন ডাকাতির ঘটনা। নাম জড়িয়ে যাচ্ছিল গোপাল পাঁঠার। সব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত গ্যাংগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ ছিল গোপাল পাঁঠার। অন্তত অভিযোগ তাই ছিল।
এই পর্যায়ে কলকাতার সংগঠিত অপরাধ জগতের সঙ্গে পাকাপাকি ভাবে নাম জড়াল গোপাল পাঁঠার। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হিস্ট্রি শিটে গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নম্বর CRO-HS-K23865 OF 1950। হিস্ট্রি শিট বলছে, শহর এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অপরাধ সংগঠিত করার মূল মাথা গোপাল। সবেতেই রয়েছে গোপালযোগ। প্রত্যক্ষ ভাবে গোপালের নামে প্রথম অভিযোগ অপহরণের। ১৯৫০ সালের ৩০ এপ্রিল। এরপর বালিগঞ্জ গিনি ম্যানসনে ডাকাতির ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে নাম জড়ায় গোপালের। এরপর ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ডাকাতি। প্রায় ২৩ হাজার টাকা লুঠ হয়। এরপর বিশ্বনাথ অয়েল মিলে ডাকাতি। আবার নাম জড়ায় গোপালের। এই সব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় গোপাল পাঁঠাকে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান গোপাল। কারণ ভগবানের অদৃশ্য হাত তাঁর মাথার উপরে। ভগবান রায়।
অন্ধকার জগতের গ্যাং লিডারের পাশাপাশি ততদিনে গোপালের আরেক কুখ্যাতি জুটেছে। বিধানচন্দ্র রায়ের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সর্দার। মূলত বিধানবাবুর বাড়ির সামনে জমায়েত ঠেকাতে গোপাল, ভানুদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সময়ের আগুনখেকো বামপন্থীদের মিছিল ভন্ডুল করতে গোপালের জুড়ি মেলা ভার। বাম দলগুলির কাছে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হতে থাকেন গোপাল। বামেরা গোপালের বাড়ি অ্যাটাক করে। এ দিকে বিধান রায়ের হয়ে ভোটে কারচুপি থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ ধেয়ে আসে গোপালের বিরুদ্ধে। অনেকেই বলেন মোঃ ইসমাইলের কাছে হারতে হারতে বিধানবাবুর জিতে যাওয়ার পিছনে গোপাল, ভানুদের হাতযশ ছিল। সে বার গণনাকেন্দ্রে চাপা গুঞ্জন। গণনার যা গতি-প্রকৃতি তাতে বিধানবাবু হারছেনই। হঠাৎ সেখানে প্রায় বাজপাখির মতো উড়ে এলেন গোপাল। হুডখোলা জিপটা গণনাকেন্দ্রের বাইরে রেখে ভিতরে ঢুকে গেলেন গোপাল ভানুরা। বামেরা তো প্রচারই করে দিয়েছিল বিধানবাবু হেরে গিয়েছেন। তারপর কী হলো কে জানে। পরদিন কাগজ খুলে রাজ্যবাসী জানলেন পাঁচশো ভোটে জয়ী বিধানচন্দ্র রায়।
শুধু বিধানবাবুই না কংগ্রেস নেতা অতুল্য ঘোষের গাড়িতেও বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে গোপাল পাঁঠাকে। যদিও তিনি সেই অর্থে কংগ্রেসের কেউ ছিলেন না। রাজনীতির কারবারিরা ব্যবহার করতে শুরু করলেন গোপালকে। অন্যদিকে ডাকাতির গ্যাংয়ে পরিণত হয়ে গেল গোপালের সঙ্গীসাথিরা। ভারত জাতীয় বাহিনী আগেই ভেঙে দিয়েছিলেন গোপাল। এ বার নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিতে শুরু করলেন গোপাল পাঁঠা। গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলেন বলা যায়। কারণ প্রথমে বামেদের তরফে তারপর নকশালদের সশস্ত্র প্রতিরোধ বাড়ছিল। গ্যাংয়ের প্রত্যেককে স্বাধীন করে দিলেন গোপাল। ততদিনে অবশ্য অনেকেই গোপালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে স্বাধীন গ্যাং বানিয়ে নিয়েছেন।
বেশির ভাগ চলে গেলেন গুরুর পায়ে প্রণাম ঠুকে। শুধু বেশ কয়েকজন গোপালের চ্যালাগোছের লোক তাঁর সঙ্গে থেকে গেলেন। যাঁদের নিজের গ্যাং করার ক্ষমতা নেই। তাঁরা গোপাল পাঁঠা নির্ভর।
এই জনা কয়েকের পেটের ভাত জুটবে কী ভাবে? গোপাল পাঁঠা চ্যালাদেরকে পরামর্শ দিলেন তাঁর নামে পাঁঠার মাংসের দোকান করার। বেলেঘাটা রাসমণি বাজারে প্রথম গড়ে উঠল গোপাল পাঁঠার মাংসের দোকান। গুরুর নামে গুরুর ব্যবসায় নাম লেখালেন চ্যালারা। শহরে সেই সময় বেশ কয়েকটি গোপাল পাঁঠার মাংসের দোকান গড়ে উঠছিল। গোপাল পাঁঠা তখন ব্র্যান্ড। মাংসের ব্যবসায় বা অস্ত্রযোগে। সর্বত্র বিরাজমান তিনি। গোপালের চ্যালাদের কেউ কেউ মাংসের ব্যবসায়। বাকিরা নিজ দায়িত্বে সামলাছিলেন কলকাতার তলপেট।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি নিষ্ক্রিয় হয়ে যান গোপাল। কলকাতা আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কিং। বেতাজ বাদশা। সেই থেকে মাংসের দোকান আর মিথ হয়ে যাওয়া কালী পূজা। দোকানে আর বারোয়ারি মণ্ডপে কালী আরাধনা। যে বারোয়ারির অস্ত্রমিছিল-সহ কালী ভাসান দেখতে হাজির হতেন লক্ষ মানুষ। অস্ত্র আর গোপাল সেদিনও সমার্থক ছিল দর্শনার্থীদের কাছে।